রবিন ও বেগুনি আম
সাইন্স ফিকশন আহমাদ মুত্তাকী আগস্ট ২০২৩
রবিন মোটামুটি ভদ্র টাইপের ছেলে। সবসময় একাকী থাকে। সেদিনও একা ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটা বেগুনি আম। যা একই সঙ্গে অদ্ভুত আকৃতিরও। সে কিছুক্ষণ সেটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তখনই সে লক্ষ করল যে, আমটি একটু নড়ে উঠল। এরপর ধীরে ধীরে বড়ো হতে লাগলো আর একসময় এটি একটি স্পেসশিপ আকৃতি ধারণ করল।
রবিন কিছুটা ভড়কে গেল। তবে একইসাথে কৌতূহলও হলো তার। ওই সময় সে দেখল একটি নীলাভ আলো তার ওপর এসে পড়ল। আর তখনই সে ওপরে উঠে যেতে শুরু করে। কিছুক্ষণ বাদে সে নিজেকে স্পেস শিপটিতে আবিষ্কার করে।
সেখানে একটা আবছা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। সেটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসে। তখন রবিন পিছিয়ে যেতে গেলেই লক্ষ করে যে, সে সেখানে জমে গেছে। কোনো ভাবেই নড়তে পারছে না। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হতে লাগলো।
ছায়ামূর্তিটি তার সামনে এসে পড়ল। সে দেখল এটি শুকিয়ে যাওয়া মানব শিশুর মতো, শুধু মাথাটা অস্বাভাবিক রকম বড়ো। আর হাত পায়ের আঙুলগুলো লম্বা লম্বা। সেটি তার চোখের দিকে তাকাল আর তার মেরুদণ্ড বরাবর শীতল প্রবাহ বয়ে গেল।
ছায়ামূর্তিটি তার উদেশ্যে বলল, রবিন তোমাকে স্বাগতম! ভয় পেয়ো না।
একটু বিরতি দিয়ে বলল, তোমার সাহায্যের জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ! বিদায়!
রবিন সঙ্গে সঙ্গে বিপদ আঁচ করল। কিন্তু সে বুঝতে পারল তার বলার ক্ষমতা নেই। ধীরে ধীরে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
হঠাৎ তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে আর সে ঢলে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্য, সে শটান দাঁড়িয়ে রইল।
রবিন ঠিক তখনই চোখ খুলে উঠে বসে বিছানায়। তার বুকে হাতুড়ি পিটানোর মতো আওয়াজ করছে। তখন তা বন্ধ হয়ে গেল!
তার সামনে ছায়ামূর্তিটি দাঁড়িয়ে আছে। আর তার মাথাটা তখন কাজ করা বন্ধ করে দিলো!
তবে এবার রবিন অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। সে বুঝতে পারল, এভাবে বারবার ভড়কে গিয়ে থমকে গেলে কখনোই সে এই বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। উল্টো বিপদ তাকে আরো দ্রুত গ্রাস করে নেবে।
তাই সে অতি দ্রুত গতিতে ছায়ামূর্তিটির মাথা বরাবর সজোরে লাথি মারে। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল মূর্তিটির কিছুই হলো না। বরং তার পা অদৃশ্যে আঘাত হানল।
রবিনের আচানক মনে পড়ে যায়, সায়েন্স ফিকশনের বইয়ে পড়া গল্পের কথা। সে বুঝতে পারল, সে একটি পরীক্ষাগারে বন্দী। ছায়ামূর্তিটি তার ওপর এক্সপেরিমেন্ট করছে!
এর মানে, সে এতক্ষণ যা করেছে ভেবেছে সব ছায়ামূর্তিটি বুঝেছে। আর বোঝার জন্যই তো এই এক্সপেরিমেন্ট তার ওপর !
সে তাই এবার চোখ বন্ধ করে ফেলল।
সে ধীরে ধীরে বলল, আমি জানি তুমি কী চাও। তুমি কি করছ তাও জানি। তুমি এখন আমার কিচ্ছুটি করতে পারবে না। ভালো চাও তো দ্রুত সব আগের মতো করে ফেলো। নইলে...
বাকিটুকু বলবার আগেই রবিন এক পলকে একটি বিরাট ও ফাঁকা হলঘরে নিজেকে দাঁড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করে।
হঠাৎ সে তার ঘাড়ে কারো শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব করে। সে পিছনে ফিরে তাকাল।
একজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। মুখে স্মিত হাসি। কিন্তু রবিনের এতো অভিজ্ঞতার পর সে আর ভুল করেনি। এটিও তার ওপর এক্সপেরিমেন্টের অংশ।
সে তাই এবারও বলল, আমি আর কোনোমতেই তোমার এসবে বিভ্রান্ত হবো না। তাই অযথা সময় নষ্ট করো না। আমাকে ছেড়ে দাও।
এবার মনে হয় কাজও হলো। সে দেখলো, তার চারিপাশে অন্ধকার নেমে এসে শেষে দৃশ্যপট পাল্টে সে একটি সবুজ বলয়ের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করে। সে অনুভব করল যে, সে আস্তে আস্তে নিচে নামছে। সে ওপরে তাকিয়ে দেখল, স্পেসশিপটি স্থির হয়ে আছে আকাশে। নিচে তাকাল, দেখল তার বাড়ির ছাদের ঠিক ওপরে সে। এভাবে সে একসময় তার বাড়ির ছাদে নামল। মাটিতে পা পড়তেই সে একটি বাতাসের ঝাপটা অনুভব করল। সে পিছনে ফিরে তাকাল, দেখল স্পেসশিপটি তার ঠিক পাশ দিয়ে গিয়ে হঠাৎ মিলিয়ে গেল। রবিনের চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে রবিন লাফিয়ে জেগে ওঠে। দেখল তার আম্মু রাগী মুখে চেয়ে আছে। বলল, কী? লাটসাহেবের ঘুম ভাঙলো এতক্ষণে? আর কালকে বাইরে থেকে হঠাৎ তোর ঘরে কীভাবে এলি?
শেষ কথাটা শুনেই রবিনের সব মনে পড়ে গেল। তার মেরুদণ্ড বরাবর আবার শীতল।
আরও পড়ুন...