বড় হতে হবে   -আবদুল্যাহ্ ইবনে সাজিদ

বড় হতে হবে -আবদুল্যাহ্ ইবনে সাজিদ

তোমাদের গল্প এপ্রিল ২০১৮

৪৯ বার চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও আমার চাকরি হয়নি। ৫০ বারের সময় আর কোন ইন্টারভিউয়ের জন্য আবেদন করিনি।
আমি তাহমিদ। ডিগ্রি পাস করার পরও এখনো বেকার। কোন চাকরি আমার কপালে নেই।
শেষমেশ ঢাকা শহরের একটা বড় হোটেলে থালা-বাসন ধৌত করার জন্য একটা চাকরি পেলাম। আমার ভাগ্যে তো আর বড় চাকরি নেই তাই এই ছোট্ট কাজটা দিয়েই শুরু করলাম। আমার মাইনে ছিল থাকা-খাওয়াসহ মাত্র ৫০ টাকা।
সপ্তাহের সাত দিন-ই আমার কাজ ছিল। কলেজে পড়ার সময় আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন- ‘জীবনে বিজয়ী হতে চাইলে কাজের মাধ্যমে হও, বিতর্কে নয়।’ তাই সব সময় মনোযোগ সহকারে কাজ করতাম।
মাসখানেক যাওয়ার পর আমার কাজের পাশাপাশি, হোটেলে যখন আগত কাস্টমারের সংখ্যা বেশি হতো তখন সবাই খুব ব্যস্ত থাকতো। তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য আমিও আগত অতিথিদের খাবার পরিবেশন করতাম। এতে দোকানের মালিক আমার ওপর অনেক খুশি হতেন।
চাকরির বয়স যখন এক বছর, তখন আমি দোকানের সব কাজই করতাম এবং মালিকের খুব বিশ্বস্ত কর্মচারী হয়ে উঠলাম।
চাকরির বয়স যখন ৫ বছর তখন, মালিকের পাশাপাশি দোকানের সকল কাজের তদারকি আমাকেই করতে হতো।
চাকরির বয়স যখন ৭ বছর, তখন পুরো হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। মালিক শুধু প্রত্যেক মাসের হিসেবটুকু নিতেন। কখনো নিতেনও না। অগাধ বিশ্বাস ছিল আমার ওপর। কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি তার।
চাকরির বয়স যখন ৯ বছর, তখন আমার মালিক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়। তার কোন সন্তান বা আত্মীয় স্বজন না থাকাতে, তিনি তার পুরো সম্পত্তি আমার নামে উইল করে দেন। মাস দুয়েক পরেই তিনি মারা যান।
ওনার দেওয়া সম্পদ নিজের না মনে করে, ওনার রেখে যাওয়া আমানত মনে করে কাজ করতাম।
চাকরির বয়স যখন ১৩ বছর, তার রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানকে অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করি।
চাকরির বয়স যখন ১৫ বছর, তখন পুরো ঢাকা শহরের মধ্যে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয় আমার মালিকের রেখে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠান।
এরপর ক্রমশ আমার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আজ চাকরির বিশ বছর। এখন আমি দেশের সেরা ব্যবসায়িক ব্যক্তির মধ্যে একজন। এখন আমার কোটি কোটি টাকা আর অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান।
এখন আর আমি কারো কাছে চাকরির ইন্টারভিউ নিয়ে যাই না বরং সবাই আমার কাছে চাকরির জন্য আসে। কারণ একটাই, আমি ছোট থেকে শুরু করে আজ এত বড় হয়েছি। পৃথিবীর সবাই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বড় হতে গিয়ে তারা শুধু বড় কাজগুলোকেই প্রাধান্য দেয়। ছোট কাজগুলো করে না। যার কারণে তারা সবসময় ছোট থেকে যায়।
তাই আপনাদেরকে বলবো- আপনারা ছোট কাজগুলোকে ছোট মনে না করে কাজ করা শুরু করুন। হয়তো এই ছোট কাজটার মধ্যেই আপনার বড় হওয়ার স্বপ্নটা লুকিয়ে আছে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ