মহামায়ার মায়ায়

মহামায়ার মায়ায়

ভ্রমণ আজহার মাহমুদ ডিসেম্বর ২০২৩

সময়টা ছিলো ২০২৩ সালের শুরুর দিকে। শীতের একটা আবহ ছিলো। কিন্তু শীত শেষ শেষ অবস্থা। পরিবেশ এবং আবহাওয়া ছিলো চমৎকার। আমাদের পাঁচ বন্ধুর এবারের ভ্রমণ স্পট ছিলো মিরসরাইয়ের মহামায়ায়। যেহেতু মহামায়ায় যাচ্ছি তাই বন্ধু মুন্না তার বাড়িতেও আতিথেয়তা দিলো। কবির, নাহিদ, আবেদ, মুন্না এবং আমি। আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে চট্টগ্রামের একেখান থেকে সরাসরি একদিন আগে সন্ধ্যায় রওনা দিলাম মিরসরাইয়ের দিকে। কারণ বন্ধু মুন্নার বাড়িতেও দাওয়াত। যাইহোক আমরা একেখান থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে বাসে উঠলাম। নামলাম মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজের সামনে। বলে রাখা ভালো মহামায়ার সামনে নামলেও ভাড়া একই নিবে বাসে।

আমরা আপাতত মুন্নার বাড়িতে যাচ্ছি। মিরসরাইয়ের পদুয়া বাজার নামলাম। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে বন্ধু বাড়িতে এসে পৌঁছালাম। সেখানে রাত পার করে পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা গেলাম মহামায়া লেকে। আমরা মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘির পাড়ের ঠিক উল্টো পাশে আসলাম। সেখান থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকা দিয়ে সিএনজিতে করে চলে আসলাম মহামায়া ইকো পার্কের গেটে। আপনি চাইলে হেঁটে যেতে পারেন। এবার গেট থেকে টিকেট কাটার পালা। জনপ্রতি টিকিট পড়বে ৩০ টাকা। এই লেকে এসেই মায়ায় পড়ে গিয়েছি। চারদিকের সবুজের সমারোহ আপনাকে মুগ্ধ করে তোলবে। আপনি এক স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভব করবেন। আশপাশে মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ের দেখা মিলবে। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মহামায়া লেকে যাওয়ার রাস্তাটি। এই রাস্তা ধরে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন কাক্সিক্ষত মহামায়া লেকে। এই লেকের সৌন্দর্য সম্পর্কে লিখে প্রকাশ করা যাবে না। চোখে না দেখা পর্যন্ত এর সৌন্দর্য বুঝা মুশকিল। এই লেকে আছে কায়াকিং করার সুবিধা। আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে কায়কিং করলাম। আমার জীবনের সেরা একটা মুহূর্ত ছিলো এটি।

সবমিলিয়ে এই লেকের চারপাশের পরিবেশ ছিলো অসম্ভব সুন্দর। হালকা সবুজাভ স্বচ্ছ পানি, পানির ওপর চারদিকের সবুজ পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি, অসাধারণ প্রতিটি দৃশ্য। আপনি চাইলে তাঁবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন এখানে। এক্ষেত্রে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। লেকের পাড়ের নির্মল আর বিশুদ্ধ বাতাস আপনার শরীর ও মনকে মুহূর্তেই সতেজ করে তুলবে।

এভাবে চারপাশ ঘুরে-বেড়ানোর সময় দেখা মিলল প্রকৃতির নানান দৃশ্য আর বিভিন্ন প্রাণীর। প্রকৃতির সাথে নিজের কিছু স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রাখলাম। এরপর ফেরার পালা। ফিরলাম বন্ধুর বাড়িতে। সেখানে আরেক দফা খাবারের টর্চার সহ্য করলাম। এরপর পাঁচ বন্ধু মিলে বন্ধুর পরিবারকে বিদায় জানিয়ে ফিরলাম মিরসরাই থেকে। ফেরার সময় মনে হলো, বন্ধুর পরিবারটাকে মিস করছি খুব। এমন আতিথেয়তা জীবনে ভোলার মতো নয়। একইসাথে মহামায়ার মায়া তো আছেই।


যেভাবে যাবেন

আপনি যে জায়গা থেকেই আসেন না কেন আপনাকে মিরসরাই এর ঠাকুরদীঘি বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত মহামায়া লেক। ঠাকুরদীঘি থেকে জন প্রতি ১৫-২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন মহামায়া ইকোপার্ক এর মেইন গেটে। 


মহামায়ার খরচাপাতি

মহামায়া ইকো পার্কে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা দিতে হয়। লেকে কায়াকিং করার সুবিধা আছে। একটা কায়াকে দুইজন এবং তিনজন বসতে পারবেন। প্রতি ঘণ্টার কায়াকিং ভাড়া ৩০০ টাকা, ৩০ মিনিটের জন্য ভাড়া ২০০ টাকা। শিক্ষার্থী হলে ডিসকাউন্ট পাবেন সেক্ষেত্রে এক ঘণ্টার জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা এবং ৩০ মিনিটের জন্য ১৫০ টাকা। কায়াকিং করা যায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫:৩০ পর্যন্ত যেকোনো সময়। এছাড়াও লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ইঞ্জিন বোট আছে। ৮-১০ জন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম নৌকা এক ঘণ্টা ঘুরিয়ে দেখাবে আশপাশে ঝরনাসহ ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা। ১৫-২০ জন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে এক ঘণ্টার জন্য লাগবে ১২০০-১৫০০ টাকা।


খাওয়া দাওয়া

পার্কে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা নেই। নিজ থেকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। ঠাকুরদীঘি বাজারে ছোট হোটেল আছে দেশী খাবার খেতে পারবেন। মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড বাজারে গেলে মোটামুটি মানের আরো কিছু খাওয়ার হোটেল পাবেন সেখান থেকে খেয়ে নিতে পারবেন। 


থাকবেন কোথায়?

মিরসরাই এ থাকার মতো তেমন ভালো কোন আবাসিক হোটেল নেই। থাকতে চাইলে মিরসরাই এর কাছে সীতাকুণ্ডে কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে সেখানে থাকতে পারবেন। তবে আরো ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যাওয়াই উত্তম। মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম যেতে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো লাগবে। চট্টগ্রামের একেখান-অলঙ্কার এলাকায় ভালো মানের      থাকার মতো হোটেল পাবেন। অথবা চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এর স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল আছে, পছন্দ মতো কোনো এক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারেন।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ