হুবার বাঁধ
বিজ্ঞান আবির চৌধুরী এপ্রিল ২০২৪
পৃথিবীতে এমন কয়েকটি স্থান আছে যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে না। তেমনই এক অদ্ভুত স্থান যুক্তরাষ্ট্রের হুভার ড্যাম।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে কোনো জিনিস ওপরে না গিয়ে নিচে পড়ে। এর কারণ পৃথিবী সবকিছুকে তার নিজের দিকে টানে। অর্থাৎ পৃথিবীর এক অদৃশ্য আকর্ষণ শক্তি আছে। পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে টেনে রাখে বলেই কোনো কিছু ওপরের দিকে না গিয়ে নিচের দিকে পড়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এটি এমন একটি বাঁধ যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে না। অর্থাৎ এখানে কিছু ছুড়ে ফেলা হলে সেটা নিচে না পড়ে বাতাসে ভাসতে থাকে। এমনকি এই স্থানে কোনো বস্তুকে রাখা হলেও ওই বস্তু বাঁধের দেওয়ালের সমান্তরালে লেগে যায়। এখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একদমই দুর্বল।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ও অ্যারিজোনা সীমান্তে কলোরাডো নদীর ওপরে গড়ে উঠেছে এই হুভার ড্যাম। এই বাঁধের কাঠামো এমন এক শক্তিশালী মডেলে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে সেখানকার বায়ু সবকিছুকে ধাক্কা দিয়ে ওপরে পাঠিয়ে দেয়। কোনোকিছু নিচে পড়তে দেয় না বরং ওপরের দিকে ধাক্কা দেয়। বাঁধের আকৃতি ধনুকের মতো। যে কারণে এখানে বায়ু পানিকেও ধাক্কা দিয়ে ওপরের দিকে ছুড়ে দেয়।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কাছাকাছি অবস্থিত এই বাঁধটি আধুনিক পৃথিবীর ৭টি ইঞ্জিনিয়ারিং আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম। গঠনগত দিক দিয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে অভিনব বাঁধ। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ হাইড্রোইলেকট্রিক ইনস্টলেশান এই হুভার ড্যাম।
হুভার বাঁধটি তিনটি প্রধান কারণে নির্মিত হয়েছিল। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচের পানি সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
১৯৩১-১৯৩৬ সালের মধ্যে নির্মিত হয় এটি। নির্মাণের প্রায় ৯০ বছর পার হলেও এখনও সক্রিয় আছে এই বাঁধটি। দুটি ফুটবল স্টেডিয়ামের সমান এই বাঁধ। বাঁধটির নামকরণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম রাষ্ট্রপতি হার্বার্ট হুভারের নামে। এটি ২৩৩৪ কিলোমিটার লম্বা ও ৭২৬ ফুট উঁচু । বাঁধটির পরিধি ৬৬০ ফুট।
বাঁধটি আকর্ষণীয় হলেও এর নির্মাণ কাজ মোটেও সহজ ছিল না। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা দিনের বেলায় ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এবং শীতকালে হিমাঙ্কের নীচে নেমে যেত। বাঁধটি নির্মাণে ৫০০০ জনেরও বেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসাবধানতা, অব্যবস্থাপনার কারণে নির্মাণের সময় ৯৬ জন মারা গিয়েছিল।
অনেক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। প্রতি বছর ৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাঁধ পরিদর্শন করেন। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় একসঙ্গে দুটি জায়গাই উপভোগ করা যায়। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের অতিপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন মুগ্ধ করবে, হুভার বাঁধের এই আশ্চর্যজনক ঘটনাও তেমনি অবাক করবে।
আরও পড়ুন...