স্বাধীনতা সংগ্রাম দেশে দেশে যুগে যুগে

স্বাধীনতা সংগ্রাম দেশে দেশে যুগে যুগে

বিশেষ রচনা মার্চ ২০১৫

কিশোরকণ্ঠ ডেস্ক# একটি দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বের, মর্যাদার আর আবেগের বিষয়টি কী? একবাক্যে আমরা স্বীকার করে নেবো, অবশ্যই স্বাধীনতা। আর তা যদি হয় রক্ত দিয়ে কেনা, তাহলে? সেই সংগ্রাম আর সংগ্রামী মানুষ চিরভাস্বর হয়ে বেঁচে থাকে সেই দেশের ইতিহাসে, মানুষের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে। আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতার মাস মার্চ। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম তবে এরকম গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস বিশ্বের আরও অনেক দেশে রয়েছে। স্কটল্যান্ড : প্রাচীনতম স্বাধীনতা সংগ্রাম স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামই সম্ভবত আমাদের জানা ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। দু’টি পর্যায়ে এ সংগ্রামটি সম্পন্ন হয়, প্রথম পর্যায়ের স্থায়িত্ব হলো ১২৯৬ থেকে ১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দ আর দ্বিতীয়টি ১৩৩২ থেকে ১৩৫৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মহান সংগ্রামী যোদ্ধা রবার্ট ব্রস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যম এই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন, আবার তাঁর পুত্র ও বংশধরেরাই স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বশেষ পর্যন্ত এর নেতৃত্ব দেন। তবে রবার্ট ব্রসের মৃত্যুর পর আবারও ব্রিটেন তার চুক্তি ভঙ্গ করে স্কটল্যান্ডে আগ্রাসন চালায়। এক দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৩৫৭ সালে বারউইক চুক্তির মাধ্যমে স্কটল্যান্ড সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ আগ্রাসন মুক্ত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : রক্তে কেনা স্বাধীনতা বর্তমান পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকাও স্বাধীনতা পেয়েছে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত এ দেশটির এ সংগ্রাম শুরু হয় ১৭৭৫ সাল থেকে। এ সময় ব্রিটিশ অধিভুক্ত ১৩টি কলোনি (আজকের যুগের অঙ্গরাজ্য) বিদ্রোহ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ঐতিহাসিকদের মতে একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দেয় ৪০-৪৫% মানুষ, বিরোধিতা করে ১৫-২০% এবং নিরপেক্ষ থাকে ৩৫-৪৫% মানুষ। জর্জ ওয়াশিংটন নেতৃত্বে দেন এ সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে। আমেরিকায় সেনাসমাবেশ করতে গিয়ে অধিক সংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য প্রয়োজন হয়, সেই সৈন্য ভারতবর্ষ থেকে নিয়ে গিয়ে মোতায়েন করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, এ কারণে মহীশূরে টিপু সুলতান এবং ফরাসিদের মিলিত আক্রমণ প্রতিহত করতে বেগ পেতে হয় ব্রিটিশদের। এছাড়াও, আমেরিকায় স্বাধীনতাকামীদের বিপক্ষে ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস, যাকে পরবর্তীতে ভাইসরয় করে ভারতবর্ষে পাঠানো হয়। স্বাধীনতাকামীদের অব্যাহত আক্রমণের ফলে ১৭৮৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস আত্মসমর্পণ করেন জর্জ ওয়াশিংটনের কাছে। এভাবেই জন্মলাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন : বলা যেতে পারে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হচ্ছে বর্তমান সময়ের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশ। খ্রিস্টপূর্ব একবিংশ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষোড়ষ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বছর চীনে সিয়া রাজবংশ স্থায়ী ছিলো। সিয়া-ই হলো চীনের ইতিহাসের প্রথম রাজবংশ। এরপর বিভিন্ন রাজবংশ চীনকে শাসন করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর। যুক্তরাজ্য : যুক্তরাজ্য আজন্ম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ এলাকা ও জনগণ ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। বর্তমানে এদের বেশির ভাগই স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও অনেকগুলোই ব্রিটিশ আইন, প্রতিষ্ঠান এবং রীতিনীতি ধরে রেখেছে। এমনকি বিশ্বের যেসব এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল না, সেখানেও অনেক দেশে ব্রিটিশ সংসদীয় সরকারব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিলো বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। বর্তমান ভৌগোলিক কাঠামো নিয়ে মূল যুক্তরাজ্যের গঠন ১৭০৭ সালের ১ মে। আর ১৮০১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আয়ারল্যান্ড দেশটির অন্তর্ভুক্ত হয়। যুক্তরাজ্য অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপগুলোকে একত্রে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালীন সময়ে দখলকৃত ১৪টি বাইরের এলাকা এখনও যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে। রাশিয়া : ১৪ শ ও ১৫ শ শতকে একটি শক্তিশালী রুশ রাষ্ট্র গঠিত হতে থাকে মস্কোকে ঘিরে। রাশিয়া বিশ্বের বুকে একটি বিরাট শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয় সম্রাট পিটারের সময়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবে বলশেভিকরা রুশ রাজবংশের পতন ঘটায়। ১৯২২ সালে বলশেভিকেরা বিশ্বের প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯২২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত রাশিয়া ছিল সোভিয়েত রাষ্ট্রকুঞ্জের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র। অনেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রাশিয়া নামে চিনলেও মূলত রাশিয়া ছিল এর ১৫টি অংশের একটি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে রাশিয়া মুক্ত বাজার ও গণতন্ত্রকে স্বাগত জানায়। ১৯৯০ সালের ১২ জুন রাশিয়ার নতুন ফরমেশন হওয়ায় এ দিনটিকে রাশিয়া দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়। ফ্রান্স : বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হলো ফ্রান্স। প্রাচীন রোমানরা খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে অঞ্চলটির দখল নেয় এবং খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত শাসন করে। পরবর্তীতে অনেকগুলো রাজবংশ ধারাবাহিকভাবে ফ্রান্স শাসন করে। ৮৪৩ সালে ভ্যরদার চুক্তির মাধ্যমে ডিউক ও রাজপুত্রদের রাজ্যগুলি একত্রিত হয়ে একটিমাত্র শাসকের অধীনে এসে ফরাসি রাষ্ট্র গঠন করে। মধ্যযুগে রাজতন্ত্রের প্রভাব কমে এলেও ১৪শ থেকে ১৮শ শতক ধরে আবার এর উত্থান হয়। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং এর পর বহু দশক ধরে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়। বর্তমানে ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্র পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৫৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর এ প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। জার্মানি : জার্মানি ১৬টি রাজ্য নিয়ে গঠিত একটি ফেডারেল ইউনিয়ন। ১৮৭১ সালের আগে এটি কোন একক রাষ্ট্র ছিল না। ১৮১৫ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত জার্মানি একটি কনফেডারেসি এবং ১৮০৬ সালের আগে এটি অনেকগুলো স্বতন্ত্র রাজ্যের সমষ্টি ছিল। ১৯ শতকের শুরুতে ফ্রান্সের দখলদারিত্বের কারণে ১৮১৫ সালে প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান রাষ্ট্রগুলো একটি কনফেডারেশন গঠন করে, যা ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। পরবর্তীতে ১৮৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রগুলো একত্রিত হয়ে জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করে। জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক ভেতরে থাকলেও এটিকে দুই দেশ ভাগ করে নেয়। ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এই ঘটনাটিকে পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের পতন ও জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে। গ্রিসের স্বাধীনতা : উসমানিয়া খিলাফতের ভাঙন ১৮২১ সালে গ্রিস প্রথম এলাকা হিসেবে তুর্কি খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আলেকজান্ডার ইপসিলান্টিসের নেতৃত্বে স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে এ সংগ্রাম শুরু হয়। একে একে ক্রিট দ্বীপ, মেসিডোনিয়াসহ গ্রিসের বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৩২ সালে কন্সটান্টিনোপল চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে গ্রিস। এ দেশটির স্বাধীনতা ইতিহাসের পাতায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা এর মাধ্যমেই উসমানিয়া খিলাফতের ভাঙনের সুর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কানাডা : ১৮৬৭ সালের ১ জুলাই কানাডা স্বাধীনতা লাভ করে চারটি রাজ্য নিয়ে। এ রাজ্য চারটি হলো অনতারিও, কুইবেক, নোভা স্কটিয়া এবং নিউ ব্রান্সউইক। ১৫তম শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীরা আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে এবং পরে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ফ্রান্স দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলস্বরূপ ১৭৬৩ সালে উত্তর আমেরিকায় তাদের সব উপনিবেশ ইংরেজদের কাছে ছেডে দেয়। ১৮৬৭ সালের ১ জুলাই  মৈত্রিতার মধ্য দিয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে দেশ হিসেবে কানাডা গঠন করা হয়। পাকিস্তান : পাকিস্তান ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অংশ। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পাকিস্তান বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম দেশ। বর্তমান পাকিস্তান এলাকাটি ১৫২৬ থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ১৮৫৬ সালের মধ্যেই এ ভূখন্ডসহ উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়। এরপর এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টে এলাকাটি পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের পশ্চিম অংশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশের অন্য অংশ পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। ভারত : ষোড়শ শতক থেকে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপীয় শক্তিগুলো ভারতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তারা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করতেও সমথ হয়। ১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়। এর এক বছর পরেই ঘটে ভারতীয় সিপাহি ও দেশীয় রাজ্যগুলোর সম্মিলিত এক জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বা সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত। বিংশ শতকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দেশজুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলন শুরু করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ সময়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও তার আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসনজাল থেকে মুক্ত হয়। সৌদি আরব : মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম রাষ্ট্র সৌদি আরব। এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা)। সৌদি আরবের বুকেই অবস্থিত পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র কাবা শরীফ। এ ভূখন্ডটির সংস্কৃতি ও ইতিহাস দীর্ঘ। তবে বর্তমান রাষ্ট্র সৌদি আরব যে আয়তন নিয়ে গঠিত তা আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষিত হয় ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এর একত্রিকরণ হয়। এদেশের শাসনকারী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ আল সাউদের নামানুসারে সৌদি আরব নামকরণ করা হয়েছে। মিসর : নীল নদের দেশ মিসর প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই একটি সংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিদ্যমান। ৬৪১ সাল থেকে দেশটি মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিসর দখল করার পর প্রায় ৪০ বছর এ ভূখন্ড তাদের উপনিবেশ ছিল। ১৯২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেশটি একটি রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু তবুও ব্রিটিশ  সৈন্যরা থেকে যায় মিসরে। ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই জামাল আবদেল নাসের-এর নেতৃত্বে একদল সামরিক অফিসার রাজতন্ত্র উৎখাত করে প্রজাতন্ত্র হিসেবে মিসর প্রতিষ্ঠা করে। সে কারণেই ২৩ জুলাইকে মিসরের জাতীয় দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়। মিসরকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয় ১৯৫৩ সালের ১৮ জুন। নাসের ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশ থেকে সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে সরিয়ে দেন। আর্জেন্টিনা : ১৮১৬ সালের ৯ জুলাই স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ব্রাজিল: ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্তুগাল থেকে ব্রাজিলকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন পর্তুগালের রাজপুত্র ডম পেডরো। ইন্দোনেশিয়া : ১৯৪৫ সালের ১৭ আগস্ট নেদারল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু তা স্বীকৃতি পায় ১৯৪৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ইসরাইল : মধ্যপ্রাচ্যের এ সংস্থাটি ১৯৪৮ সালের ১৪ মে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যাকে বিশ্বের অনেক দেশ রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অনেক দেশ দেয়নি। উত্তর কোরিয়া : ১৯৪৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়ার স্বাধীনতা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে অবিভক্ত কোরিয়া ছিলো জাপানিদের দখলে। দক্ষিণ কোরিয়া : ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান থেকে স্বাধীন হয়। কুয়েত : ১৯৬১ সালের ২৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীন হয়। ফিলিপাইন : ১৮৯৮ সালের ১২ জুন স্পেন থেকে স্বাধীন হয়। ১৯৪৬ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতার অনুমোদন দেয়া হয়। এ দিনটি ফিলিপাইনি আমেরিকান বন্ধুত্বের দিন হিসাবে পরিচিত। পোল্যান্ড: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে পোল্যান্ড। পর্তুগাল : ১৬৪০ সালের ১ ডিসেম্বর স্পেন থেকে স্বাধীন হয়। কাতার : ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীন হয়। আয়ারল্যান্ড : ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হয়। সুইজারল্যান্ড : ১২৯১ সালের ১ আগস্ট রোমান সাম্রাজ্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ফেডারেল স্টেট হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় ১৮৪৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। পর্তুগাল : পর্তুগালের সাম্রাজ্যে স্প্যানিশ আগ্রাসনের কারণে কিছুকালের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা হারায় দেশটি। ১৬৪০ সালে ব্রাগানসা রাজবংশের শাসনকালে স্প্যানিশ সম্রাট ফিলিপের আক্রমণ দেশের শাসকগোষ্ঠীকে পরিণত করে এক পুতুল সরকারে। পরবর্তীতে ১৬৬৮ সালে লিসবন চুক্তির মাধ্যমে পূর্ণভাবে স্বাধীনতা পায় পর্তুগাল, স্প্যানিশ আগ্রাসন তার থাবা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। সংযুক্ত আবর আমিরাত : ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীন হয়। ভ্যাটিকান সিটি : ১৯২৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইতালির সাথে লাতেরান চুক্তির অধীনে ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এই রাষ্ট্রটি রোম শহরের ভেতরে অবস্থিত স্বাধীন রাষ্ট্র। শ্রীলঙ্কা : দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ শ্রীলঙ্কা ১৯৭২ সালের আগে সিলন নামে পরিচিত ছিলো। ১৭৯৬ সালে দ্বীপটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিলন নামে দেশটি স্বাধীনতা পায় যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে। নেপাল : ধারণা করা হয় হিমালয়ান অঞ্চলে প্রায় ৯০০০ বছর ধরে মানুষের বসতি। ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে এই অঞ্চলটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র রাজ্য ও কনফেডারেশন গড়ে ওঠে। এরকমই একটি কনফেডারেশন সাকিয়া। এর রাজা ছিলেন গৌতম বুদ্ধ। নেপাল একীভূত হয় ১৭৬৮ সালের ২১ ডিসেম্বর। মালয়েশিয়া : ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ সরকার মালয়েশিয়াকে স্বায়ত্তশাসন দেবার ঘোষণা করলেও অবশেষে ১৯৫৬ সালের ৮ অক্টোবর লন্ডনে টুংকু আবদুর রহমান ও ব্রিটিশ কলোনিয়াল সেক্রেটারি এলান লেনক্সের মাঝে স্বাধীনতার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে চুক্তি অনুযায়ীই ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ইন্দোনেশিয়া : প্রায় ৫,০০০ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। ২০শ শতকের প্রথম দশকে ইন্দোনেশীয়া স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর জাপানিরা ইন্দোনেশিয়া দখল করে। দেশটি তখন নেদারল্যান্ডের অধীনে ছিলো। ১৯৪৫ সালের ১৭ই আগস্ট মিত্রশক্তির হাতে জাপানের আত্মসমর্পণের তিন দিন পর সুকর্ণ এবং মোহাম্মদ আতার নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র দল ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আফগানিস্তান : ১৭৪৭ সালে আহমদ শাহ দুররানি কান্দাহার শহরকে রাজধানী করে এখানে দুররানি সাম্রাজ্যের শুরু করেন। ১৯ শতকে আফগানিস্তান ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে এক বিরাট খেলার মধ্যবর্তী ক্রীড়নক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯১৯ সালের ১৯ আগস্ট তৃতীয় ব্রিটিশ-আফগান যুদ্ধশেষে আফগানিস্তান যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশ : স্বাধীনচেতা বাঙালি বাঙালিরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। বাঙালি মুসলমানরা সর্বপ্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদৌল্লার পরাজয়ের ফলে শাসনক্ষমতা যে এদেশীয়দের কাছ থেকে বিদেশীদের হাতে চলে গিয়েছিল, এটা বুঝতে এখানকার জনগণের বেশ সময় লেগেছিল। মুসলিম জনগোষ্ঠীর ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয় ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ১৭৬০-১৮০০। এই আন্দোলন প্রশমণ হওয়ার পূর্বেই সৈয়দ আহমদের নেতৃত্বে উত্তর পশ্চিম ভারতে দুর্নিবার ধর্মভিত্তিক ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু হলে ইংরেজদের বেকাদায় পড়তে হয়। এরপর তিতুমীরের নেতৃত্বে মুসলিম সাধারণ সমাজ বিশেষ করে রায়তের অধিকার আদায়ের আন্দোলন (১৮৩০-১৮৩২)। উত্তর চব্বিশ পরগনায় অবস্থিত নারকেল বাড়িয়ায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা নামে একটি দেশীয় দুর্গ নির্মাণ করেই ইংরেজদের আক্রমণ প্রতিরোধ করেছিলো। প্রায় একই সময়ে আরম্ভ হয়েছিল দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গে ফরায়েজি আন্দোলন। এই আন্দোলনও ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের রূপ পরিগ্রহ করেছিলো। হাজী শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া (১৮১৯-২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬২) পরবর্তীতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সিপাহি বিদ্রোহকে বলা যায় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ। সিপাহি বিদ্রোহের পর বাংলার মুসলিম সমাজের জাগরণের ইতিহাসে যে সকল কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছিলো, তন্মধ্যে অন্যতম ছিলেন- মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। ১৮৯৮ সালে তিনি ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মৌলানা জামাল উদ্দিন আফগানী প্রচারিত প্যান ইসলামিক আন্দোলন প্রগতিশীল মুসলিম সমাজে জাতীয় চেতনার সৃষ্টি করে। এই চেতনাকে ভিত্তি করেই মুসলিম জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সামগ্রিক অর্থে বাঙালি জাতীয়তাবোধের দৃঢ় ভিত্তি রচনা হয় মুসলিম সমাজে তখন থেকে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ, ১৯১১ সালে এই বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। দ্বিতীয়বার বাংলা ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন এ সকল সংগ্রামে বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য। ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তির পর ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি দেশের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের জন্ম হয় দু’টি আলাদা আলাদা ভূখন্ড নিয়ে। পাকিস্তান সরকারের শোষণ, নিপীড়নের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাঝে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে দূরত্ব শুরু। বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসে সত্তরের নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। এ বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস অবিরাম যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বাহিনীকে পরাভূত করেন। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ