মঙ্গলের বুকে হেলিকপ্টার

মঙ্গলের বুকে হেলিকপ্টার

বিজ্ঞান আরিফুর রহমান জানুয়ারি ২০২৪

মঙ্গলের মাটিতে নাসা একের পর এক বিস্ময় গড়ে চলেছে। সম্প্রতি মঙ্গলের আকাশে ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার দীর্ঘতম পথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়েছে। মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলে হেলিকপ্টার ওড়া অসম্ভব হলেও নাসা সেই কাজটি সম্ভব করেছে।

ইনজেনুইটি মূলত একটি আকাশযান। যানটিকে তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণের সময় এটি মাধ্যাকর্ষণ বল ও কম্পন সহ্য করতে পারে। এটিতে তেজষ্ক্রিয়তা-প্রতিরোধী ব্যবস্থা রয়েছে, যেটি মঙ্গলগ্রহের অত্যন্ত শীতল আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে সক্ষম।

এতে রয়েছে একটি হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা এবং পার্সিভিয়ারেন্স রোভারে উপাত্ত সরবরাহ করার জন্য একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা। মঙ্গলগ্রহের চৌম্বকক্ষেত্রের বৈসাদৃশ্যের কারণে সেখানে কম্পাস ব্যবহার করা সম্ভব নয়, এজন্য এটিতে একটি সোলার ট্র্যাকার ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়।

নাসার রোভার সম্প্রতি মঙ্গলগ্রহে ইনজেনুইটি হেলিকপ্টারের পপ-আট ফ্লাইটের ছবি ক্যাপচার করেছে। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে মঙ্গলের আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে। নাসার রোভারের মাস্টক্যাম-জেড ইমেজার দ্বারা আনুমানিক ১৮০ ফুট দূরত্ব থেকে তোলা হয়েছে সেই ভিডিও ছবি।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার তৈরি ক্ষুদ্র চালকবিহীন হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি মঙ্গলগ্রহের বুকে উড্ডয়ন করেছে ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল। ইনজেনুইটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে ৩ মিটার উঁচুতে উড্ডয়ন করে এবং ৩৯.১ সেকেন্ড ভেসে থাকতে সক্ষম হয়। ইনজেনুইটির জন্য এটি একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য বিরাট এক অগ্রগতি।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ১৯৯৩ সালে ‘মার্স এক্সপ্রেশন প্রোগ্রাম’ গ্রহণ করে এবং তখন থেকে এই প্রোগ্রামের অধীনে তারা মঙ্গলগ্রহে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। এদের মধ্যে সর্বশেষ অভিযানটি হচ্ছে ‘মার্স ২০২০’ এবং ইনজেনুইটি হেলিকপ্টারটি এই অভিযানেরই অংশ।

হেলিকপ্টারটি একটি প্রিফ্লাইট ‘উইগল চেক’ করছে। নাসার পারসিভারেন্স মার্স রোভার মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলে ইনজেনুইটি মার্স হেলিকপ্টারের ৫৪ তম ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

মঙ্গলগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, কিন্তু মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের ১০০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। ফলে পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলগ্রহে কোনো আকাশযানের উড্ডয়ন বহুগুণে কঠিন।

এটা ওড়ানোর পর নাসা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এই ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার মঙ্গলে নেভিগেশন সিস্টেমের আরেকটি সফল পরীক্ষা চিহ্নিত করেছে। তারপর থেকে লাল গ্রহে আরও দুটি ফ্লাইট সম্পন্ন হয়েছে। নাসা মঙ্গলের বুকে এভাবেই হেলিকপ্টার উড়িয়ে এবং রোভার ছুটিয়ে নিত্যনতুন তথ্য সংগ্রহ করছে।

মঙ্গলে এই মাস্টক্যাম-জেড যন্ত্রের ক্রিয়াকলাপগুলো অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে সান দিয়েগোর মালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেম এবং কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিলস বোর ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়েছে।

তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই মিশনে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলোর নকশা, পরীক্ষা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। 

মঙ্গলগ্রহের শিলা ও রেগোলিথ বা ভাঙা শিলা এবং ধুলো সংগ্রহ করছে। ভবিষ্যৎ নাসা এই মিশন ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি বার এসার সহযোগিতায় সিল করা নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের জন্য পৃথিবীতে নিয়ে আসবে। সেজন্য মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা। সেইসঙ্গে নাসা জানিয়েছে, এই উদ্যোগটি নাসার চাঁদ থেকে মঙ্গল অন্বেষণ পদ্ধতির অংশ, যার মধ্যে রয়েছে চাঁদে আর্টেমিস মিশন। আর তা চাঁদের পাশাপাশি মঙ্গলগ্রহে মানুষের অনুসন্ধানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

মঙ্গলগ্রহে কোনো আকাশযানের ভূমি থেকে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হওয়া আর পৃথিবীতে কোনো আকাশযানের ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০,০০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর সমতুল্য। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে কোনো হেলিকপ্টার ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০,০০০ মিটার উঁচুতে উঠতে পারেনি। কিন্তু ইনজেনুইটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য এটি কোনো সাধারণ কৃতিত্ব নয়, বরং মহাকাশ প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি অনন্যসাধারণ অর্জন।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ