সহযোগিতা । ইমাম সাজিদ

সহযোগিতা । ইমাম সাজিদ

গল্প ডিসেম্বর ২০১৮

ফুয়াদ, সায়েম ও শোয়েব ওরা তিন বন্ধু অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। তিনজন একই স্কুলে পড়ে। ওদের মাঝে খুবই মিল। সবার বাসা পাশাপাশি হওয়ায় প্রতিদিন একই সাথে স্কুলে যায়, আবার স্কুল ছুটির পর একই সাথে বাসায় ফিরে।ফুয়াদ, সায়েম ও শোয়েব ওরা তিন বন্ধু অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। তিনজন একই স্কুলে পড়ে। ওদের মাঝে খুবই মিল। সবার বাসা পাশাপাশি হওয়ায় প্রতিদিন একই সাথে স্কুলে যায়, আবার স্কুল ছুটির পর একই সাথে বাসায় ফিরে। ওরা প্রতিদিন বিকেলে পাড়ার মাঠে অন্যান্য বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে। একদিন খেলার মাঠের এক প্রান্ত থেকে বল আনতে যাওয়ার সময় শোয়েব দেখতে পায় একটি ছেলে অসহায়ের মতো একা দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির দুটো হাতই নেই। তারপর শোয়েব ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার মন খারাপ কেন? এরই মাঝে বল আনতে দেরি হওয়ায় শোয়েবের কাছে ফুয়াদ ও সায়েম চলে আসে। তারপর ছেলেটি বলে, আমার মায়ের ব্রেইন টিউমারের অপারেশন আর মাত্র ১৫ দিন পরেই। ডাক্তার বলেছেন এই সময়ের মাঝে অপারেশন করাতে না পারলে আমার মা মারা যাবে। অপারেশন করাতে ২০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু এতো টাকা আমি কোথায় পাবো, আর তা ছাড়া আমার দুটো হাতও নেই, আমি কিভাবে অপারেশনের টাকা রোজগার করবো। কথাগুলো বলতে বলতে ছেলেটি একপর্যায়ে কেঁদে ফেলে। তারপর ওরা তিন বন্ধু ছেলেটিকে সান্ত্বনা দিয়ে কান্না থামায়। শোয়েব জিজ্ঞাসা করে তোমার হাতে কী হয়েছিলো? ছেলেটি বলে, ছোটবেলায় একটি দুর্ঘটনায় আমার হাত দুটো কেটে যায়। সায়েম জিজ্ঞাসা করে তোমার বাবা নেই? ছেলেটি বলে, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বাবা আমাকে আর আমার মাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে। তারপর ফুয়াদ ছেলেটিকে বলে, তোমার মা মানে সে আমাদেরও মা। তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমরা তোমার মায়ের অপারেশনের জন্য সহযোগিতা করবো। যেভাবেই হোক অপারেশনের আগেই ২০ হাজার টাকা জোগাড় করবই। কথাগুলো শুনে ছেলেটি কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পেল। পরক্ষণেই সায়েম বলে, চলো তোমার মাকে আজ আমরা দেখতে যাবো। তোমার মা এখন কোথায় আছেন? ছেলেটি জানায়, মা এখন হাসপাতালে। তারপর ওরা তিন বন্ধু মিলে ঐ ছেলেটির মাকে দেখার জন্য হাসপাতালে যায়। হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় ছেলেটির মায়ের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তারপর পরের দিন স্কুলে গিয়ে টিফিনের সময় ওরা তিন বন্ধু একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেদের স্কুল থেকে ও অঞ্চলের সবগুলো স্কুলে গিয়ে ঐ ছেলেটির মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে অপারেশনের জন্য টাকা জোগাড় করবে। পাশাপাশি নিজেদের টিফিনের টাকা না খেয়ে তা অপারেশনের জন্য জমাবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়। সেদিন স্কুল ছুটির পর ওরা ওদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে কথাগুলো বলে। পুরো ঘটনাটি শুনে প্রধান শিক্ষক বলেন, এটি একটি অতি মহৎ কাজ, আমিও তোমাদের এই মহৎ কাজে যথাসম্ভব সহযোগিতা করবো এবং স্কুলের ফান্ড থেকেও সহযোগিতা করবো। তারপর প্রধান শিক্ষক অঞ্চলের অন্যান্য স্কুলে গিয়ে অপারেশনের টাকা কালেকশন করার কাজকে আরো সহজ করার সুবাদে ওদের সাথে থাকার জন্য স্কুলের বাংলা শিক্ষককে দায়িত্ব দেন। এতে ওরা খুব খুশি হয়। তারপর ওরা অঞ্চলের প্রত্যেকটি স্কুলে গিয়ে টাকা কালেকশন করে। সবাই কমবেশি সহযোগিতা করে।


ওরা তিন বন্ধু একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেদের স্কুল থেকে ও অঞ্চলের সবগুলো স্কুলে গিয়ে ঐ ছেলেটির মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে অপারেশনের জন্য টাকা জোগাড় করবে।
অবশেষে ওরা তিন বন্ধু অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অপারেশনের জন্য ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে ফেলে। এ কথা ঐ ছেলেটি জানতে পেরে খুব খুশি হয়। আস্তে আস্তে অপারেশনের দিন ঘনিয়ে আসে। তারপর অপারেশনের দিন সকালবেলা সবগুলো টাকা নিয়ে ওরা হাসপাতালে যায়। হাসপাতালের রিসিপশনে গিয়ে টাকা জমা দেয়। ডাক্তার জানান অপারেশন কিছুক্ষণের ভেতরই শুরু হবে। অতঃপর অপারেশন শুরু হয়। অপারেশন চলাকালীন সময় ছেলেটি মায়ের কথা ভেবে হাউমাউ করে কাঁদে। কারণ ছেলেটির একমাত্র মা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই। প্রায় ৩০ মিনিট পর অপারেশন শেষ হয়। ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে বেরিয়ে এসে জানান অপারেশন সম্পূর্ণ হয়েছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। ডাক্তার আরো জানান রোগীর জ্ঞান ফিরতে ঘন্টাখানেক সময় লাগতে পারে। অতঃপর ছেলেটির মায়ের যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসে আবারো হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়। ছেলের সাথে সাথে তার মাও কাঁদেন। মা আর ছেলের ভালোবাসার এমন দৃশ্য দেখে ওরা তিন বন্ধু চোখের পানি থামিয়ে রাখতে পারেনি। ঐ ছেলেটি তার মাকে পুরো ঘটনাটি জানায়। তারপর ছেলেটির মা ফুয়াদ, সায়েম ও শোয়েবকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানায়। এরপর ওরা ছেলেটির মাকে বলে এটি আমাদের কর্তব্য, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। খানিক সময় পরেই হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ঐ বাংলা শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক ওদের সামনে এসে চোখের পানি ফেলে গর্বে বুক ফুলিয়ে বলে ওঠেন তোমরাই যে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তা আজ এই মহৎ কাজটির মাধ্যমে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলে।
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ