মাগো তুমি কেমন আছো    -সাদিকুল ইসলাম

মাগো তুমি কেমন আছো -সাদিকুল ইসলাম

তোমাদের গল্প ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোজ সকালে টিনশেড বাজানোর শব্দে ঘুম ভাঙে কালুর। এই কাইল্লা অহনো উডোস নাই। প্রত্যেক দিন তুরে ঘুম থেইক্যা ডাহন লাগে কেরে, তুর আইজক্যা একদম শ্যাস কইরা ফালামু। ওস্তাদের কথায় অনেকটটা ভূমিকম্প থেকে বাঁচার মতো ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে ওঠে। তাড়াতাড়ি চোখ কচলাতে কচলাতে ভেতর থেকে তালাটা খুলে শেডটা উঁচু করে দেয়। মুহূর্তেই গালে থপাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় কার মালিক। অমনি মাটিতে ঘুরে পড়ে যায় কালু। রক্তের মতো টুকটুকে ছোট চোখ দুটো দিয়ে অশ্রুর ঝরনা নামে তার। যা এখনই মুখ ধুইয়া সবকিছু পরিষ্কার করে নে। তোকে এক কথা দুইবার কওন লাগে ক্যা। জি ওস্তাদ যাইতাছি, দম নিতে নিতে বলে কালু। সবকিছু পরিষ্কার করে যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে নামায়। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা গাড়ি আসে।
গাড়ি থেকে একজন ভদ্রলোক নামেন। তারপর ওর ওস্তাদের সাথে কী যেন আলাপ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক পড়ে কালুর। এই কালু হুন তুই গাড়ির নিচের নাটগুলান দশ মিনিটের মধ্যে খুলবি। নইলে কিন্তু খবর আছে। কালু গাড়ির নিচে উল্টা করে শুয়ে পড়ে। তারপর একে একে খুলতে থাকে সেগুলো। ভাবে সেও বড় হয়ে একজন ভালো মিস্ত্রি হবে। কিন্তু ওস্তাদের মতো না। ভুল করলে ওস্তাদ শুধু বকা দেয়।
-“এই কালু, কী খবর? অইচে?”, “জি ওস্তাদ অইচে”। কই দেহি সর, কালু নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে বেরিয়ে তার মতো কজনকে একসঙ্গে খেলা করতে দেখে। ওরা সবাই ওর পাশে গ্যারেজের কাছের একটা স্কুলে পড়াশোনা করে। মনে মনে ভাবে সেও যদি ওদের মতো পড়তে, খেলতে পারত। এসব ভাবতে ভাবতে একটা গাছের সঙ্গে হেলান দেয় সে। ঠিক তখনই ওস্তাদ গাড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। এই কাইল্লা কিরে গাছের লগে হেলান দিয়া কী করছ? যা মোটর সাইকেলটা ওয়াশ কর। কালু আর একটুও দেরি করে না। দৌড়ে গিয়ে ওস্তাদের হুকুম মতো কাজ করতে আরম্ভ করে। ঠিক এভাবেই সারাদিন হুকুম বকুনি শুনে কালুর দিন কাটে।
বেশির ভাগ রাত দশটা-বারোটা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে। তারপর ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেহটা একটু বিশ্রাম খোঁজে। গ্যারেজের ভেতরেই সামান্য একটু জায়গা গরম আর পেট্রলের দুর্গন্ধ। আর তাতেই ছেঁড়া একটা মাদুর পেতে ময়লা কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কলিম। কালুর আসল নাম। সারারাত গরমে ছটফট করতে থাকে সে। আর শেষরাতে একটু ঘুমায়। আর সে সময় ওস্তাদের ডাক শুরু হয়। আর তারপর, নতুন আরেকটি দিন। আজ ঘুমাতে গিয়ে মাকে খুব মনে পড়ছে তার। কতদিন হলো মাকে দেখছে না। না জানি, মা কেমন আছে। ওস্তাদের কাছে বারবার বললেও মায়ের কাছে একটু ফোন ধরিয়ে দেয় না। বলে মায়ের সঙ্গে কথা বললে নাকি তার কাছে আর থাকতে পারব না। সারাদিনই নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় মাকে কিছুটা ভুলে থাকা গেলেও, রাতের একাকিত্ব তাকে পোড়ায়। মাকে জড়িয়ে ঘুমানোর কথা মনে পড়ে তার। তখন মাথা ধরে। সহজেই দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে।
ওপরে চোখ ফেলতেই টিনের চালার ফাঁক দিয়ে চোখ চলে যায় জ্বলজ্বলে চাঁদের দিকে, তখন তার কচি কণ্ঠ দিয়ে উচ্চারিত হয় মাগো তুমি কেমন আছো? হ
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ