শিষ্টাচার একটি মহৎ গুণ

শিষ্টাচার একটি মহৎ গুণ

প্রবন্ধ নিবন্ধ মাহমুদুল হাসান খোকন ডিসেম্বর ২০২৩

ভদ্রতা, নম্রতা, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণের সুন্দর এক বহিঃপ্রকাশ। তাই প্রতিটি মানুষের অবস্থান ভালো না মন্দ তার মান নির্ণয় হয়  মূলত সে ব্যক্তির আচরণে। শিষ্টাচার মানুষকে সবসময় আত্মসংযমী ও বিনয়ী করে তুলতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিষ্টাচারময় মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো পরিবেশে নিজেকে সামলে নিতে পারে।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মানুষের সুন্দর সুন্দর মানবীয় গুণের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে শিষ্টাচার। আর এগুলো প্রকাশিত হয় মানুষের কথাবার্তা, চলাফেরা ও ভাবভঙ্গিমার মধ্য দিয়ে। শিষ্টাচারময় ব্যক্তিদের কথা বলার ধরন, ভাষাগত উচ্চারণ ও চেহারার অভিব্যক্তি মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রকাশ ঘটে।

আজকের পৃথিবীতে যেসব মানুষ সেরা মানবের বিশেষ ভূমিকায় রয়েছেন তারা কিন্তু শিষ্টাচারে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন শিষ্টাচারের এক অনন্য প্রতীক। অন্যান্য গুণের ন্যায় শিষ্টাচারের জন্য তিনি ছোট-বড় সকলের নিকট অত্যন্ত প্রিয়ভাজন  ছিলেন। ভুল করে তিনি কারো সাথে কোনো প্রকার খারাপ ব্যবহার প্রদর্শন করেননি। আর এসব কারণেই তিনি যুগে যুগে সকল মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাধারণত কোনো মানুষ সকল গুণসম্পন্ন হতে পারে না। ব্যক্তিগত জীবনের এরকম গুণ অর্জন করা কারোর পক্ষে সম্ভবপর নয়। আমরা জানি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ একে অপরের প্রতি পুরো নির্ভরশীল। একজন প্রকৃত শিষ্টাচার সম্পন্ন ব্যক্তি নিজের সুন্দর ও সেরা আচরণ দিয়ে সহজেই আরেকজনকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। 

মানুষ দলবদ্ধভাবে সমাজে বাস করতে পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রত্যেকে চায়। অতীব দুঃখের বিষয় আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থার দিকে তাকালে বিবেকহীন হতে হয়। পৃথিবী যতই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ জীবন কেমন জানি ততই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সেই সাথে সামান্য বিষয় নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, রাহাজানি, খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং প্রভৃতি নানা অপকর্মে চারপাশ কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। সমাজব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে চলছে নানারকম দুর্নীতি ও অন্যায়। সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে সমাজের প্রতিটি মানুষকে শিষ্টাচারসম্পন্ন হতে হবে। তবেই দেশ ও জাতির জনগণ কাক্সিক্ষত ফল পাবে। 

আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের জন্য জাতির বিশেষ কর্ণধার। তাই একজন ছাত্রের কেবল বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ          থাকলেই চলবে না, তাকে বিভিন্ন বিষয় চারিত্রিক গুণাবলিও অর্জন করতে হবে। একজন ভালো ছাত্র যদি শিষ্টাচার সম্পন্ন না হয় তাহলে সে শিক্ষক কিংবা সহপাঠী কারো কাছ থেকেই ভালোবাসা বা অনুপ্রেরণা পাবে না বা পেতে পারে না। উদ্ধত আচরণের কারণে সে সবার কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠবে। ফলে সে শিক্ষাজীবনে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। শিষ্টাচার একজন ছাত্রকে বিনয়ী ও নম্র করে তোলে যার মাধ্যমে সে সহপাঠী ও শিক্ষকদের হৃদয়ে সহজে স্থান করে নিতে পারে।

একটি সুন্দর জীবন পাবার আশায় মানুষ জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়। ফলে এই শিষ্টাচার একজন মানুষের কর্মজীবনকে সাফল্যমন্ডিত ও আকর্ষণীয় করে তোলে। দেখা যায় শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তিরা খুব তাড়াতাড়ি ও সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। কাজেই সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহসিকতার উন্নততর দৃষ্টিভঙ্গির সবকিছু নিয়েই গড়ে ওঠে এই শিষ্টাচার।

একজন মানুষের জীবনের এক একটি গুণকে এক একটি সৌরভ ও সুবাসিত ফুলের সাথে তুলনা করা যায়। একটির সাথে আর একটি ফুল গেঁথে যেমন একটি সুন্দর মালা তৈরি করতে হয় তেমনি মানুষের মানবীয় সকল গুণগুলো যত্ন সহকারে একটির সাথে অপরটির সমন্বয় সাধন করে অর্জিত হয় শিষ্টাচার। শিষ্টাচার কিন্তু হঠাৎ করে কারো মধ্যে গড়ে উঠতে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতিমূলক পর্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টা। আসলে শিষ্টাচারের বীজ বপন হয় শিশুকালেই। আর এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। আমরা জানি শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। যা দেখে তাই শিখে নেয়। বাল্যকালে শিশুদের সংযম ও বিনয় দিয়ে মানুষের মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তোলা সম্ভব।

শিষ্টাচার কিন্তু যেকোনো মহৎ হৃদয়ের মনোমুগ্ধকর প্রকাশ। শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষজন সাধারণত অন্যের সামনে অত্যন্ত বিনম্র ও ভদ্র ব্যবহার প্রদর্শন করে থাকে। পরিতাপের বিষয় হলো তাদের এমন সুন্দর আচার আচরণের সুযোগ নিয়ে অনেকে তাদের ওপর নানা ধরনের অন্যায়-অবিচার করতে দ্বিধা বোধ করে না। শিষ্টাচারময় মহান ব্যক্তিরা লজ্জায় খুব সহজে তা মেনে নেয়। শিষ্টাচারের নামে এরকম অন্যায়কে ন্যায় বলে স্বীকার করা বা শত অত্যাচারে মুখ বুজে বসে থাকা কখনো উচিত নয়। এটা কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত শিষ্টাচার। যা অন্যায়কারীর সাহস বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়। তাই শিষ্টাচারের সাথে সাথে সত্য স্বীকার করা ও সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো শক্তি রাখা বাঞ্ছনীয়। 

শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তিরা সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণীয়। চাই সে যেমনই হোক ধনী, গরিব কিংবা সুন্দর অসুন্দর। শিষ্টাচারময়  প্রিয়জনরা খুব সহজেই অন্যের মন জয় করে নিতে সক্ষম। মূল কথা হলো শিষ্টাচার প্রতিটি মানুষের ক্ষুদ্র জীবনকে ব্যাপক তাৎপর্যময় করে তোলে। এ ধরনের মানুষ তার মন থেকে সকল আত্ম-অহংকারের কালিমা মুছে হৃদয়কে করে পবিত্র।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ