মহাশূন্যে দুর্ঘটনা

মহাশূন্যে দুর্ঘটনা

সাইন্স ফিকশন মাহমুদ শরীফ অক্টোবর ২০২৩

উনিশ হাজার এক সালের ২৯ জুন। নিজের শয়নকক্ষে গভীর ঘুমে অচেতন বিশ^খ্যাত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক। দুপুরের খাওয়া শেষে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘুমান তিনি। ঘুম ভাঙতে এখনও ২৫ মিনিট বাকি। তবুও তার নিজ হাতে তৈরি লেটেস্ট প্রযুক্তির বুদ্ধিসম্পন্ন রোবট কিন এসে ডাক দেয়-

স্যার! উঠুন, জল্দি উঠুন! মহাশূন্যে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিদিন রোবট কিন-ই তাকে বিকেল ৫টার সময় ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। মি. হাসান আশফাক ২৫ মিনিট পূর্বে ঘুম ভাঙানোর জন্য রোবট কিন-এর দিকে বড় বড় চোখে রাগের ভঙ্গিমায় তাকালেন। বকা দেওয়ার আগেই রোবট কিন রিমোট এগিয়ে দেয়। মি. হাসান আশফাক জিজ্ঞাসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রোবটের দিকে। রোবট কিন জানায়, কিছুক্ষণ পূর্বে মহাশূন্যে নভোযান দুর্ঘটনা ঘটেছে। মি. হাসান আশফাক দ্রুত রিমোট টিপে ঘরের দেয়ালসম কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রাখেন। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠে দুর্ঘটনার সংবাদ।

-এখন থেকে ছয় মিনিট পূর্বে পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহে চলাচলকারী দু’টি ইন্টারসিটি নভোযানের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দু’টি নভোযানই সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। মঙ্গল গ্রহ ও পৃথিবীর মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশগুলো মহাশূন্যের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। উদ্ধারকারী নভোযান ‘ডব্লিউ টি-১০১’ ইতোমধ্যেই দুর্ঘটনা স্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। নভো-ক্যাপসুলে আমাদের বিশেষ রিপোর্টার আহসান বুলবুলও মহাশূন্যের পথে রয়েছেন। সর্বশেষ আপডেট জানানোর জন্য ‘চ্যানেল নিউজ ব্যাংক ২৪ ডটকম’ আপনাদের সাথে আছে-।

বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক আর শুনতে পারেন না। কম্পিউটারে আর রাখতে পারেন না চোখ। স্ত্রীকে ডাক দেন। ছুটে আসেন লিজা আরিফা। স্বামীর মুখে বিস্তারিত শুনে তিনিও স্থির থাকতে পারেন না। হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন। আর কান্না-ই স্বাভাবিক, তাদের একমাত্র ছেলে রুমী মুনজারের আজ মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে ফেরার কথা। রুমী মঙ্গল গ্রহের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘ইউনিভার্সিটি অব মঙ্গল’এর শেষ বর্ষের ছাত্র। দু’মাস হলো বাড়ি আসা হয়নি। গতকাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ পৃথিবীর বাড়িতে ফেরার কথা।

মি. হাসান আশফাক স্ত্রীকে সান্ত¡না দেওয়ার ভাষা খুঁজে পান না। তার চোখেও পানি এসে গেছে। একমাত্র ছেলে রুমী তাহলে কি নভোযান দুর্ঘটনায় মারা গেল! এটা ভাবতেও পারছেন না বিজ্ঞানী দম্পতি। মি. হাসান আশফাক আবার কম্পিউটার অন করলেন। একই সংবাদ পুনরায় পাঠ করা হলো। সাথে সাথে এবার বিশাল দু’টি নভোযানের দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজও দেখানো হলো চমৎকার ভাবে। নভোযান দু’টির মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট আগুনের কুণ্ডলী আর চূর্ণবিচূর্ণের দৃশ্য দেখে রুমীর মা আর স্থির থাকতে পারলেন না। জ্ঞান হারালেন তিনি। মি. হাসান আশফাক শক্ত করলেন নিজেকে। পারিবারিক চিকিৎসক ডা. মিনহাজ আবেদীনকে মোবাইলে ভয়েস কল পাঠিয়ে আবার কম্পিউটারের দিকে নজর দেন। এবার দু’টি নভোযানের ধ্বংস হওয়া খণ্ড-বিখণ্ড অংশ আর শত শত মানুষের ক্ষতবিক্ষত লাশ মহাশূন্যে ভাসতে দেখা গেল। মনে হচ্ছে যেন বাতাসে তুলো উড়ছে।

পৃথিবী আর মঙ্গলগ্রহবাসীদের মাঝে দুর্ঘটনার খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যে সব পরিবারের কেউ না কেউ আজ মঙ্গল থেকে ফিরে আসা কিংবা পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাওয়ার কথা ছিল, সে সব পরিবারে পড়ে গেছে কান্নার রোল। সকলের দৃষ্টি এখন মিডিয়ার দিকে। সবাই কম্পিউটার, মোবাইল, টিভি কিংবা নব উদ্ভাবিত যোগাযোগ মাধ্যম ‘ই-নেট চয়েস’ ব্রাউজিং করে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডা. মিনহাজ উপস্থিত। মি. হাসান আশফাক ডাক্তারকে স্ত্রীর জ্ঞান হারানোর বিস্তারিত জানিয়ে দ্রুত চিকিৎসার অনুরোধ করলেন। একমাত্র ছেলের জন্য তার মনেও বিন্দুমাত্র স্বস্তি নেই। নভোযান দুর্ঘটনায় যদি তার ছেলে মারা যায়, তাহলে নিজের সকল আশা-ভরসা শেষ হয়ে যাবে। ডা. মিনহাজকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন মি. হাসান আশফাক। ডা. মিনহাজ সান্ত¡না দিতে দিতে বললেন-

: আশফাক সাহেব, আপনি শান্ত হোন, এত ভেঙে পড়বেন না। ছেলে মারা গেল কি-না আগে সেটা শিওর হওয়া দরকার। ধৈর্য ধরুন। আর রুমীর মৃত্যু যদি এই দুর্ঘটনায় লেখাই থাকে, তাহলে কে ঠেকাবে বলুন? আপনার ছেলের হায়াত যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আপনার আমার কিছুই করার নেই। সবই তকদির! আপনি একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, আপনার দ্বারা কোনো কিছু শিওর না হয়ে এমনটি করা মোটেও সাজে না। আপনি তো আপনার বিখ্যাত ‘থিসিস অফ ইউটার্ন‘ গ্রন্থের ভূমিকাতে লিখেছেন- কোনো কিছুর শেষ না দেখে, শেষ পর্যন্ত না জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। তাই বলছি- ধৈর্য ধরুন, ধৈর্যশীলকে মহান আল্লাহ পছন্দ করেন।

এতক্ষণে মি. হাসান আশফাকের বোধ ফিরে এলো। তাই তো, তার এমন আচরণ করা মোটেও শোভনীয় নয়। আগে শিওর হতে হবে, ছেলে রুমী মারা গেল কি না? ইতোমধ্যেই কয়েকজন প্রতিবেশীও এসে হাজির। ডাক্তারের সাথে প্রতিবেশী মহিলারাও স্ত্রী লিজার সেবা শুশ্রƒষায় অংশ নেয়।

মি. হাসান আশফাক পুনরায় কল করলেন ছেলের নাম্বারে। না! কোন সাড়া নেই। যেন নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। তার দু’গাল বেয়ে দরদর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মি. হাসান আশফাকের দৃঢ় বিশ্বাস, ছেলের মোবাইলও ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই জন্যই নেটওয়ার্ক নেই। রুমী আর বেঁচে নেই! মহাশূন্যে ছেলের মৃত দেহ ভাসছে। ২-৩ মাস ধরে লাশ বাতাসে ভাসতে ভাসতে এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। মহাশূন্যে ঘুরবে আত্মা। কবরও জুটবে না একমাত্র সন্তানের। কী নির্মম পরিহাস!

ইতোমধ্যেই স্ত্রী লিজার জ্ঞান ফিরে এসেছে। রোবট কিন বললো: ধন্যবাদ ডাক্তার আপনাকে! অ-নে-ক ধন্যবাদ।

বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক আবার কম্পিউটার অন করলেন। পরিবর্তন করলেন চ্যানেল। এবার পূর্বের সেই সংবাদ- তথ্য ছাড়াও নতুন করে দুর্ঘটনা কবলিত নভোযান দুটোর নাম্বার জানানো হলো। বলা হলো- নভোযান ‘এইচ ভি-০০৯’ মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে এবং ‘এম জেড-৫০’ পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাচ্ছিলো। আরো বলা হলো- নভোযান ‘এইচ ভি-০০৯’ রাডার সংকেত মিস করে নির্দিষ্ট পথে চলতে অসুবিধায় পড়ে। শেষে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা ‘এম জেড-৫০’-এর সামনে আঘাত হানে। প্রাথমিকভাবে এই দুর্ঘটনার জন্য ‘এইচ ভি-০০৯’-কেই দায়ী করা হচ্ছে।

মি. হাসান আশফাক সাথে সাথে মঙ্গল গ্রহে অবস্থিত নভোযান ‘এইচ ভি-০০৯’-এর সদর দফতরে কল করলেন রুমী মুনজার নামে কোনো যাত্রী ছিল কিনা জানার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ কল। কিছুতেই লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচণ্ড বিজি সবগুলো হটলাইন। 

শোকের নীল ছায়া পাহাড় ঘিরে ফেললো সারা বাড়ি। রোবট কিনও খ্যান খ্যান করে কাঁদছে। স্বামী-স্ত্রীর কান্না থামানোর ভাষা কারোর জানা নেই। প্রতিবেশীরা বুঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ। আর কিভাবেই বুঝাবেন! রুমী তাদের একমাত্র সন্তান। বিয়ের বিশ বছর পর মঙ্গলগ্রহের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইকো হাসপাতালে’ দীর্ঘ ছয় বছর চিকিৎসা গ্রহণের পর এই রুমী তাদের অন্ধের যষ্টি হিসেবে এসেছিল। মি. হাসান আশফাক দম্পতি ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ বানানোর জন্য সৌরজগতের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘ইউনিভার্সিটি অব মঙ্গলে’ ভর্তি করিয়েছিলেন। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাদের। অথচ সেই স্বপ্ন এভাবে শেষ হয়ে যাবে সেটা ভাবতেও পারছেন না। জীবনে এতো বড় শক তারা পাননি। ডা. মিনহাজ চলে গেলেন অন্য রোগীর ফোন পেয়ে। রোবট কিন গেট বন্ধ করে দিল।

প্রতিবেশীরা সকলেই বিজ্ঞানী দম্পতিকে ঘিরে বসে আছেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন সবার। স্বামী-স্ত্রীকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা তাদের। 

বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক পুনরায় কল করলেন নভোযানের সদর দফতরে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ। বিজি লাইন। ছেলের মোবাইলেও সাড়া নেই। সুইচ অফ রিপ্লাই আসছে। সবাই নিশ্চিত হয়ে বসে আছে রুমী আর নেই। দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করেছে কেউ কেউ। মহাশূন্যে নভোযান দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এটা ভাবতেই বুক ফেটে যাচ্ছে সবার।

স্ত্রীর দিকে তাকালেন বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক। স্ত্রী লিজা কাঁদতে কাঁদতে বললো: হ্যাঁ গো, একি হয়ে গেল! আমার বুকের মানিক কোথায়? আমার রুমীকে এনে দাও, এনে দাও...।

স্ত্রীকে পাগলিনীর মতো বিলাপ করতে দেখে বিজ্ঞানী আশফাকেরও  ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। হু হু শব্দে কেঁদে উঠলেন তিনি। উপস্থিত প্রতিবেশীদেরও চোখের কোণে অশ্রু চিক চিক করে ওঠে। রোবট কিন পূর্বের স্বরে কাঁদতে থাকে। সমগ্র ঘরজুড়ে কান্নার অশান্ত রোল পড়ে যায়। চোখের জলে বুক ভেসে যায় সবার। সান্ত¡নার ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না।

এমন সময় বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক সাহেবের উন্নত প্রযুক্তির মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে। রোবট কিন চিৎকার করে জানান দেয়- রুমীর কল! রুমীর কল!!

বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় ফোনের ইয়েস বাটনে চাপ দেন। রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে মোবাইলের স্ক্রিনে ফুটে ওঠে ছেলে রুমীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ফোন কানে ধরতেই শোনা যায় ছেলের কণ্ঠস্বর-

: আসসালামু আলাইকুম! হ্যালো আব্বু কেমন আছো তোমরা? আম্মু ভালো আছে তো? তোমার জ¦রটা কী কমেছে আব্বু? আম্মু -

রোবট কিন চিৎকার করে জানায়- রুমী সোনা বেঁচে আছে! কথা বলছে।

রুমী বেঁচে আছে! ও মরেনি! মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দের বন্যা বয়ে যায় সকলের মুখমণ্ডলে। এবার আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক। দু’চোখ থেকে দরদর করে ঝরতে থাকে আনন্দ অশ্রু। সবার মুখে ফুটে উঠে হাসির ঝিলিক। মোবাইলটা স্ত্রীর হাতে ধরিয়ে দেন তিনি। কোটি কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন মহান আল্লাহর দরবারে। 

মোবাইলের স্ক্রিনে পাগলিনীর মতো বারবার চুমো দেয় রুমীর মা লিজা আরিফা। বেশ কিছুক্ষণ মা ও ছেলের মধ্যে হয় কথোপকথন। মায়ের মুখেও হাসির আভা ফুটে ওঠে। স্ত্রীর হাত থেকে মোবাইলটা ছোঁ দিয়ে কেড়ে নেয় বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক। বলেন- কোথায় ছিলি বাপ? আমরা তো ভেবেছিলাম তুই আর বেঁচে নেই! নভোযান দুর্ঘটনায় মারা গেছিস। আজ না তোর বাড়ি ফেরার কথা ছিল?

রুমী বলে: হ্যাঁ আব্বু! ফেরার কথা ছিল ঠিকই! কিন্তু আমার রুমমেট সাইম সকালে বললো, চল আমার তিন আসন বিশিষ্ট মিনি কনকর্ড নভোযান ‘লাইট-০০৭’ নিয়ে বৃহস্পতি গ্রহে একটু ঘুরে আসি। বহুদিন বৃহস্পতি গ্রহে বেড়াতে যাওয়া হয়নি! তাই ওর সাথে বৃহস্পতি গ্রহে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক চরম স্লো, সে কারণে তোমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। এইমাত্র আমরা বৃহস্পতি থেকে মঙ্গলে এসে পৌঁছালাম। এসেই শুনি নভোযান দুর্ঘটনার সংবাদ। তোমার দেওয়া মিস কলের অ্যালার্টও পেয়েছি। তাই ফ্রেশ হওয়ার আগেই ফোন করলাম।

বিজ্ঞানী মি. হাসান আশফাক গাম্ভীর্যের সাথে বললেন- বুঝলাম! ভালো কথা, কিন্তু বৃহস্পতিতে যাওয়ার আগে আমাদের একটা মেসেজ দিতে পারতিস। তাহলে এত টেনশন হতো না।

: স্যরি আব্বু! বিরাট ভুল হয়ে গেছে! এমন ভুল আর হবে না। জানো আব্বু! তুমি বৃহস্পতি গ্রহে আমাদের ফ্ল্যাটের জন্য যে জমিটা কিনেছো, সেটা ঘুরে ঘুরে আমার রুমমেট সাইমকে দেখিয়েছি। ও খু-উ-ব খুশি হয়েছে। আর ওখানকার বাগান পাহারাদার রোবট জিনিং-এর ব্যাটারি শেষের দিকে। ওর জন্য এবার অটো সানচার্জ ব্যাটারি লাগাতে হবে। আরো কী জানো- তোমার নিজ হাতে লাগানো সেই ড্রাগন আর ক্যাটসিয়া ফ্রুটের পাতায় পাতায় ফুল এসেছে। ফলন শতভাগ হবেই! আবার গেলে ফল তুলে আনতে পারবো। কী আব্বু! কথা বলছো না কেন? 

মি. হাসান আশফাক রাগত স্বরে বললেন- ড্রাগন আর ক্যাটসিয়া ফ্রুটের স্বাদ পরে হবে, তুই বিকেলের নভোসিটিতেই ফিরে আয়। আমাকে না জানিয়ে বৃহস্পতি গ্রহে যাওয়ার পুরস্কারটা আগে নিবি তো! হ্যাঁ, আজ রাত সাড়ে নয়টার মধ্যেই তোকে বাড়ি দেখতে চাই। ডিনার এক সাথে করবো।

স্ত্রীর কাছে মোবাইল ফিরিয়ে দিলেন তিনি। মা বললেন- হ্যাঁ বাবা! রাত সাড়ে দশটার মধ্যেই ফিরবি। তোর বাপ যে রাগী! জানিস তো! আর আমার হার্টের ব্যথাও বেড়েছে। দেরি করিস না বাজান। এক্ষুনি টিকিট কনফার্ম করে নে।

ও পাশ থেকে রুমী জানায়, ঠিক আছে আম্মু! এখন রাখছি, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করেই সব গুছিয়ে নিচ্ছি। রাত এগারোটার আগেই তোমাদের সাথে মিলিত হবো ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ হাফেজ! মাও বললেন- আল্লাহ হাফেজ! লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে গেল।

লাইন কেটে দেওয়ার পর মি. হাসান আশফাক মনে মনে বললেন- ডা. মিনহাজের কথাই ঠিক, কোন কিছুর শেষ না জেনে হাহুতাশ করা কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। মোটেও ঠিক নয়!

প্রতিবেশীরা নিজ নিজ বাসায় ফিরে চললো। ছেলে বেঁচে আছে খবরটা বন্ধু ডা. মিনহাজকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন বিজ্ঞানী। রোবট কিন খিল খিল শব্দে হেসে উঠলো আর বললো- কী আজব ব্যাপার! একটু ভুলের জন্য কী কাণ্ডই ঘটে গেল। আমি ব্যর্থ! আসল সত্য তথ্য জানাতে আমিই ব্যর্থ! তোমরা আমাকে প্রযুক্তিতে আরো উন্নত করো, আপডেট করো, আপডেট করো!

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ