রাজার সাজে আসে ঋতুরাজ বসন্ত

রাজার সাজে আসে ঋতুরাজ বসন্ত

বিশেষ রচনা মার্চ ২০১৪

হারুন ইবনে শাহাদাত

Fulকত সুন্দর আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ! ছয় ঋতুতে নানান রূপ-রঙে সাজে এ দেশের প্রকৃতি। সময়ে চাকা ঘুরে প্রতি বছরের শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। বঙ্গাব্দ অনুসারে বছরের শেষ দু’টি মাস ফাল্গুন-চৈত্র। এই দু’মাস বসন্তকাল। নিশ্চয়ই তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে বসন্তকালেেক ঋতুরাজ বলা হয় কেন? হ্যাঁ, এই সময় বাংলাদেশের প্রকৃতি সাজে রাজকীয় সাজে। শীতকালে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার নতুন পাতা গজায়। গাছগুলো সবুজ পাতায় ছেয়ে যায়, পাতার ফাঁকে বসে কু-হু-কু-হু গান ধরে কালো কোকিল। ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছগাছালি। মনের আনন্দে পাখিরা গান গাইতে শুরু করে। লাল ফুল, নীল ফুল, হলুদ ফুল, গোলাপি ফুল, বেগুনি ফুল, আকাশি ফুল, কমলা ফুল, ঘিয়ে ফুল, সাদা ফুল হাজার রঙের ফুল ফোটে বসন্তে ! শীতকালকে অনেকে বুড়ি সাথে তুলনা করে বলেছেন, শীতের বুড়ি চলে যাওয়ার পর বসন্তকাল বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রমণীয় রূপে আসে। এই ঋতুতে বায়ু নানা দিক থেকে প্রবাহিত হয়, কোন নির্দিষ্ট দিকে স্থির থাকে না। উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহের পরিবর্তে গ্রীষ্মের দক্ষিণা অথবা দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করার এ ক্রান্তিকালে বায়ুপ্রবাহের দুরন্তপনা শুরু হয়। বাওঘুণ্টা বাতাস বহে মাঝে মাঝেই। বসন্তের আবহাওয়া থাকে মনোরম, আকাশে কিছু কিছু মেঘ থাকলেও সার্বিক আবহাওয়া থাকে নির্মল। কদাচিত মার্চের শেষ দিকে দুপুরের পর বিচ্ছিন্নভাবে বজ্রঝড় সংঘটিত হয়ে থাকে। এ ঋতুতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যায়। আত্মভোলা মনে জাগে গান। রক্তবর্ণের শিমুল, পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া এ সময়েই ফোটে। আমগাছ সাজে নব মঞ্জরিতে শোভিত হয়ে। ভ্রমর মনের আনন্দে গুঞ্জন করতে করতে সুগন্ধি পুষ্প ও আম্র মঞ্জরির মধু পানে মত্ত হয়। যব, গম, সরিষা ইত্যাদি শস্যে মাঠগুলো রমণীয় শোভা ধারণ করে। এ ঋতুতে হিন্দুদের বাসন্তী পূজা, দোলযাত্রা প্রভৃতি উৎসব মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। কৃষ্ণচূড়া এই ঋতুর অতি পরিচিত একটি ফুল। বসন্তের শেষ মাস চৈত্র। চৈত্র-বৈশাখ মাসের প্রচণ্ড গরমে যখন সবাই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখনই কৃষ্ণচূড়ার ডাল থোকা থোকা লাল লাল ফুলে ভরে ওঠে। শুধু বসন্ত নয় গ্রীষ্ম নয়, বর্ষায়ও কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে থোকা থোকা উজ্জ্বল গাঢ় লাল-কমলা রঙের ফুল অপূর্ব মোহনীয় রূপে ফোটে। ফুলের জগতে কৃষ্ণচূড়ার মতো এমন উজ্জ্বল রঙের ফুল বেশ দুর্লভই বটে। বসন্তকালেই সবচেয়ে বেশি ফোটে চাঁপা ফুল। বসন্তের আরেকটি ফুল কনকচাঁপা। কনকচাঁপার ঘন হলুদ সোনালি রঙের পাপড়ি আর তামা রঙের কচি পাতায় গাছের ডালপালা ছেয়ে যায়। আর ফুলটিতে মধুও থাকে। আর সেই মধুর লোভে জড়ো হয় রাজ্যের সব মৌমাছি আর ভ্রমর। এই সময় কাঁঠালি চাঁপার সুবাসে ভরে যায় বাংলার বাতাস। বিশেষ করে রাতের বেলায় ফুলটি গন্ধ ছড়ায়। আর ফুলটির রঙেরও একটা মজা আছে। ফুলটি প্রথমে থাকে সবুজ। পরে ক্রমেই হলদে রঙের হতে থাকে। আর ফুল যখন হলদে হতে থাকে, তখনই সুগন্ধ বের হয়। গাছের ডালের মাথায় থোকায় থোকায় সাদা রঙের বড় বড় দোলনচাঁপা ফোটে। তবে সব দোলনচাঁপাই সাদা হয় না; কোনো কোনো জাতের দোলনচাঁপা হলদে কী লাল রঙেরও হয়। মোটমাট দোলনচাঁপার প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৪০টি। বসন্তকালে অরণ্যের অগ্নিশিখা হয়ে লালে লালে ভরে দেয় পলাশ ফুল। শীত এলেই সব পাতা ঝরে গিয়ে গাছটি একেবারে ন্যাড়া হয়ে যায়। কিন্তু বসন্তকাল আসতে না আসতেই গাছটি গাঢ় লাল রঙের ফুলে ভরে ওঠে। তারপর গাছে পাতা জন্মাতে শুরু করে। এই পাতা জন্মানোর আগে, যখন কেবল ফুল ফুটতে শুরু করে, তখন পলাশ গাছ একদম লাল হয়ে যায়। বসন্তকালের নানান রঙ আর গন্ধের বাহারি ফুল আর পাখির গান শোনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন : ‘আহা আজি এ বসন্তে/কত ফুল ফোটে/কত বাঁশি বাজে/কত পাখি গায়...’ বাংলাদেশের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। প্রতিটি ঋতুতেই এই বৈচিত্র্য সৌন্দর্য ছড়ায়। তবে বসন্তের সৌন্দর্য উপমাহীন। এর সাথে তুলনা চলে না অন্য কোনো ঋতুর। এমন ফুলেল সময় আর কখনো দেখা যায় না। শীতের জীর্ণতা শেষে প্রকৃতিতে যে উষ্ণতা আসে সেই উষ্ণতায় মানুষের মনও প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে জেগে ওঠে নতুনের আহবানে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ