রাহির যত প্রশ্ন   -রফিক মুহাম্মদ

রাহির যত প্রশ্ন -রফিক মুহাম্মদ

গল্প সেপ্টেম্বর ২০১৮

আচ্ছা দাদু! ফুটবল খেলাটা কে আবিষ্কার করেছে?
ছয় বছরের রাহির মুখে এমন প্রশ্ন শুনে দাদুতো হতবাক। তবু রাহিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তিনি চোখ থেকে চশমাটা খুলে পাঞ্জাবির কোণে মুছতে মুছতে বলেন, সে তো অনেক আগের কথা দাদু ভাই। সব কথাতো এখন আর মনে নেই।
মনে নেই মানে! তুমি না টিচার? আমাদের স্কুলের টিচাররাতো সব পারে? তাহলে তুমি পারছ না কেন?
রাহির কথায় এবার আহাদ মাস্টার একটু মুচকি হেসে বলেন, আমিতো বুড়ো হয়ে গেছি দাদু ভাই। তাই অবসর নিয়েছি। এখন আর আমি স্কুলে পড়াই না?
তাতে কি আগে তো পড়িয়েছো? তখনতো সবই পারতে। তাহলে এখন বলতে পারছো না কেন?
রাহির ধারণা টিচাররা সব কিছু জানেন। তার দাদা আহাদ মাস্টারও সব কিছু বলতে পারবেন? আহাদ মাস্টার গ্রামে থাকেন। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি অবসর নিয়েছেন। এক মাত্র ছেলে আসাদ ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে। মালিবাগে বাসা। গ্রাম থেকে প্রায়ই ছেলের বাসায় বেড়াতে চলে আসেন। একমাত্র নাতি রাহির সঙ্গে তার ভালো সময় কাটে। দাদু এলে রাহিতো সারাক্ষণ তার সাথে খেলা আর গল্পে মেতে থাকে। আহাদ মাস্টার গত বছর যখন এসেছিলেন রাহি তখন ক্রিকেট খেলা নিয়ে মত্ত ছিল। দাদুর কাছে বায়না- তাকে ব্যাট-বল কিনে দিতে হবে। কি আর করবেন স্টেডিয়াম মার্কেট গিয়ে নাতির জন্য ব্যাট বল কিনে আনলেন। দাদুর কাছ থেকে ব্যাট-বল পেয়ে রাহি সে কি খুশি। নাতির এমন খুশি দেখে আহাদ মাস্টারের হৃদয়ও পরম আনন্দে ভরে ওঠে। এরপর যে কয়দিন ঢাকায় ছিলেন ততদিন ড্রয়িং রুমে রাহির সাথে ব্যাট বল খেলে কাটিয়েছেন তিনি।
আহাদ মাস্টার গত বছর যখন ছেলের বাসায় এসেছিলেন তখন বিপিএল খেলা চলছিল। সে খেলায় রাহি ছিল মাশরাফির ভক্ত। দাদুকে সে প্রশ্ন করতো, মাশরাফি ভালো নাকি সাকিব ভাল? আবার যে দিন মুশফিকুর রহিমের দলের সাথে খেলা হতো সেদিন বলতো মাশরাফি ভালো না মুশফিক ভালো? রাহির প্রশ্নের জবাবে দাদু অবলীলায় বলতেন মাশরাফি হলো সবার সেরা। দাদুর কথায় রাহিও খুব খুশি হতো। সেবার সত্যি সত্যি মাশরাফির সেরা হয়েই তার দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। এতে দাদুর প্রতি রাহির আস্থা আরো বেড়ে গেছে। দাদু যা বলেন তাই সত্য এবং সঠিক এমনটাই মনে করে রাহি।
আহাদ মাস্টার এবার যখন ছেলের বাসায় এলেন তখন চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনা। ছোট্ট রাহিও এবার ফুটবল খেলা নিয়ে মত্ত। রাহির বাবা ছোটবেলায় গ্রামে অনেক ফুটবল খেলেছেন। স্কুলজীবন এবং কলেজজীবনে আসাদ খুব ভালো ফুটবল খেলতো। ভালো খেলোয়াড় হিসেবে এলাকায় আসাদের বেশ সুনামও ছিল। তাই ফুটবল খেলার প্রতি আসাদের আলাদা একটা ভালোলাগা রয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে আসাদের প্রিয় দল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ খেলা শুরু হওয়ার আগেই আসাদ নিজের জন্য এবং রাহির জন্য ব্রাজিলের জার্সি কিনে এনেছে। জার্সি পেয়েতো রাহি খুবই খুশি। রাহির জার্সি নাম্বার দশ। এতে নেইমারের ছবি আছে। জার্সি পাওয়ার পর থেকে রাহির নানা প্রশ্ন নেইমারের ছবি কেন? নেইমার কি বিশ্বসেরা খেলোয়াড়? ছেলের এসব নানান প্রশ্নের মুখে প্রতিনিয়তই পড়তে হয় আসাদকে। তবে আহাদ মাস্টার আসার পর ছেলের প্রশ্নের কবল থেকে রেহাই পেয়েছে আসাদ। রাহির এখন যত প্রশ্ন সব দাদার কাছে। আহাদ মাস্টার আসার সাথে সাথে তার কাছে ফুটবল কিনে দেয়ার বায়না ধরেছে রাহি। আহাদ মাস্টারও হাসি মুখে নাতির বায়না পূরণ করতে চলে গেলেন স্টেডিয়াম মার্কেট। সেখান থেকে রাহির জন্য ছোট বল কিনে আনলেন। বল পেয়েতো রাহি খুশিতে আটখানা। দাদুর সাথে সারাক্ষণই ফুটবল খেলা চলে। আর ফুটবল নিয়ে চলে নানা প্রশ্ন। আচ্ছা দাদু কে সেরা খেলোয়াড় মেসি না নেইমার নাকি রোনালদো?
রাহির প্রশ্নে দাদু এবার কূটনৈতিক জবাব দেন। চোখে মুখে একটু চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলেন, আসলে এরা প্রত্যেকেই তাদের দেশের সেরা খেলোয়াড়।
দাদুর উত্তরে রাহি খুব একটা খুশি হতে পারেনি। সে আবার প্রশ্ন করে, সেরা খেলোয়াড়দের সবারই ১০ নাম্বার জার্সি থাকে। তাহলে রোনালদোর জার্সি নাম্বার সাত কেন?
আহাদ মাস্টার সত্যি এবার ভাবনায় পড়ে যান। এর উত্তরে কী বলবেন? আহাদ মাস্টারের ভাবনার মধ্যে রাহি আবার প্রশ্ন করে, দাদু এই ফুটবল খেলা কে আবিষ্কার করেছে?
আহাদ মাস্টার ভাবতে ভাবতে বলেন, দাদু ভাই আমিতো বুড়ো হয়ে গেছি। এত কিছুতো এখন আর মনে নেই। তবে এই ফুটবল খেলা কে বা কারা আবিষ্কার করেছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন নামে এই খেলাটি প্রথম প্রাচীন মিসর, পারস্য, বেবিলন, গ্রিস, চীনে প্রচলিত ছিল। তবে আধুনিক ফুটবলের বিকাশ ঘটেছে ইংল্যান্ডে।
দাদুর কথা শুনতে শুনতে রাহি আবার প্রশ্ন করে, আচ্ছা দাদু বিশ্বকাপ ফুটবল কবে শুরু হয়েছে?
আহাদ মাস্টার বেশ গম্ভীর গলায় বলেন, ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। এর পর থেকে প্রতি চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযদ্ধের জন্য ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।
রাহি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাদুর কাছে ফুটবলের ইতিহাস শুনে। এ সময় মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসে। আহাদ মাস্টার মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন। এ সময় রাহি আবার জিজ্ঞেস করে, আাচ্ছা দাদু এখন বিশ্বে সব চেয়ে সেরা খেলোয়াড় কে?
আহাদ মাস্টার এবার রাহিকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলেন, শোন এখন আজান হয়েছে। আর আজান হলে সব কিছু রেখে নামাজে যেতে হয়। রাহি প্রশ্ন করে কেন? সব কিছু রেখে নামাজে যেতে হবে কেন? আহাদ মাস্টার বলেন, কারণ হলো নামাজ পড়া আল্লার হুকুম। আর আল্লাহ হলেন সবার- সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তার হুকুম পালন না করলে মৃত্যুর পর কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর তার হুকুম পালন করলে তার কথা মেনে চললে তুমি এই পৃথিবীতে যেমন সেরা হতে পারবে, তেমনি মৃত্যুর পর আখেরাতেও থাকবে পরম সুখে, বুঝলে?
দাদুর কথায় রাহি এবার মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়। আহাদ মাস্টার রাহির হাত ধরে বলেন, দাদু ভাই চলো মসজিদে যাই।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ