সৌদি ফুটবলে তারার মেলা

সৌদি ফুটবলে তারার মেলা

খেলার চমক আবু আবদুল্লাহ ডিসেম্বর ২০২৩

একটা সময় সৌদি আরবের ঘরোয়া ফুটবল বিষয়ে এদেশের কেউ খোঁজ খবর রাখতেন না। এদেশ কেন, এশিয়া কিংবা বিশে^র অন্যান্য প্রান্তের দর্শকরাও ছিলেন সেই তালিকায়; কিন্তু মাত্র কয়েক মাসে পুরো চিত্রটা বদলে গেছে। এখন সারা দুনিয়ার মানুষ এখন সৌদি ফুটবলের খোঁজ খবর রাখেন। টেলিভিশনে লাইভ খেলা দেখেন, কে জিতলো, কে হারলো তার খবর রাখেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে পয়েন্ট টেবিলে চোখ বুলান ফুটবলপ্রেমীরা।

এর কারণ সৌদি ফুটবল এই কয়েক মাসে আমূল বদলে গেছে। সেখানে এখন তারার মেলা বসেছে। ইউরোপের ক্লাবগুলো থেকে বড় বড় তারকাদের কিনেছে সৌদি আরবের বিভিন্ন ক্লাব। যে কারণে সৌদি আরবের ঘরোয়া ফুটবল এখন দারুণ জমজমাট। দর্শকদেরও আগ্রহ জন্মেছে এই লিগ নিয়ে।

এর সূচনাটা হয়েছিলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দিয়ে। চলতি বছর জানুয়ারিতে রোনালদো যোগ দেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে। জানুয়ারির ৩ তারিখ রিয়াদে আল নাসরের হোম ভেন্যু এমআর সুল পার্কে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোনালদোকে ক্লাবের সমর্থকদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তাকে দেয়া হয় বিশাল সংবর্ধনা। ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটি ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। আতশবাজি আর আলোকসজ্জা ছিলো চোখধাঁধানো। এর বাইরে টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়েছেন আরো অন্তত ২৫ হাজার ফুটবলপ্রেমী।

ক্লাবের জার্সি পরে রোনালদো যখন মাঝমাঠে আসেন- চারদিকে তখন শুধু সিআর সেভেন চিৎকার ছাড়া কিছুই শোনা যায়নি। উপস্থাপিকা যখন রোনালদোর কাছে জানতে চান- সৌদি আরবে এসে তার কেমন লাগছে- এর জবাবে রোনালদো মুখে কিছু না বলে- শুধু গ্যালারির দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেন। যেন তার অনেক না বলা কথা লুকিয়ে ছিলো দর্শকদের সেই চিৎকারের মাঝে।

এমন এক মহাতারকাকে পেয়ে সৌদি ফুটবল যেন নতুন করে জেগে ওঠে। অন্য ক্লাবগুলোও ইউরোপ থেকে বড় বড় তারকাদের আনতে শুরু করে। শুরু হয় বিগ বাজেটের দল গড়ার প্রতিযোগিতা।

রোনালদোর ক্লাব আল নাসর সৌদি লিগে প্রভাবশালী দল। সব মিলে নয়বার লিগ শিরোপা জিতেছে ক্লাবটি, ছয়বার জিতেছে কিংস কাপ। তবে ২০১৯ সালের পর ক্লাবটি আর কোনো লিগ শিরোপা জিততে পারেনি। রোনালদো এসে প্রথম মৌসুমে ক্লাবটিকে লিগ জেতাতে না পারলেও লিগে হয়েছে রানারআপ। তবে খালি হাতে ফিরতে হয়নি আল নাসরকে। এ বছর প্রথমবারের মতো আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে দলটি। সেই জয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন সিআরসেভেন।

রোনালদোর পথ ধরে সৌদি আরবে পা রেখেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়র। ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে ছয় মৌসুম কাটিয়ে তিনিও নাম লেখান সৌদি প্রফেশনাল লিগে। নেইমার যোগ দিয়েছেন আল হিলাল ক্লাবে। তার সাথে ক্লাবটির দুই বছরের চুক্তি হয়েছে প্রাথমিকভাবে। আল হিলালও রাজধানী রিয়াদের বিখ্যাত একটি ক্লাব। শিরোপা জয়ের হিসেবে তারা রোনালদোর ক্লাবের চেয়েও এগিয়ে। আল হিলাল ১৮ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, কিংস কাপ জিতেছে ১০ বার। এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপা এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ৪ বার।

সৌদি ফুটবলে যোগ দিয়েছেন আরেক সুপারস্টার করিম বেনজেমা। ফর্মের তুঙ্গে     থাকা অবস্থায় তার স্পেনের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ থেকে সৌদি লিগের ক্লাবে যোগ দেয়া অবাক করেছিলো অনেককে। আরব বংশোদ্ভূত এই ফরাসি উইঙ্গার যোগ দিয়েছেন আল ইতিহাদ ক্লাবে। জেদ্দা শহরের এই ক্লাবটি সৌদি লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। মোট ৯ বার লিগ শিরোপা ও ৯ বার কিংস কাপ জিতেছে তারা। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ২ বার।

এই তিনজনের পরে সৌদি প্রফেশনাল লিগের ক্লাবে তারকাদের ভিড় শুধু বেড়েছেই। করিম বেনজেমার সাথে একই ক্লাবে যোগ দিয়েছেন ফ্রান্স জাতীয় দলের ডিফেন্ডার এনগলো কন্তে। কন্তে সৌদি আরবে এসেছেন ইংলিশ ক্লাব চেলসি থেকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কয়েক মৌসুম খেলা আলজেরিয়ার রিয়াদ মাহরেজ যোগ দিয়েছেন আল আহলি ক্লাবে। একই ক্লাবে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলের রবার্তো ফিরিমিনো। ফিরিমিনো ব্রাজিলের হয়ে ৫৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ থেকে আল নাসরে যোগ দিয়েছেন সেনেগালের স্ট্রাইকার সাদিও মানে। সেনেগালের আরেক ফুটবলার কালিদু কাউলিবালি যোগ দিয়েছেন নেইমারের ক্লাব আল হিলালে।

এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়েছে সৌদি আরবের অনেক ক্লাব। এ বছর ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব থেকে মোট ৯৪ জন ফুটবলার এসেছেন দেশটিতে। অনেক ক্লাবে কোচও এসেছেন ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকা থেকে। একসাথে এত এত তারকা ফুটবলার সৌদি আরবের ক্লাব ফুটবলকে এনে দিয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। এখন রোনালদো, বেনজেমা, সাদিও মানেরা যখন একই ম্যাচে খেলতে নামেন- তখন গ্যালারিতে যেমন তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না, তেমনি টেলিভিশনে দর্শক চাহিদাও বেড়ে যায় বহুগুণ।

এসব কারণে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো দলে দলে ভিড়ছে সৌদি আরবে। সারা বিশ্বের টেলিভিশন দর্শকরা দেখছেন এই লিগ। সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ৩৮টি আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমের সাথে চুক্তি হয়েছে সৌদি ফুটবল লিগের। যাদের মাধ্যমে বিশ্বের ১৪০টি অঞ্চলে দেখানো হচ্ছে খেলা।

আর সবচেয়ে বড় কথা এর মাধ্যমে সৌদি আরবের স্থানীয় ফুটবলাররা উপকৃত হচ্ছেন। তারা বিশে^র নামিদামি তারকাদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, যাকে সৌদি ফুটবলের উন্নতির উপলক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সৌদি ফুটবল লিগ এভাবে জনপ্রিয় ফুটবলারদের টানা অব্যাহত থাকলে তা দেশটির ফুটবলের চিত্রই আমূল বদলে দেবে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ