সবুজে রাঙানো ঈদ

সবুজে রাঙানো ঈদ

তোমাদের গল্প আগস্ট ২০১২

কাজী রিচি ইসলাম..

আজ ঈদ। আনন্দ চারিদিকে। আমি নতুন জামা পরে গেলাম স্কুল মাঠে। দেখলাম আমি একটু দেরিতে এসে পৌঁছেছি। স্কুল মাঠে সব কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাকে দেখে আমার ক্লাসের বাংলা শিক্ষক বললেন, ‘কী ব্যাপার, তুমি এতো দেরিতে এসেছো কেন? আরে গাছ লাগানো তো শুরু হয়ে গেছে। যাও তোমার ভাগেরটা লাগিয়ে এসো। এই যে তোমার চারা।’
আমি এক দৌড়ে গেলাম আমাদের স্কুল মাঠের শেষ প্রান্তে। সেখানে আমাদের স্কুল বাগান।
সবাই গাছ লাগাচ্ছে। কেউ ফলের, কেউ ফুলের কেউ বা আবার ঔষুধি। আমি লিচুগাছ লাগালাম। লিচু খেতে আমার খুব ভালো লাগে তো তাই।
সবার গাছ লাগানোর পর আমরা সবাই আমাদের প্রিয় বাংলা শিক্ষকের কাছে গেলাম। স্যার আমাদের ঈদ মোবারক বললেন। আমরাও ঈদ মোবারক বললাম এবং সালাম করলাম। স্যার আমাদের মিষ্টিও খাওয়ালেন। তারপর যে যার বাসায় গেলাম। বিকেল বেলা আমাদের নদীর ওপারে বটগাছের তলায় ঈদমেলা  বসে। আমাদের স্কুলের সকল বন্ধুবান্ধব দল বেঁধে সেখানে গেলাম। মুড়ি, মুড়কি ও সন্দেশ কিনলাম। একে অপরকে খেতে দিলাম। নাগরদোলায় চড়লাম। পুতুল নাচ দেখলাম। সবশেষে অনেক আনন্দ করে বাসায় ফিরলাম।
অনেক বছর কেটে গেল। আমরা বড় হলাম। আমাদের সাথে বড় হলো আমাদের ছোট্ট হাতে লাগানো সেই স্কুল মাঠের ছোট চারাগুলো। অনেক বড় হয়েছে গাছগুলো। অনেক ফল ধরে, ফুল ধরে। সেই ফল আমরা বিনামূল্যে গরিবদের এবং এতিমখানায় দিয়ে থাকি। এবং ফুলগাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করে সেই ফুল কাজে লাগিয়ে যে টাকা আসে তা দিয়ে আমরা কোনো অসহায় পরিবারের লোকদের সাহায্য করে থাকি। আর ঔষুধি গাছ থেকে আমরা পাতা, ছাল, বীজ বাকল এগুলো সংগ্রহ করে ঔষধ ফ্যাক্টরিতে দিয়ে যে অর্থ পাই, তা দিয়ে আমরা দেশের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করি।
ওহো আরেকটি কথা তো বলাই হয়নি।
সে দিন আমাদের বাংলা স্যার বলেছিলেন, ‘আজকের চারাগুলো হবে আমাদের ভবিষ্যতের ছায়া। আর এই বাগান হবে আনন্দের একটা জায়গা। যখন তোমাদের মন খারাপ হবে বা শরীর খারাপ হবে তখন এই বাগানে আসবে, দেখবে কোনো ঔষধ তোমাদের লাগবে না। তোমরা সুস্থ হয়ে গেছ।’
সত্যিই একদিন আমার অনেক অসুখ হলো। অনেক দামি ওষুধ খেলাম তবুও কেন জানি সুস্থ হলাম না। হঠাৎ আমার বাংলা স্যারের কথা মনে পড়ল। আমি দৌড়ে যাই আমার সেই প্রাণপ্রিয় স্মৃতিভরা স্কুল মাঠে। দেখলাম ফুল, ফল, সবুজ পাতা। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। ফলের সুবাস আর ফুলের ঘ্রাণ! আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। আমার মন ভালো হয়ে গেল। তারপর ধন্যবাদ জানাই আমার সেই প্রিয় বাংলা স্যারকে, যিনি কি না এতো সুন্দর একটা পরিকল্পনা করেছিলেন এবং পরিচয় দিয়েছিলেন দূরদর্শিতার।
দিন আসে দিন যায়, বছর ঘুরে দেখা দেয় ঈদ। আনন্দ হয়, সেমাই খাওয়া হয় কিন্তু সেই ঈদের মতো গাছ লাগানো হয় না। এবার প্রতিজ্ঞা করেছি এই ঈদে পাড়ার সব ছেলেমেয়েকে নিয়ে গাছ লাগাব, এই দালানের সমুদ্র শহরটাকে সবুজে সবুজে রাঙিয়ে দেবো।


                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ