রাসেল স্যার   -মুহাম্মদ ইসমাঈল

রাসেল স্যার -মুহাম্মদ ইসমাঈল

গল্প মে ২০১৮

স্কুল পালাচ্ছিল ফাহিম। কিন্তু স্কুলের দেয়ালের ওপাশে ঝাঁপ দিতে গিয়ে যা দেখলো তাতে সারা শরীর কেঁপে উঠল ওর। একি দেয়ালের ওপাশে স্যার। যতদূর চোখ দেখা যায় খালি পানি আর পানি। এটা কিভাবে সম্ভব। তার সামনে দুটো ছেলে এইমাত্র দেয়াল থেকে ঝাঁপ দিলো। এই দেয়ালের ওপাশে তো রাস্তা থাকার কথা। এক মুহূর্তে কতগুলো চিন্তা খেলে গেলো ফাহিমের মাথায়। ফাহিম স্কুলের সেই ছেলেদের মধ্যে অন্যতম। লেখাপড়া ফাঁকি দেয়া, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা। এটা ফাহিমের নিত্যদিনের কাজ। সাঈদ স্যার ও হাফিজ স্যারের হাতে মাঝে মাঝে বেত্রাঘাত খায়। এই দুই স্যারকে একটু ভয়ও করে।
স্কুল না পালালে যাদের রাতে ঘুম আসে না, কখনো বা বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে চলে যায় নদীর পাড়ে, প্রতিদিনের মতো আজও স্কুল পালানোর চিন্তায় মগ্ন ছিলো। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে কিভাবে এমন হলো। সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না ফাহিম। ঠিক তখনই কাঁধে হাত পড়ে ফাহিমের। সাঈদ স্যার!
ওহে আজ মনে হয় দিনটাই মাটি, পড়বি পড় মালির ঘাড়েই। সাঈদ স্যার তাকে ক্লাসে নিয়ে এসে সবার সামনে ডাকলেন।
ফাহিম তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কেন শাস্তি দিতে যাচ্ছি? স্যার আমি একটা বড় ধরনের অপরাধ করে ফেলেছি। স্যার ! কী অপরাধ করেছ সেটা জানো তো?
ফাহিম মাথা নামিয়ে জবাব দেয়
স্যার, স্কুল পালাতে চেয়েছিলাম স্যার।
উঁহু হয়নি। তুমি শাস্তি পাবে এই কারণে যে তুমি স্কুল পালাতে পারোনি, তোমার সামনে দুটো ছেলে দিব্যি দেয়াল টপকে চলে গেল, আর তুমি পালাতে পারলে না। আমি বলতে চাচ্ছি স্কুল পালালে তো আর এখানে থাকতে হতো না। তাই না?
একটা হাসির রোল পড়ে গেল ক্লাসে। চমকে উঠল ফাহিম।
সাঈদ স্যার রসিকতা করার মানুষই নন।
চলো আমার সঙ্গে হেড স্যারের রুমে। যা করার তিনিই করবেন।
সেকি ! হেড স্যার কেন?
স্যার তো ব্যাপারটা ক্লাসেই শেষ করতে পারতেন। কোথাও না কোথাওতো একটা সমস্যা আছেই। বিড়বিড় করতে থাকে ফাহিম।
হেড স্যারের রুমে ঢুকে তৃতীয়বার চমকে উঠে ফাহিম।
হেড স্যারকে ও আরো বেশি ভয় পায়।
স্যার ক্লাস ছাড়া মাঝে মাঝে জানালার পাশে দরজার পাশে সবার লেখাপড়া নজরদারি করেন। একবার যদি কাউকে অন্যমনস্ক পান তার খবর নিয়ে ছাড়েন।
এখানে ফাহিমের হেডস্যার রাসেল স্যার তিনি যেমন শাসন করেন তেমনই আদর সোহাগ করেন।
হেড স্যারের রুমে ঢুকে ফাহিম আঁতকে ওঠে। একজন সুদর্শন যুবক বসে আছেন সেখানে।
ফাহিমের দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতা বলে হেড স্যার মানে মাথায় টাক, ইয়া বড় ভুঁড়ি আর গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। এত দিন পর্যন্ত তাই হয়ে এসেছে।
চিন্তা করো না ফাহিম, আমি তোমাদের হেড মাস্টার নই, আর আমি তোমার ধারণা ভুল প্রমাণ করতে চাই না।
আ-আ-আ-আপনি কিভাবে জানলেন আমার ধারণা? কথা আটকে আসে ফাহিমের। সে অনেক কাহিনী। তুমি শুধু এতটুকু জেনে রাখো যে আমি তোমাকে নিতে এসেছি।
আ-আ-আমাকে? কিন্তু কেন? আমি কি করেছি?
কিছুই না। আসলে আমি এসেছি গ্যালাক্সি জেনারেশন-২৯ থেকে। সেখানে স্কুল পালানো খুবই কৃতিত্বের কাজ। তাই তুমি আমাদের কাছে খুবই দামি। বললেন সুদর্শন যুবকটি।
ফাহিম জোর গলায় বলতে থাকে, না, আমি যাবো না।
আমি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবো। যদি আপনি আর এক পা এগোন।
তিনি হেসে বললেন, আমি জানি, তুমি করবে না।
যেভাবে আমি স্যারের মাথার মাঝে ঢুকে তোমাকে নিয়ে এসেছি, সেভাবে তোমাকেও চুপ করিয়ে দেবো।
ফাহিমের চোখ ধীরে ধীরে বুজে আসে। নাকে আসে ক্লোরোফর্মের গন্ধ।
জ্ঞান ফেরার পর ফাহিম খেয়াল করলো সবাই তাকে ঘিরে হাসাহাসি করছে। আসলে যুবকটি তাদের রসায়নের নতুন শিক্ষক। ফরিদ স্যার নামে সবাই তাকে চেনেন। তিনি আর রাসেল স্যার মিলে এই নাটকটি সাজিয়েছিলেন।
সত্যি কথা বলতে, দু-এক দিন স্কুল পালালে সেটা মেনে নেয়া যায়।
তবে প্রতিদিন নয়। তাদের ওপর বিশেষভাবে দায়িত্ব নেয়া হয়েছিল স্কুল পালানো বন্ধ করার জন্য।
ফাহিম আর কখনো স্কুল পালায়নি। কিন্তু এটা সে কোনোভাবেই ভেবে বের করতে পারল না যে স্কুলের পর ফরিদ স্যার কিভাবে এলেন। রাসেল স্যারকে জিজ্ঞাস করার পর তিনি মিটিমিটি হেসেছিলেন। কেউ জানে না এই মুচকি হাসির অর্থ কী?
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ