রোজার ইচ্ছে পূরণ
তোমাদের গল্প জুলাই ২০১২
জান্নাতুল ফেরদৌস নিসা.. রোজা জানালা দিয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষজন আপন আপন কাজে ব্যস্ত। কারও দিকে কেউ তাকায় না; শুধু হুড়মুড় করে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে, কেউবা যাচ্ছে অটোরিকশায় আবার কেউবা যাচ্ছে গাড়িতে। হঠাৎ একটা দৃশ্য রোজার মনে খুব দোলা দিল। বাবা মায়ের হাত ধরে একটা পাঁচ ছয় বছরের শিশু জেব্রাক্রসিং দিয়ে হেঁটে চলে গেল। রোজার চোখ ছলছল করে উঠল। আবদুল্লাহ চাচার কাছে শুনেছে রমজান মাসেই তাকে কে যেন এই এতিমখানায় রেখে যায়। শিশুটিকে দেখে রোজা তার মা বাবার কথা মনে করতে লাগল। রোজা তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না। হঠাৎ সে মাথায় কার যেন হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। দ্রুত চোখের পানি মুছে হাসি মুখে ঘুরে দাঁড়ালো। কী হয়েছে চাচা? কিছু বলবেন? দেখ রোজা, তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝি। কিন্তু আগামীকাল ঈদুল ফিতর। তুমি যদি এভাবে ম্লান মুখে থাক তাহলে আমি খুব মন খারাপ করব। ছোট থেকেই আবদুল্লাহ চাচাই রোজাকে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছেন। তিনিই এই এতিমখানাটি চালান। তিনি রোজাকে প্রায়ই আশ্বাস দেন যে, একদিন নিশ্চয়ই তার মা বাবা তাকে নিতে আসবেন। রোজা মৃদু হাসলো। বলল, চাচা, আমি খুব দুঃখিত। আমি আসলে আপনার মনে দুঃখ দিতে চাইনি। যাও, ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আজকের ইফতার এই বছরের রমজানের শেষ ইফতার। আল্লাহর দরবারে আজকে যা খুশি চেয়ে নিও। জি, চাচা। রোজা নামাজ পড়তে বসে আল্লাহর কাছে তার মা-বাবাকে চাইল। বলল, হে আল্লাহ, পৃথিবীতে মা-বাবার গুরুত্বই আলাদা, তাদের মতো আপন জন কেউ হতে পারে না। কিন্তু আমি এতই হতভাগা, আমি আমার মা-বাবার আদর পেলামই না। তুমি যদি আমাকে কিছু দিতে চাও তাহলে আমার মা-বাবাকে ফিরিয়ে দাও। পরদিন সকাল বেলা আবদুল্লাহ চাচা রোজাকে ডেকে তুললেন। রোজা দ্রুত উঠে চাচাকে ঈদের শুভেচ্ছা দিল। চাচা ঈদের শুভেচ্ছা দেয়ার পর রোজাকে যে সংবাদ দিলেন, রোজা তা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। চাচা সত্যি বলছেন, সত্যি আমাকে আমার মা-বাবা নিতে এসেছেন? হ্যাঁ সত্যিই তা-ই। তারা উপযুক্ত প্রমাণ সঙ্গে করে এনেছেন। তবু আমি আমার মনের শান্তির জন্য তোমার সাথে তাদের ডিএনএ টেস্ট করে দেখব। তারা অফিস ঘরে আছেন। চল তোমাকে তাদের কাছে নিয়ে যাই। চলুন। যেতে যেতে চাচা রোজাকে বললেন, মজার কথা কি জানো রোজা? তোমার নাম তারা রোজা রেখেছিলেন কারণ তোমার জন্ম পবিত্র রমজান মাসেই হয়েছিল।
আরও পড়ুন...