সুন্দর জীবনের জন্য

সুন্দর জীবনের জন্য

গল্প খাতুনে জান্নাত কণা ডিসেম্বর ২০২৩

মাঝে মধ্যে খাত্তাবের খুব মন খারাপ হয়। অন্য বাচ্চাদের মায়েরা তো এত কড়া শাসন করেন না? আম্মু এত কড়া কেন? সব সময় যেন বকা দেয়ার জন্য রেডি হয়ে থাকেন। 

বিশেষ করে ফোন ধরা আর টেলিভিশন বেশিক্ষণ দেখা নিয়েই তার ঘোর আপত্তি। ও টিভি দেখার সময়, ওর আম্মু যখন ডাকাডাকি করছিলেন, কথাটা তাকে বলেই ফেলল।

: আচ্ছা মা, আমি একটু বেশিক্ষণ টিভি দেখলে আমাকে বকা দাও কেন? বেশি রাত জাগলে বকা দাও। ফোন নিয়ে বেশিক্ষণ ফানি ভিডিও দেখলেও বকা দাও। আমার অন্য বন্ধুদের মায়েরা তো এমন করে না। ওদের নিজেদের কম্পিউটার আছে। নিজেদের হোয়াটস অ্যাপ অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গুগল অ্যাকাউন্ট সব আছে। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি বলে তুমি তোমার গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে আমার ফেসবুক খুলে দিয়েছ। ওটার পাসওয়ার্ড তোমার দেয়া। পাল্টাতে নিষেধ করেছো। বলেছো এইচএসসি পাস করার পর আমার পাসওয়ার্ড বদলে নিতে পারবো। তখন নিজস্ব ফোন নাম্বার নিতে পারবো। কিন্তু, কাইয়ুম ক্লাস ফাইভ থেকে নিজের সব কিছু ব্যবহার করে। ফোন আর কম্পিউটার সব সময় নিজে চালায়। অনেক রাত পর্যন্ত  মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করে। ওকে তো ওর বাবা-মা কিছু বলে না? ওর আম্মুর ফোন বেশির ভাগ সময় ওর কাছেই থাকে।

: থাকুক। তোমাকে কাইয়ুমের মতো হতে হবে কেন? শোনো, টেলিভিশন, ফোন, এগুলো বেশি সময় ধরে দেখলে, নিজের কাছে রাখলে, এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়। ঐসব ডিভাইসের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা জন্মে। মনে হয়, আর যাই হোক, আমি টিভি, ফোন এগুলো ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি যদি ফোনে গেমস খেলো, একটা লেভেল ক্রস করার পর আরেকটা লেভেল খেলতে ইচ্ছে করবে। অবসর সময় পার হয়ে গেলেও খেলতে মন চাইবে। তখন তোমার পড়ার সময় কমিয়ে দিয়ে গেমস এ সময় দিতে ইচ্ছে করবে। 

নামাজের ওয়াক্ত পার হয়ে গেলেও খেয়াল থাকবে না। এভাবে শয়তান তোমার ওপর জয়ী হয়ে যাবে। আমরা তো জানি শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। যখন পড়াশোনা এবং ইবাদতের সময়গুলোতে তুমি ডিভাইস নিয়ে থাকবে, আম্মু-আব্বু তোমাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়বে। তোমার ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, এটা যেহেতু তারা চান, আশা করেন, তাদের এই আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন হবে না আশঙ্কা করে তারা তোমাকে শাসন করবেন, হয়তো কখনো কখনো শাস্তি হিসেবে মারধর করবেন। এসব দেখে শয়তান খুশি হবে। কারণ, মানুষের সন্তানকে কষ্ট পেতে দেখলে তার খুব আনন্দ হয়। ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারলে, তোমার ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে আন্দাজ করতে পারছো নিশ্চয়ই? যারা অলস এবং কর্মবিমুখ হয়, তাদের ভবিষ্যৎ সীমাহীন কষ্টের হয়ে থাকে। আর আল্লাহর হুকুম অমান্য করার অপরাধে পরকালীন জীবনে অনন্তকাল ধরে শাস্তি ভোগ করতে হয়। বাবা-মায়ের কথা শোনাটাও আল্লাহর হুকুম পালনের মধ্যে পড়ে। কাজেই, মা-বাবা যে সমস্ত ভালো কাজের কথা বলেন, সেগুলো তোমাকে শুনতে হবে। মানতে হবে। একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হবে। কারণ, মানুষকে আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আমাদের আল্লাহ যেভাবে জীবন যাপন করতে বলেছেন, তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। হালাল রুজি গ্রহণ, পবিত্র জীবন-যাপন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নামাজ-রোজাসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি নিয়ম মেনে পালন করা, এগুলো একজন ঈমানদার মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় কাজ। আর, মিথ্যা কথা তো একদমই বলা যাবে না।

: এখন তো কোডিং শিখে অনেকে গেমস তৈরি করছে। এতে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। তাহলে? গেমস খারাপ এটা ভাবা ঠিক না।

: শুধু টাকা-পয়সা উপার্জন করা একজন মানুষের জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। এই যে তুমি গেমস তৈরি করতে চাও, এটা খেলতে গিয়ে মানুষ আনন্দ পাবে বুঝলাম। কিন্তু, গেমস খেলে মানুষের কী কল্যাণ হবে? এতে সমাজের উন্নতি হবে কিভাবে? তুমি আমাকে বলেছিলে রোবটিক ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও। তাহলে সেই লক্ষ্য নিয়েই পড়াশোনা করো। কারণ, এখন তো নানান জায়গায় মানুষের পরিবর্তে রোবট দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এটা বরং মানুষের কল্যাণের জন্য কাজে লাগতে পারে। 

: আচ্ছা আম্মু, তুমিই বলো, ঘরে তো আমার আর কোনো ভাই-বোন নেই যে তার সাথে খেলবো। আশপাশের ছেলে-মেয়েদের সাথে খুব একটা মিশতে দাও না। তাহলে আমার সময় কাটবে কিভাবে?

: বই পড়ে। একটা ভালো বই, খুব ভালো বন্ধু। বই পড়লে মোবাইল স্ক্রিন বা টিভি স্ক্রিনের তেজস্ক্রিয়তা শরীরে ঢোকার সুযোগ পাবে না। বই পড়তে আলাদা বিদ্যুৎ খরচের ঝামেলা  নেই। কারণ, বইয়ে কোনো ব্যাটারি লাগিয়ে চার্জ দিতে হয় না। আর, প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যাদের সাথে তোমাকে মিশতে বাধা দেয়া হয় না, তাদের সাথে ফুটবল,  ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলতে পারো। বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে ইনডোর গেমস যেমন, দাবা, লুডু, ক্যারাম তো খেলতেই পারো। তবে, খেলার সময় আজান হয়ে গেলে, খেলা ফেলে আগে নামাজ পড়ে নিতে হবে। আমাদের সব সময় রাসূল (সা) কে অনুসরণ করতে হবে। তোমাদের বইতে পড়েছো না, তিনি কয়েকজন তরুণ বয়সী ছেলেদের নিয়ে “হিলফুল ফুজুল” নামে একটা সংগঠন করেছিলেন?  সংগঠনের কর্মীরা সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতেন? কিছুদিন পরে তোমরাওতো ইনশাআল্লাহ সেই বয়সে পা দেবে। এখন থেকেই প্ল্যান করতে পারো, তোমরা কী করতে চাও।

: আমরা তো এখনও ছোট। আগে বড় হয়ে নিই। ইনশাআল্লাহ তখন দেখা যাবে। আম্মু, সবাই জন্মদিন পালন করে। আমি করলে সমস্যা আছে?

: আমাদের ইসলামের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে চলা উচিত। ঐ উৎসব তো অন্য ধর্মাবলম্বীদের। আমরা কেন তা অনুসরণ করবো, বলো? 

: আমারও তো কেক কেটে আনন্দ করতে ইচ্ছে করে। বন্ধুদের নিয়ে মজা করতে ভালো লাগে। 

: সামনে ঈদ আসছে সেইদিন ওদের দাওয়াত দিতে পারো। 

: আমরা কি গেট টুগেদার করতে পারি না আম্মু?

: বেশ তো, করো। ঈদের একদিন পর করতে পারো। তখন তোমাদের একটা কেকও তৈরি করে দেবো। বন্ধুরা মিলে কাটবে, খাবে। 

: সত্যি? 

: হ্যাঁ। এমন নির্দোষ আনন্দ পালনে তো আল্লাহ আমাদের নিষেধ করেননি। 

: তাইতো ! আল্লাহ তো আমাদের আনন্দ করার সুযোগ দিয়েছেন। এভাবে তো ভেবে দেখিনি আম্মু! 

: এখন বুঝতে পারছো তো? তাইতো আমাদের সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত। বলো আলহামদুলিল্লাহ।

: আলহামদুলিল্লাহ।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ