সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ সা. । নাসির হেলাল
বিশেষ রচনা নভেম্বর ২০১৮
প্রথম মানুষ হযরত আ. থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ দুনিয়ায় এসেছেন ও আসবেন তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ সৃষ্টি। সৃষ্টিকুলের সেরা সৃষ্টি তিনি। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন এখানে অবান্তর। একটু অনুসন্ধিৎসু মনে খোঁজ নিলেই তা পরিষ্কার হয়। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে তাদের মধ্যে তাঁর জীবনের সব খুঁটিনাটি বিষয় পর্যন্ত লিপিবদ্ধ আছে। অন্য কোন ধর্মনেতা, ধর্ম অবতার বা রাষ্ট্রনায়ক, সমাজসেবক, কবি-সাহিত্যিক কারো ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। কেউ যদি মহানবী সা. কে জানতে চান তা হলে তাঁর জন্মের আগ থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত বা তাঁর পরের ঘটনাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পারবে। এ মহান রাসূল সম্বন্ধে সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ঘোষণা করেছেন- “আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।” (সূরা কালাম : ৫) রাসূলুল্লাহ সা. সম্বন্ধে মহান রাব্বুল আলামিনের উক্ত সাক্ষ্য ও মূল্যায়ন তাঁর অনুপম চরিত্রের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সনদ। হযরত আদম আ. থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন ও ভবিষ্যতে জন্মগ্রহণ করবেন নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সা. তাদের সবার মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। এ জন্যই আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব : ২১) হাফিয আবু শায়খ ইস্ফাহানী রচিত তাঁর ‘আখলাকুন নবী সা.’ গ্রন্থে আখলাক বা চরিত্র সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘অভিধান প্রণেতাগণ লিখেছেন, ‘আখলাক’ শব্দটি ‘খুলক’ এর বহুবচন। এর অর্থ মানুষের স্বভাব, চরিত্র, অভ্যাস ও শিষ্টতা। আল্লামা ইবনুল আছির জাযারি র. বলেন, ‘মানুষের বাহ্য আকার-আকৃতির ক্ষেত্রে যেমন ‘খলক’ শব্দ ব্যবহার হয় ঠিক তেমনি তার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও গুণাবলির জন্য ‘খুলুক’ শব্দটি প্রযুক্ত হয়ে থাকে। তাই প্রকাশ্য ও অভ্যন্তরীণ গুণাবলি যেমন ভালো হয়, তেমনি মন্দও।’ বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে চরিত্র অর্থ লিখেছে- ১. প্রকৃতি; স্বভাব। ২. আচরণ; চলাচল। ৩. রীতিনীতি; ব্যবহারবিধি; কায়দা-কানুন। ৪. সদ্গুণ; উন্নত আদর্শ; সুনীতি; সদাচার। ৫. প্রকৃতি বা আদর্শের জোর; দৃঢ়তা; বলিষ্ঠতা ইত্যাদি। আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো চরিত্র শব্দটির অর্থ লিখতে গিয়ে অভিধানে যেসব শব্দের ব্যবহার হয়েছে রাসূলুল্লাহ সা. এর চরিত্রে তার সবগুলোরই সমাবেশ রয়েছে। আমরা জানি তিনি ছিলেন নবী-রাসূলদের সরদার। অর্থাৎ মানুষদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ, যুগে যুগে যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হয়ে পথহারা মানুষকে পথের দিশা দেয়ার জন্য কাজ করেছেন তাদের নেতা। আর এ জন্য আল্লাহ তাঁকে সাক্ষীস্বরূপ ও সুসংবাদদাতা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন- “হে নবী। আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।” (সূরা আহযাব : ৪৫-৪৬) রাসূলুল্লাহ সা. এর চরিত্র কত মহান ছিল তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিম্নোক্ত ঘোষণা থেকেও বুঝা যায় যেখানে আল্লাহ বলেছেন- “যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করল।” (সূরা নিসা : ৮০) এমনকি আল্লাহকে ভালবাসতে হলে, আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলুল্লাহ সা.কে ভালোবেসে তাঁকে অনুসরণ করেই তা করতে হবে। অন্য কোন পথে নয়। ইরশাদ হচ্ছে- “হে নবী। আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, তবে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান : ৩১) আমরা জানি যারা চরিত্রবান, যারা মহান তাঁরা সাধারণত উদার ও কোমল হৃদয়ের মানুষ হয়ে থাকেন, দরদি মানুষ হয়ে থাকেন। মানুষের দুঃখে-কষ্টে তাঁরা এগিয়ে আসেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর চরিত্রে উদারতা, কোমলতা ও দরদি হৃদয়ের মহাপ্রস্রবণ দেখতে পাই। আল্লাহ নিজেও রাসূল সা.-এর এ মহান চরত্রের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছেন- “আল্লাহ্র দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছো; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়তো।” (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯) আসলে রাসূলুল্লাহ সা.-এর চরিত্র ছিল মহোত্তম চরিত্র। সারা বিশ্বের সব যুগের মানুষের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন তাঁকে রহমতের দরিয়া হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সা.কে আল্লাহ বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানবজাতির জন্য রহমত ছিলেন সে কথা আল্লাহ নিজেই বলেছেন- “আপনাকে কেবল সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া : ১০৭) রাসূলুল্লাহ সা.-এর চরিত্র এতটাই মহান ছিল যে, তিনি যে কোন মানুষের দুঃখে দুঃখিত হতেন, কষ্টে কষ্ট পেতেন। উম্মতে মুহাম্মদির জন্য তাঁর পেরেশানির অন্ত ছিল না। ইরশাদ হচ্ছে- “তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে এমন একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দায়ালু।” (সূরা তাওবা : ১২৮) শুধু তাঁর অনুসারীগণই নয় অন্যরাও তাঁর সত্যবাদিতায়, তাঁর আচরণে মুগ্ধ ছিল। আরবের সেই জাহেলি যুগে, ইসলাম প্রচারের সময়ে কাফেরগণ ইসলামের দাওয়াত কবুল না করলেও, দাওয়াতি কাজের বিরোধিতা করলেও তাকে কখনও চরিত্রহীন বলেনি, মিথ্যাবাদী বলেনি বরং তারা তাকে ‘আল-আমিন’, ‘আস-সাদিক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল এবং সে নামেই তাকে সম্বোধন করত। ইরশাদ হচ্ছে- “অবশ্য আমি জানি যে, তাঁরা যা বলে তা আপনাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়, কিন্তু তারা আপনাকে তো মিথ্যাবাদী বলে না; বরং সীমালঙ্ঘনকারীগণ আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার করে।” (সূরা আনআম : ৩৩) আমরা শতভাগ বিশ্বাস করি যে, রাসূলূল্লাহ সা. ছিলেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। আর এ মানুষের মধ্যে নবী-রাসূলগণ ছিলেন সন্দেহাতীতভাবে শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং আল্লাহ্র মনোনীত পুরুষ। এই নবী-রাসূলগণের সরদার ছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় মহানবী সা.। সাথে সাথে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম চরিত্র-মাধুর্যের অধিকারী।
আরও পড়ুন...