শক্তির উৎস   -আবদুল হালীম খাঁ

শক্তির উৎস -আবদুল হালীম খাঁ

গল্প মে ২০১৬

আগে পারসিকরা বিশ্বাস করতো যে, একজন পারসিক সৈন্য দশজন আরবের সমান। তারা অবজ্ঞাভরে আরবদের ডাকতো ভিক্ষুকের জাত বলে। এ বিশ্বাস একতরফা ছিল না। আরবরাও এক পারসিক সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে দশজন আরবির সমান মনে করতো। দক্ষিণ আরবের ইয়েমেন পারসিকরা শাসন করতো একজন গভর্নরের অধীনে কিছু সংখ্যক পুলিশ দিয়ে। অভ্যন্তরীণভাবে আরব এত নিঃস্ব ছিল যে, সেখানে কোনো শাসনকর্তা রাখার প্রয়োজন বোধ করতো না। এদিকটায় কোনো বিশেষ ঘটনা বা গোলযোগ দেখা দিলে ইয়েমেনের গভর্নর দু’জন পুলিশ পাঠিয়ে দেয়াই যথেষ্ট মনে করতো।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) যখন পৃথিবীর বিভিন্ন শাসকের কাছে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তখন পারস্যের সম্রাট খসরু পারভেজকে আহবান জানিয়েও চিঠি পাঠিয়েছিলেন। খসরু পারভেজ চিঠি পেয়ে অপমান বোধ করে তাঁর ইয়েমেনের গভর্নর বাখানকে আদেশ দিলেন, মুহাম্মদ (সা) নামের আরবটাকে ধৃষ্টতার জন্য গ্রেফতার করে তাঁর কাছে রাজধানীতে পাঠিয়ে দিতে।
স¤্রাটের আদেশ পেয়ে গভর্নর বাখান কী করলেন তা চিন্তা করার বিষয়। তিনি রাসূল (সা)কে গ্রেফতার করার জন্য দু’জন পুলিশ পাঠিয়ে দিলেন। লক্ষ্য করার বিষয়, ইয়েমেন আরব উপদ্বীপেই অবস্থিত। মক্কা এবং মদিনা থেকে দূরেও নয়। আর তখন মহানবীকে নিয়ে তো সারা আরবে হুলু¯ূ’’ল কারবার। বদর ও ওহুদের বড় দু’টি যুদ্ধের আগেও সাতটি ছোটখাটো যুদ্ধ হয়েছে। মহানবী (সা) মদিনায় সর্বসেরা। ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে বাখানের তো এসব ঘটনা অজানা থাকার কথা নয়। তা সত্ত্বেও মহানবীকে গ্রেফতার করার জন্য মাত্র দু’জন পুলিশ পাঠানো থেকে বোঝা যায় পারসিক শক্তি আরবদেরকে কতখানি দুর্বল ও অবজ্ঞতার চোখে দেখতো।
তারপর মাত্র তেইশ বছরে, সত্যিকারার্থে পুরো তেইশ বছর নয়, মাত্র দশ বছরে মহানবী (সা) আরবের সেই অজ্ঞাত, অবহেলিত, অশিক্ষিত, বিচ্ছিন্ন ও হতদরিদ্র লোকগুলোকে ডেকে একত্র করে রূপান্তরিত করলেন এমন এক শক্তিশালী জাতিতে যে, সেই জাতি পরবর্তীকালে ঐ পারসিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে তুলোর মতো উড়িয়ে দিলেন। তখন দেখা গেল একজন মুসলিম মুজাহিদ দশজন পারসিক সৈন্যের সমান এবং কোনো সময় তার চেয়েও অধিক। অর্থাৎ একদম সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এই অবস্থার পরিবর্তন। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
কিসের বলে বলীয়ান হয়ে আরবের সেই হতদরিদ্র মূর্খ বিচ্ছিন্ন লোকগুলো এমন শক্তিশালী হয়ে উঠলেন? কেমন করে অহঙ্কারী দাম্ভিক জালিমদের গর্ব খর্ব করে পদানত করলেন?
নিঃসন্দেহে ইসলাম। ইসলাম আল্লাহর দেয়া এমন এক জীবনব্যবস্থা, আর মহানবী (সা)-এর প্রশিক্ষণে তাঁরা দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজেয় জাতি হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন।
ইসলাম ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করলে নিজ থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি জাতি দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হতে বাধ্য। এমন করেই আল্লাহ তাঁর জীবনব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এ জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করলে দুর্বলরা আর দুর্বল থাকে না। হীন নিঃস্বরা আর হীন নিঃস্ব থাকে না। ভীরুরা আর ভীরু থাকে না। তারা হয়ে ওঠেন শক্তিশালী, সাহসী, দুর্বার এবং অসাধারণ তেজোদীপ্ত। তাদের হাতে এসে যায় শাসনক্ষমতা। তাদের পদতলে এসে গড়াগড়ি দেয় দুনিয়ার সব সম্মান ও ধনসম্পদ।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ