ষাঁড় শকুন ও কাক   -শাহ্ আলম শেখ শান্ত

ষাঁড় শকুন ও কাক -শাহ্ আলম শেখ শান্ত

তোমাদের গল্প আগস্ট ২০১৫

চৈত্রের মাটি ফাটা খাঁ খাঁ রোদ। প্রতিনিয়ত যেন সূর্য থেকে আগ্নেয়গিরির উদগিরণ হচ্ছে। জলাশয়গুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এমনকি সমুদ্রজলের গভীরতাও কমে এসেছে। জীবন্ত বস্তুর বেঁচে থাকা বড় দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমন কাকডাকা দুপুরে খোলা প্রান্তরে নাদুসনুদুস চেহারার একটি ষাঁড় আধাশুষ্ক ঘাস  খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে। কিন্তু গরমের তীব্রতায় তার আপাদমস্তক পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। মাঠের এক প্রান্তে  ছোট একটি শিমুলগাছ। শাখা-প্রশাখা ও পাতা কম থাকার দরুন যতটুকু ছায়া দিয়েছে,  সেটাও আবার জলসদৃশ। তবুও এখানে শুয়ে এমন আরাম অনুভব হলো যেন কেউ তার দেহে বরফগলাজল ঢালছে। ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ আয়েশের পরশ পেলেই সুখনিদ্রায় হারিয়ে যায়। ষাঁড়টির বেলায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। অল্পক্ষণের মধ্যেই চার পা ছড়ায়ে ঘুমিয়ে পড়ল। একটি ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত কাক ওখানটা দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ ষাঁড়টি তার দৃষ্টিগোচর হলো। সে অত্যন্ত খুশি হলো। কয়েকদিন পর আজ পেটপুরে খেতে পারবে বলে। ষাঁড়টির পিঠে ও পেটের ওপর ছোট ছোট দাদ একাধিক চোখে যেন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কাক প্রথমে সেখানটায় কয়েকটি ঠোকর দিল। দাদ চুলকানোর কাজটি কাক দ্বারা সম্পাদিত হচ্ছে বিধায় ষাঁড়টি বেশ আরাম পেয়ে কোনো রকম নড়াচড়া করছে না। হঠাৎ
কাকটির শকুন বন্ধুর কথা মনে পড়ল। সেও তো কয়েক দিন ধরে উপোস। এত বড় ষাঁড় একার পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয় বিধায় বন্ধুকে খবর দিতে গেল। দুই বন্ধু মিলে খুব মজা করে খাবে। এমন খবর শুনে শকুন কি আর বসে থাকতে পারে! খবর পেয়ে শকুন ডানায় ভর করে রকেটবেগে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে যথাস্থানে পৌঁছল। আসলে উপোসী খানা স্বাভাবিক খানার মতো হয় না। কাক আবারও দাদযুক্ত স্থানে জোরেশোরে ঠোক্কর দিচ্ছে। ষাঁড় তবুও নড়ছে না। দারুণ মজা পাচ্ছে। এদিকে শকুন হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, এত বড় ষাঁড় দু’জনে কেমনে খেয়ে সাবাড় করবে? কাক তখন বললো-
‘বন্ধু দাঁড়িয়ে থেকো না, জলদি করো। দেরি হলে অন্যরা সবাই এসে পড়বে। তখন পেট ভরার মতো অংশও মুখে পড়বে না।’
‘ঠিক বলেছো বন্ধু।’ শকুন উত্তর দিলো।
পর মুহূর্তে শকুন সজোরে ষাঁড়টির হাঁ করা মুখে ঠোকর দিল। পুরো ঠোঁট ভেতরে ঢুকে পড়ল। ষাঁড়টি তখন ব্যথায় মুখ বন্ধ করে চেপে ধরেছে। শকুন পড়ে গেল মহাবিপদে। শত চেষ্টা করেও ঠোঁট বের করতে পারছে না। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অবশেষে কান্নাবিজড়িত আকুল আবেদন কণ্ঠে বললোÑ
একটু করো ফাঁক ষাঁড় ভাই
মাথাটা বের করি
কখনও আর যাবো না কোথাও
অন্যের কথা ধরি।
তওবা করছি এই যে দেখ
ধরছি দুই কান
একটু দয়া করে আমার
ভিক্ষা দাও প্রাণ।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ