সৌভাগ্যের স্বর্ণদ্বার

সৌভাগ্যের স্বর্ণদ্বার

বিশেষ রচনা নভেম্বর ২০১৩

মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্

পরিশ্রম হচ্ছে আমাদের সুখ-শান্তি, আশা-ভরসা ও সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিশ্রম ছাড়া সৌভাগ্যের স্বর্ণদ্বার কখনো খোলে না। মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য এই কর্মময় পৃথিবীতে কোন না কোন কাজে লিপ্ত থাকতে হয়। কারণ জাগতিক পরিধিতে, সাংসারিক জীবনে অভাব দেখা দেয়া একেবারেই স্বাভাবিক। এই নিত্য অভাব দূর করার লক্ষ্যে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। প্রকৃত ও যথার্থ পরিশ্রমই মানুষের জীবনে সৌভাগ্য নিয়ে আসে। শ্রম বিমুখ ও অলস ব্যক্তির জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্ভোগ নেমে আসে। সে অন্যের গলগ্রহ হয়ে জীবন কাটায়। প্রতি পলে পলে তাকে নিগৃহীত হতে হয়। কারণ পরিশ্রম ছাড়া নিতান্ত তুচ্ছ জিনিসও লাভ করা যায় না; তা বিদ্যা, ধন বা পুণ্য যাই হোক। জীবন পুষ্প শয্যা নয়। সংসারও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। একমাত্র অব্যাহত শ্রম সাধনার বিনিময়েই জগৎ সংসারে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব। পরিশ্রম না করে কর্মবিমুখ জীবন কাটালে সময়, অর্থবিত্ত ও সম্মান সবই হারাতে হয়। বিনা শ্রমে কোন বস্তুই অর্জিত হয় না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি পরিশ্রম। অন্যথা ব্যর্থতা এসে জীবনকে অক্টোপাসের মত বন্দী করে। তখন মনমানসিকতা এমনভাবে ভেঙ্গে পড়ে যে, হতাশায় এ বন্দীদশা হতে মুক্তির পথও খুঁজে পাওয়া যায় না। কথায় আছে পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ। পৃথিবীতে অর্থ, বিদ্যা, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা কোন কিছুই পরিশ্রম ছাড়া লাভ করা যায় না। আমাদের চারপাশে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যারা অতি সাধারণ দরিদ্র অবস্থা থেকে, অনাথ-এতিম, অসহায় অবস্থা থেকে নিজ সাধনা, পরিশ্রম ও কর্মকৌশল দ্বারা জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। এরূপ একদল পরিশ্রমী মানুষের কর্মতৎপরতায় গোটা জাতি উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছে। যেমনÑ চীন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তাদের দেশের কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবি, ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ সবাই শ্রম সাধনাকে জীবনের মহান ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। আমরাও, বাংলা মায়ের সন্তানরা যদি অলসতার নাগপাশ ছিন্ন করে আন্তরিকতার সাথে কাজ করি এবং কাজকে জীবনের পবিত্র ব্রত হিসেবে নিতে পারি তবে ব্যক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের জাতিরও উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। জীবনের প্রতিটি মূল্যবান মুহূর্ত এক একটি উজ্জ্বল মুক্তোর মত। এই মুক্তো সদৃশ সময় হেলায় বিনা কাজে ব্যয় করা অপব্যয়। ইসলামে এ অপব্যয় পরিত্যাজ্য; পক্ষান্তরে কর্মময় জীবন সর্বত্র গ্রহণীয়। প্রতিটি ধর্মই মানুষকে কর্মের ডাক দেয়। দেহ ও আত্মার প্রশান্তির জন্যও প্রয়োজন পরিশ্রম। কর্মহীন দেহে যেমন নানা রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে, তেমনি প্রাপ্তিযোগহীন সংসারে নেমে আসে দুঃখ-দারিদ্র্য। আত্মার প্রশান্তি দূরীভূত হয়ে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে সংসারে অগ্নি হুতাশন দেখা দেয়। পারিবারিক জীবন জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হতে থাকে। শান্তির শ্বেত কপোত অজানায় হারিয়ে যায়। সুতরাং মানুষকে মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে কর্মের মাধ্যমে, শ্রমশীলতার মধ্য দিয়েই বাঁচতে হবে। শ্রম সাধকের মূর্তপ্রতীক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)। তিনি নিজ হাতে কাপড় সেলাই করতেন, ঘর ঝাড়– দিতেন, জুতো মেরামত করতেন, মেষ চরাতেন, কুয়া থেকে পানি তুলতেন, রান্নার জন্য জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতেন, চলার পথে অন্যের বোঝা মাথায় তুলে দিতেন; অর্থাৎ সংসার জীবনে এমন কোন কাজ ছিল না যা তিনি আন্তরিকতার সাথে নিজ হাতে করেননি। এতে কি তাঁর মর্যাদা এতটুকু কমেছে? নিশ্চয়ই না। এ পরিশ্রমী মানুষটিই মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে হয়েছেন “বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত আদর্শ শিক্ষক ও ইহকাল ও পরকালের পথপ্রদর্শক।” এসো আমরাও পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য ফেরাই। জীবনে যেন কোন কাজকে তুচ্ছ মনে না করি। মানুষের মর্যাদা কর্মে, বংশ গৌরবে নয়। কবি আবুল হোসেন যথার্থই বলেছেন- নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশের পরিচয় সেই আশরাফ, জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ