লাল ফ্রক

লাল ফ্রক

তোমাদের গল্প সেপ্টেম্বর ২০০৯

আবু রায়হান মিকাঈল

Lal-Frokকেয়া নাছোর বান্দা। সে হার মানতে চায় না কোন কাজে। আবার যেটার বায়না ধরে, সেটা তার পূরণ করতে হয় ধনী কোটিপতি বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের দুলালী কেয়া। গত বছর ঈদে তার বাবা সেলিম সাহেব তাকে একটা কালো ফ্রক কিনে দিয়েছিল। কেয়ার সে ফ্রকটি মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই সেই বার, সে ঈদে যায়নি।

আর মাত্র দুই দিন পরই ঈদ। এবারের ঈদে কেয়া লাল ফ্রক কিনবে। সে জন্য আজ কেয়া ও তার বাবা সেলিম সাহেব এক সাথে বিকেলে মার্কেটে যাবে। কেয়ার আজ মনে মনে খুব আনন্দ লাগছে। এবারের ঈদ সে আনন্দমুখর পরিবেশের সাথে কাটাবে। দাদা, দাদী, নানা, নানী সবার সাথে একত্র হয়ে খুশির ঈদের আনন্দ ভোগ করবে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। কেয়া তার বাবার সাথে মার্কেটে গিয়ে সুন্দর একটা লাল ফ্রক কিনে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো। কেয়ার ফ্রকটির দাম প্রায় এক হাজার টাকা। ফ্রকটি কেয়ার খুব পছন্দ হয়েছে। এবারের ঈদে তার বন্ধুরাও লাল ফ্রক কিনেছে। কেয়া তার ফ্রকটি শোকেসের ভেতর রেখে দিল। ঈদের দিন সকালে পরবে।

কেয়ার খেলার সাথী চম্পা। প্রায় সর্বক্ষণই কেয়া তার সাথে খেলত। চম্পা ছিল খুব ভালো ও শান্ত মেয়ে। সে কেয়াদের পাশের বাড়িতে থাকে। চম্পাদের সংসার ছিলো বড় অভাবী সংসার। খুব কষ্টের মধ্যে তাদের দিন কাটে। বাবা একজন রিকশাচালক, আর মা কেয়াদের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে। এভাবে চলে চম্পাদের অভাবী সংসার। চম্পা ও কেয়া প্রায় সমবয়সী।

কেয়া পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। সে বয়সে ছোট হলেও তার প্রতিভা ও বুদ্ধি সুদূরপ্রসারী। কেয়ার এবার দৃঢ় সিদ্ধান্ত সে চম্পার সাথে ঈদ করবে। ঈদের সারাটা দিন এক সাথে কাটাবে।

আজ ঈদ। ধুম-ধাম ঈদের সাজ সবার বাড়িতে। কিন্তু চম্পাদের বাড়িতে আজ কোন ঈদের আমেজ নেই। কারণ আজ ২ দিন ধরে চম্পার বাবার রিকশা নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে চম্পার বাবা এবারের ঈদে কোন বাজার করতে পারেনি। এমনকি ঈদের সেমাই পর্যন্তও কিনতে পারেনি।

কেয়া এবার সেমাই খেয়ে তার লাল ফ্রকটি পরে চম্পাদের বাড়ি গেল। সেখানে গিয়ে দেখল চম্পাদের বাড়ি কোন ঈদের আমেজ নেই। ঈদের একটা ভালো জামা পর্যন্ত তার নেই। কেয়ার গায়ে লাল ফ্রকটি দেখে চম্পা এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। কেয়া বুঝতে পারল, চম্পার তার লাল ফ্রকটি খুব পছন্দ হয়েছে। তারপর কেয়া ভাবলো আমার প্রিয় খেলার সাথী চম্পার এত দুঃখ। তার জন্য আমার কিছু করা দরকার।

কেয়া চম্পাকে বলল, চম্পা আমি আগে বুঝতে পারিনি। তোমার মনে এত দুঃখ। তোমাদের এত অভাব। তুমি আমার সাথে চলো চম্পা। কেয়া চম্পাকে তাদের বাড়ি নিয়ে গেল। তারপর সে চম্পাকে সেমাই ও পায়েশ খাওয়ালো। হঠাৎ এক সময় কেয়া চম্পাকে বলল- চম্পা আমার এ লাল ফ্রকটি তোমার পছন্দ হয়েছে। চম্পা বলল হ্যাঁ, হয়েছে। কিন্তু ওটা পরার মত যোগ্যতা আমার নেই।

তখন কেয়া বলল কে বলেছে। তোমার এটা পরার যোগ্যতা নেই। তুমিও মানুষ আমিও মানুষ। তুমিও আল্লাহর সৃষ্টি, আমিও আল্লাহর সৃষ্টি। শুধু ব্যবধান তুমি গরিব, আমি ধনী এ কথা বলে চম্পার গায়ে, কেয়া তার লাল ফ্রকটি পরিয়ে দিলো। তারপর চম্পা আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো তাকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এরপর কেয়া তার গত ঈদে আনা কালো ফ্রকটি পরলো। লাল ফ্রকটি কেয়া চম্পাকে দিয়েছে বলে তার মনে একবিন্দুও দুঃখ নেই। তার আজ জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। কারণ কেয়া আজ এক চম্পার মনে খুশির হাসি ফুটাতে পেরেছে। চম্পার এক ঝিলিক হাসি কেয়াকে মাতিয়ে তোলে।

চম্পা ও কেয়া ঈদের মাঠে যাবার জন্য ঘর থেকে বেরুচ্ছে এমন সময় কেয়ার মা-এবং বাবা দরজার কাছে। চম্পা কেয়ার মাকে দেখে খুব ভয় পাচ্ছিল। কারণ একবার কেয়ার সাথে সে তাদের বাড়ি গিয়েছিল বলে, সেদিন কেয়ার মা তাকে ভীষণ মারপিট করেছিল। চম্পা ভাবছে আজ সে কেয়ার প্রিয় লাল ফ্রকটি পরেছে। না জানি তার কপালে আজ কী হয়। এ কথাগুলো ভাবতেই কেয়ার মা চম্পাকে বলল চম্পা! তুমি ভয় পেয়ো না। আমি দরজার আড়াল থেকে তোমাদের সব কথা শুনেছি। তুমি আজ থেকে কেয়ার সাথে খেলবে আর আমাদের বাড়িতে থাকবে।

একথাগুলো মায়ের মুখে শুনা মাত্রই কেয়া আনন্দ করতে লাগল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল এভাবে যদি সব ধনী-গরিব-দুখিদের দুঃখের সাথী হয়, তাহলে গরিবদের ঈদের দিনটি খুশি মনে কাটবে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ