মৃত্যু বিভীষিকা   -আহমদ মতিউর রহমান

মৃত্যু বিভীষিকা -আহমদ মতিউর রহমান

গল্প জুন ২০১৮

আকিয়াব শহরে সোনাঝরা বিকেল নেমে এসেছে। সময়টা না গরম না ঠাণ্ডা। সাগরের তীরে একদিকে যেমন মিয়ানমারের আরাকান, অন্যদিকে বাংলাদেশ। মাঝখানে নাফ নদী। নদীর এপার ওপার বলতে গেলে জীবনযাত্রা একই রকম। বহু মানুষেরই পেশা সমুদ্রে আর নাফ নদীতে মাছ ধরা। কারো কারো পেশা শুঁটকি তৈরি করা। কেউ নৌকা বা সাম্পান গড়ার কারিগর। আবার অনেকেই আছে নানা জিনিসের দোকানপাট নিয়ে। তারা এসব করে জীবন চালায়। দুই এলাকার মানুষের মধ্যে সদ্ভাবের অভাব ছিল না। মংডু থেকে মালামাল যেত, এখনো কমবেশি যায়, বিনিময়ে টেকনাফ থেকেও আসতো বাণিজ্যিক পণ্যের চালান। দুই তরফের লোকদের আনাগোনা তো ছিলই। এক সময়ে আরাকান ছিল স্বাধীন রাজ্য। আরাকানের রাজসভায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছিল দাপট। মহাকবি আলাওল তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এবার কি যে হয়ে গেল। আগের সেই ভাব আর নেই। আরাকানের মুসলমানরা শত শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছে। এখন বলা হচ্ছে তারা ভূমিপুত্র নয়। তারা নাকি বিদেশী। অতএব তাড়াও তাদেরকে।
আকিয়াবে বিকেল নেমে এলে স্বস্তি। গরমে দিনে রোদের তাপ অথবা শীতকালে ঠাণ্ডার তীব্রতা কম থাকায় এ সময়টা সবাই যার যার কাজে বের হয়।
আকিয়াব শহরটা আগে অনেক প্রাণবন্ত ছিল। আরাকানে বৌদ্ধ ও মুসলমানরা শত শত বছর ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছিল। এমনকি তৎকালীন বার্মার স্বাধীনতা আন্দোলনেও রাখাইন বা বৌদ্ধদের পাশাপাশি অবদান রেখে এসেছে মুসলমানরা। এখন কিসের থেকে যে কী হয়ে গেল। মুসলমানদের মধ্যে আগের মতো শান্তি নেই আনন্দ নেই। তাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে বর্মি সামরিক জান্তা।
১৯৮২ সাল। এ সময় হঠাৎ করে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া হলো। শত শত বছর ধরে তারা আছে, আছে তাদের বাপ-দাদার ভিটে তবু সোহরাব, বদি আলম, রোখসানা, মোহাম্মদ হোসেনের মতো হাজারো মুসলিম নর-নারী হয়ে পড়লো অধিকারহারা।

২.
মোহাম্মদ হারেস উদ্দিনকে এতসব ভাবনা চিন্তা সত্ত্বেও কাজে বের হতে হবে। তা না হলে খাবে কী? শুধু সে একা নয়, তার পরিবার, তার আব্বা আম্মা। বাপ-দাদার আমল থেকে আকিয়াবের একটি মার্কেটে কাঠের কারবারি তারা। বার্মাটিক, লোহাকাঠ, গজারি, গামারি, কড়ই, শিল কড়ই নানা জাতের কাঠের আড়ৎ। আছে কাঠ চেরাইয়ের করাতকল।
দোকানে দু’বেলা পালা করে বাপ বেটা বসেন। হারেস উদ্দিনের বাবা মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের বয়স হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব। তবে এই বয়সেও তিনি বেশ কর্মঠ। সকালে বা বিকেলে পালা করে দোকানে বসতে তার কোনো কার্পণ্য নেই। তার স্ত্রী মালেকা বেগমও বয়সের ভারে কিছুটা কাবু। সংসার তুলে দিয়েছেন বৌমা জরিনার হাতে। নামাজ পড়েন কুরআন শরিফ পড়েন। নাতি নাতনিদের দ্বীনের তালিম দেন, পয়গম্বরদের কেচ্ছা বলেন। এভাবেই দিন কেটে যায়।
দুপুরে থমথমে মুখে বাড়ি ফিরেছেন বাহাউদ্দিন। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস। কোথায় জানি কী হয়েছে। তাই ক্ষেপেছে আর্মি। সব ছারখার করে দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা এতদিন যে স্বপ্ন দেখে এসেছিল তা সব উবে গেছে। তারা আশায় বুক বেঁধেছিল, সু চি একবার ক্ষমতায় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সু চি প্রেসিডেন্ট না হোক সর্বময় অধিকারী তো হয়েছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের বদল হলো কই। বরং উল্টোটাই হচ্ছে। সবাই নানা কথা বলাবলি করছে। লাখ লাখ লোক প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। তাও ভালো বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তা না হলে সমুদ্রে ডুবে মরা ছাড়া পথ ছিল না।
: কিছুটি হবে না। জান্তা যেভাবে চালাবে মিয়ানমার সেভাবে চলবে। মুসলমানদের কপালে দুর্গতি আছে। সে দিন কে যেন বলছিল কথাটা।
: আমরা কি এ মাটির সন্তান নই? আমাদের কয়েক পুরুষের ভিটে এই আরাকান। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই হবে। বলেছিলেন আরেকজন।
: অধিকার না ছাই! বাড়া ভাতে ছাই পাবে তোমরা। বলেছিলেন এ তল্লাটের প্রবীণ ব্যক্তি জায়েদুল হক। বয়স প্রায় নব্বই।
মিয়ানমার আর তার শাসকদের ভালো করে চেনা আছে তার। সারা জীবনই ছিল এ দেশ বার্মা। হালে হয়েছে মিয়ানমার। বার্মা নামের মাঝে ঐতিহ্য আছে। সেনারা তার বুঝবে কি। আরো কত কথা বলেন তিনি। তরুণরা অবশ্য তার কথা গায়ে মাখেনি। এখন তার কথাই সত্য হতে চলেছে। কি না করেছে বর্মি জান্তা? বার্মা তো পাল্টেছেই আরাকান নাম পাল্টে করেছে রাখাইন। আরাকানের ঐতিহাসিক রাজধানী তাদের প্রাণের শহর আকিয়াবের নাম দিয়েছে সিত্তুই। রাজধানী রেঙ্গুন হয়ে গেছে ইয়াঙ্গুন। আর এটা এখন রাজধানীও নেই। রাজধানী করা হয়েছে নেইপিডো। নামে কিবা আসে যায়? অধিকারটুকু পেলেও তো হতো। তাও তো পাচ্ছে না মুসলমানেরা।

৩.
বিকেল থেকে দোকানে বসে আছে হারেস উদ্দিন। সামান্য কিছু বেচা বিক্রি হয়েছে। মনটা এমনিতেই ভালো নেই। এর মধ্যে এক রাখাইন নেতা কিসের যেন চাঁদার কথা বলে নিয়ে গেল কয়েক হাজার টাকা। হাতে ভোজালি নিয়ে হাটে সেই নেতা। খিন ইউ মিন। মাত্র কয়েক ক্লাস লেখা পড়া করেছে। এখন সে ছড়ি ঘোরায়। বর্মি সেনা আর লুণ্ঠক বাহিনী তার পকেটে। তাকে ভয় পায় না এমন কেউ নেই এ তল্লাটে। তাই বলতে গেলে তহবিল শূন্য করেই তাকে টাকা দিতে হয়েছে। কি আর করা। এ ছাড়া কোন উপায় নেই।
আরো খারাপ খবর অপেক্ষা করছিল হারেসের জন্য। কে একজন এসে বলে গেল-
: ব্যাপার স্যাপার ভালো ঠেকছে না, হারেস। চারদিকে কী ফিসফাস, শুনেছ কিছু?
: কী ফিসফাস? অবাক হয় হারেস।
: রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্মিদের নজর পড়েছে। বদ নজর।
: এর মানে কী চাচা? বলেন তো।
: বুঝলা না। তোমাগ ঘরবাড়ি দোকানপাট ব্যবসাপাতি সব কাইড়া নিব ওরা। বললেন সত্তরোর্ধ্ব মোকাম ফকির। এ তল্লাটের অন্যতম প্রবীণ বাসিন্দা।
: কন কী? এত সোজা? আল্লাহর দুনিয়াত কি বিচার নাই?
: ওরা শক্তিশালী। ধর্মীয় নেতারা আছে ওদের পাশে, বর্মি জান্তা আছে। তোমাদের তো কিছুই নাই।
: আছে আছে। আমরাও এক লগে আছি সবাই। ঐক্যবদ্ধ আছি। প্রতিরোধ করতে চাই।
: এত বড় শক্তির লগে পারবা? অস্ত্র কই? ট্রেনিং দিব কেডা?
: লড়াই তো করুম চাচা। বিনা যুদ্ধে আমরা হার মাই না নিমু না।
এর পর বুড়ো হাহাহা করে হেসে ওঠেন। বিদায় নেন। সত্যি তো ঐক্য কই? অস্ত্র কই? ট্রেনিং কই? সহযোগী দেশ কই। তার কথা ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে অর্থহীন হেঁয়ালি।

৪.
হারেসের মুখ ভার দেখে স্ত্রী জরিনা প্রশ্ন করেন
: কী হৈল আপনার? মুখ ভার, কী চিন্তা করেন? কোন খারাপ খবর?
: হ্যাঁ, সোলেমানের মা, মনটা বড়ই খারাপ। দোকানে বেচা বিক্রি নাই। তার মাঝে হার্মাদের দল এতগুলা টাকা নিয়া গেল। পোলাপানেরে খাওয়ামু কী নিজেরাই কী খামু কেমনে বাচুম। পোলাপানের স্কুল মক্তব বন্ধ, মসজিদ জ্বালাইয়া দিতে চায় ওরা।
: কন কী?
: শুধু কি তাই। আমাগো তাড়ায়া দিবো- নাগরিকত্বের কথা ধোঁকাবাজি। কোন দিনই দিব না।
: সু চির কী মত? এত দিনতো সু চি সু চি করলেন।
: তার কথা আর বলবা না। সেনারাও যা করে নাই, এই মহিলা তার চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ।
: কী রকম?
: আরাকানে কোন মুসলমানের চিহ্ন ওরা রাখবো না, এই তার সিদ্ধান্ত। দেখছো না সব দলে দলে পালাচ্ছে। কেউ বাংলাদেশ কেউ থাইল্যান্ড কেউবা সাগরে ভেসে মালয়েশিয়া। আমরা এতদিন ভুল করছি, তোমারে বলতে দ্বিধা নাই।
: হায় আল্লাহ! আমাদের কী হবে? এবার ভয়ার্ত শোনায় জরিনার কণ্ঠ।
: নিজেরা কিছু না করলে কি আল্লায় করবে?
: কী কন। আল্লাহর রহমত কি আমরা পামু না।
: শোন জরিনা। আমরা পনেরো লাখের মতো মানুষ কোন কার্যকর কৌশল করতে পারলাম না, কোন প্রতিরোধ তো নয়ই।
: তাতো তলে তলে কিছু হচ্ছেই।
: ওতে হবে না, মার খাওয়া ছাড়া গতি নাই।
কথা আর এগোল না। গম্ভীর মুখে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন হারেসের স্ত্রী। প্রস্থান করলেন হারেসও।

৫.
বেশি দূর যেতে হলো না। দূর থেকে কামান না জানি রকেটের গোলা আঘাত হানলো বুচিডং-এর একটি মহল্লায়। তারপর দাউ দাউ আগুন, মৃত্যু বিভীষিকা। নিজের চোখে দেখতে পেল হারেস। যার পরনে যা ছিল আর হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়েই দল বেঁধে বের হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো।
সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত বলে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে ওপরে উঠছে। নিচে লাল আগুন। আগুনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বলছে। রাত্রি নেমে এলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর দেখা যাবে না।
হারেস উদ্দিনের মনে হতে থাকলো ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে যেন অং সান সু চির একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে। মুখে পৈশাচিক হাসি। এমনিতে মহিলা গোমড়ামুখী। এত পৈশাচিক হাসি হাসতে পারেন তিনি! আগে তো কোন কালেই তা মনে হয়নি। এত দিনে ভুল ভাঙে হারেস উদ্দিনের। আসলে কথায় বলে না বড়র পিরিতি বালির বাঁধ।

৬.
রাত দশটা। সারা আকিয়াব শহর সুনসান। অন্যান্য দিন আরো কিছু সময় জেগে থাকে শহরটা। আজ যে কি হলো। সবাই পড়ি মরি বাড়ি ছুটছে।
আকিয়াব নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের সামনে মিলিটারির কয়েকটা লরি দাঁড়ানো। স্কুলটা তালাবদ্ধ দীর্ঘ দিন। ক্লাস হয় না। কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছে। হারেস উদ্দিনের দুই ছেলে-মেয়ে সোলেমান আর আমিনা এই স্কুলে পড়ে। অন্যান্য রোহিঙ্গা ও রাখাইন শিশুরা তাদের সহপাঠী।
স্কুলের দুই দিকে দুটো রাস্তা। দুটোতেই যানবাহনের চলাচল কম। কয়েকটা ব্যাটারি চালিত টুকটুক চলছে। কেউ আসা যাওয়া করছে ত্রস্ত পায়ে, বলা বলি করছে, এখানে বুঝি মিলিটারি ক্যাম্প হবে।
: ক্যাম্প না ছাই। সব মানুষ মারার কল। রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে এনে জবাই। মেয়েদের বেআব্রু করে নির্যাতন। এরই নাম ক্যাম্প। বুঝলা মিয়ারা।
: চাচা ঠিকই কইছেন। ততক্ষণে সেনারা স্কুলের মাঠে কয়েকটা তাঁবু করেছে। তালা ভেঙে ভেঙে স্কুলের ক্লাসরুমগুলোর বেঞ্চ বাইরে ছুঁড়ে ফেলে থাকার জায়গা করেছে। তার মানে তারা এখানে থাকবে অনেক দিন।
দিনে দিনে অভিযান চালায় যে সব কনভয় তারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সন্দেহজনক লোকদের ধরে নিয়ে সরে পড়ে।
ভাগ্য ভালো থাকলে আটক লোকটা ছাড়া পায়। তা না হলে গুলিতে বুক ঝাঁজরা করে দক্ষিণের পাহাড়ের ঢালে লাশ ফেলে দেয়। পঞ্চাশ ষাট ফুট নিচে নালা। কেউ কোন দিন জানতেও পারে কোন দুর্ভাগা অকালে প্রাণ হারিয়ে কংকাল হয়ে পড়ে আছে ওখানে। সেখান থেকে কোন লাশ তুলে এনে দাফন করা সৎকার করা অসম্ভব।
রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ স্কুলের সামনে জড়ো হয় আরো কয়েকটি সাঁজোয়া যান। যুদ্ধ সন্নিকটে। শত্রু কোন দেশ নয়, কোন বহিঃরাষ্ট্র নয়। এ দেশের হতভাগা মুসলিম রোহিঙ্গা। ওদেরকে ঝাড়ে বংশে শেষ করার পরোয়ানা জারি হয়েছে। আর পরোয়া কী।
মাঠে প্যারেড করাচ্ছে কোয়ার্টার মাস্টার হ্লা মিন্ট থান। ভয়ঙ্কর এ অফিসার। তালে তালে প্যারেড করতে না পারলে সৈনিক কর্পোরালদের বেতের ঘা লাগাতে মোটেও কসুর করেন না।
: ফোর্সেস। অ্যাটেনশন। উই আর রেডি টু অপারেশন ফোর ফরটি ফোর। ৪৪৪। সবাই জানে এটা একটা কোড মাত্র।
: ইয়েস স্যার। উপস্থিত সৈনিকদের থেকে একজন জবাব দেয়।
: ফোর্সেস। যা যা বলা হয়েছে তেমন তেমন করা চাই। ডেস্ট্রয় অর কিল দেম অল। অর ড্রিভেন আউট ফ্রম আওয়ার টেরিটরি। ওভার।
এর অর্থ সৈনিকরা বোঝে। রোহিঙ্গাদের হয় মেরে ফেলতে হবে না হয় তাড়িয়ে দিতে হবে সীমান্তের ওপারে। তারা পুলকিতও। এবার বুঝি আর্মি ট্রেনিংটা কাজে লাগবে। লোককে অত্যাচার করেই আর্মির আনন্দ। আর্মি ট্রেনিংয়ের আসল কথা তো তাই।
: ফোর্সেস। আর একটা কথা। আবার শোনা গেল মিন্ট থানের কমান্ড। আওয়ার বুডিস্ট লিডারস আর অ্যাকোম্পেনি উইথ আস। বৌদ্ধ নেতারা আমাদের সাথে থাকবে। পরের কাজটি তারা করবে। ওভার।
মুহূর্তে বেরিয়ে গেল আটটি সামরিক যানের একটি কনভয়। এই কনভয়কে আরাকানে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ভয়। শেষ যানটাতে আছে কিছু সিভিলিয়ান, বৌদ্ধ নেতারা। সেনাদের সহযোগী। শহরের দক্ষিণ প্রান্তে একটি স্থানে থামে সামরিক বহর। এই এলাকাটা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। অদূরে বাহাউদ্দিন হারেস উদ্দিনের বাড়ি। আরো বহু বাড়ি। এক সঙ্গে গর্জে ওঠে অসংখ্য মেশিনগান। ঠাঠা ঠাঠা। যেন ঘুমন্ত এলাকাবসীর সঙ্গে ঠাট্টা করছে, মরণ ঠাট্টা। এই ঠাট্টা মরণ যন্ত্রণার নাম।
আহতদের আর্ত চিৎকারে রাতের পরিবেশ ভয়ার্ত হয়ে উঠলো। যে পারলো পরনের কাপড় পরে দৌড়াতে লাগালো জঙ্গল আর নদীর ঘাটের দিকে। দেখতে দেখতে জনস্রোত। অসহায় নারী পুরুষের মিছিল। যারা দৌড়াতে পারেনি, মরে পড়ে আছে বাড়ির উঠানে, ঘরে। কোন দিন কোন জাতিসংঘ এ সবের খোঁজ রাখে না। একটা দল রাতের অন্ধকারে ধান ক্ষেতের আল বেয়ে বেয়ে চলেছে- কেউ হোঁচট খেয়ে পড়ছে।
বাড়িঘরে আগুন দেয়া শুরু করলো আরেক দল। অনেক লাশ পড়ে আছে তাদের সামনে। পায়ের নিচে পড়ছে। যার প্রাণ বায়ু এখনো আছে সে কাতরাচ্ছে পানি পানি করে।
হারেস উদ্দিন তারেকের দাদী, তাহমিনা আর তারেককে নিয়ে নদীর ঘাটে দৌড়াতে লাগালেও পেছনে পড়ে গুলি খেয়ে পড়ে রয়েছে তার বাবা। না, পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তাহমিনার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে কয়েকজন নারীর সঙ্গে তাকে ধরে নিয়ে গেছে হায়েনার দল।
না এরপর আর ভাবতে পারছে না হারেস উদ্দিন।
: হায় আল্লাহ। এও কপালে ছিল!
ওদিকে হাউ মাউ করে কেঁদে চলেছে তাহমিনা ও তারেক। আর সামনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ। কোথাও আশ্রয় মিলবে না। বেঘোরে মৃত্যু তা একমাত্র আল্লাই জানেন, আর জানে ভবিতব্য।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ