বৈচিত্র্যে ভরা রাসূলের দেশ

বৈচিত্র্যে ভরা রাসূলের দেশ

ফিচার মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী সেপ্টেম্বর ২০২৩

আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি। তুমি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাস? নিশ্চয়ই বলবে মা-বাবাকে। তোমার মতো অন্য শিশু-কিশোররাও একই কথাই বলবে। তেমনি বাবা-মাকে প্রশ্ন করলে তারাও বলবেন, সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু তোমরা কি জানো আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে কাকে? চলো রাসূলের হাদিস থেকে উত্তরটা জেনে নেওয়া যাক।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র হই। সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৪

এবার বলো তো আমাদের কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সা)-কে। আর এই ভালোবাসা শুধু মুখে বললেই হবে না, কাজে প্রমাণ করতে হবে। কাজ হলো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু আদেশ করেছেন তা মেনে চলতে হবে এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এজন্য আমরা রাসূলুল্লাহর সিরাত অধ্যয়ন করবো এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবন পরিচালনা করবো। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আমরা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নিবো-


মক্কা নগরী : ইসলামের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান, এটিকে উম্মুল কুরা তথা মূল জনপদ বলা হয়। এখানেই জন্মগ্রহণ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ হজ, উমরাহ পালন করার জন্য এখানে আসে। তোমরা আশা রাখতে পারো, আল্লাহ যেন বায়তুল্লাহ জিয়ারতের তাওফিক দান করেন। এই নগরীতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনসমূহ রয়েছে।


কা’বা শরিফ : পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্মিত প্রথম ঘর। এটিই মুসলমানদের কিবলা, এর দিকে ফিরে আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়ি।


মসজিদুল হারাম : কাবা ঘরের চারপাশে যে মসজিদটি হয়েছে এটাই মসজিদুল হারাম তথা হারাম শরিফ। এই মসজিদে প্রতি রাকাত নামাজ পড়লে ১ লক্ষ রাকাত নামাজ পড়ার সাওয়াব।

হাজরে আসওয়াদ : কালো পাথর, এটি একটি জান্নাতি পাথর যেটি কা’বা ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। নবুয়তের আগে কা’বা ঘর সংস্কারের সময় এটি স্থাপন করা নিয়ে গোত্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়, কারণ এর সাথে গোত্রের সম্মানের সম্পর্ক ছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচক্ষণতার সাথে এটি সমাধান করেন। আমাদের প্রিয় নবী এই পাথরকে চুমু দিয়েছেন আমরাও সুযোগ পেলে চুমু দেবো ইনশাআল্লাহ। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।


মাকামে ইবরাহিম : এটি সেই পাথর কাবা ঘর নির্মাণের সময় যেটির ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কাজ করেছেন। তাওয়াফ শেষে এর পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়।


জমজম কূপ : এটি কাবা ঘরের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্তমানে মাতাফ সম্প্রসারণ করার কারণে আর দেখা যায় না। মাতাফের নিচে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হয় তবুও এর পানি শেষ হয় না। পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং বরকতময় পানি হলো জমজমের পানি।

এই কূপের সৃষ্টি ইসমাইল (আ.) এর সাথে সম্পৃক্ত।


সাফা-মারওয়া : কাবা ঘরের অনতিদূরে অবস্থিত দুটি পাহাড়। এগুলো আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন। এই দুই পাহাড়ের মাঝে মা হাজিরা (আ.) তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) এর জন্য পানির খোঁজে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। অবশেষে আল্লাহর আদেশে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়। হজ উমরাহর সময় সাফা মারওয়ার মাঝে ৭ বার সায়ী করতে হয়। তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর এই সাফা পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মস্থান : বলা হয়ে থাকে এই স্থানে আমাদের প্রিয় নবী জন্মগ্রহণ করেছেন। এটি কা’বা ঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এবং সাফা পাহাড়ের কাছাকাছি। বর্তমানে এখানে একটা লাইব্রেরি রয়েছে আর সেটার নাম হলো মক্কা লাইব্রেরি।


আল মুয়া’ল্লা কবরস্থান : এটিকে অনেকে জান্নাতুল মুয়া’ল্লা বলে। হারাম শরিফের কাছে অবস্থিত এখানে আম্মাজান খাদিজা (রা.) এবং তাঁর দুই পুত্রের কবর আছে। মক্কায় মৃত্যুবরণকারী অনেক সাহাবির কবর আছে এখানে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদার কবরও এখানে।


হেরা গুহা : জাবালে নূরের চূড়ায় অবস্থিত গুহা হলো হেরা গুহা। এই পাহাড়ের উচ্চতা ৬৪২ মিটার। এই গুহায় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধ্যানমগ্ন থাকতেন। এই কলুষিত সমাজের মুক্তির কথা ভাবতেন। এখানেই সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ হয়। তখনকার সময়ে হেরা গুহা থেকে সরাসরি কাবাঘর দেখা যেত।


সাওর পর্বতের গুহা : কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর নির্দেশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সাওর পর্বতের গুহা হিজরতের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক। হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ এবং আবু বকর (রা.) এই গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু কাফেররা তাঁদেরকে ধরার জন্য সেখানে পৌঁছে গেছিলো এবং সেজন্য আবু বকর (রা.) খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সান্ত¡না দিয়ে বলেছিলেন- চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। কাফেররা গুহার মুখে গিয়ে দেখতে পায় সেখানে মাকড়সা জাল বুনছে আর কবুতরে ডিম পেড়েছে, তাই সেখানে কেউ নেই ভেবে তারা আর ভেতরে প্রবেশ করেনি। এভাবেই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কাফেরদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। গুহায় তিন দিন অবস্থানের পর মদিনায় হিজরত করেন।


আরাফার ময়দান : হজ্জের সময় আরাফায় অবস্থান করা ফরজ। সেখানে রয়েছে জাবালে রহমত, যেটার ওপর দাঁড়িয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছেন। বর্তমানে আরাফায় মসজিদে নামিরা নামক একটি মসজিদ রয়েছে, সেখান থেকে আরাফার খুতবা দেয়া হয়।


মুজদালিফা : আরাফা থেকে হাজীরা মুজদালিফায় চলে যান এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন।


মিনা : আইয়ামে তাশরিকের দিনগুলোতে হাজিরা মিনার তাঁবুতে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে গিয়ে জামরায় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন।


তায়েফ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। দুধমা হালিমার বাড়ি ছিল তায়েফ, সেখানেই রাসূলুল্লাহর শৈশব কেটেছে। নবুয়ত প্রাপ্তির পর তায়েফবাসীকে দাওয়াত দিতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। তবুও তিনি তায়েফবাসীকে অভিশাপ না দিয়ে তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন। যার ফলস্বরূপ তায়েফ সৌদি আরবের অন্যতম সুন্দর এবং সবুজ শ্যামল জায়গা।


মসজিদে কুবা : মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কুবায় আসেন এবং সেখানে ইসলামের প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়লে একটা উমরাহর সাওয়াব পাওয়া যায়। কুবায় ১৪ দিন অবস্থানের পর মদিনায় যান।


মসজিদে নববী : মদিনায় আসার পর আনসারদের সবাই চেয়েছিলেন প্রিয় নবীকে নিজের ঘরে রাখতে। কিন্তু তিনি বলেছিলেন তাঁর উটকে ছেড়ে দিতে কারণ সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ প্রাপ্ত ছিল। সেটি যেখানে বসবে সেখানেই রাসূলুল্লাহর ঘর এবং মসজিদে নববী নির্মিত হবে। অবশেষে বর্তমানে মসজিদে নববী যেখানে আছে সেখানে উটটি বসলো। শুরু হলো মসজিদে নববী তৈরির কাজ। মসজিদ প্রস্তুত হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) এর বাড়িতে অবস্থান করেছেন। এই মসজিদে নববী থেকেই একটা নতুন সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। এখান থেকেই হেদায়তের বাণী পৌঁছে গিয়েছিল সারা পৃথিবীতে।

রওজা মুবারক : মসজিদে নববীর বাম পাশে লাগোয়া কক্ষগুলো ছিল আম্মাজানদের হুজরা। সেখানে আম্মাজান আয়েশা (রা.) এর হুজরায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। রাসূলের কবরের পাশেই রয়েছে আবু বকর (রা.) এবং উমর (রা.) এর কবর। তোমরা আশা রাখতে পারো একদিন রাসূলের রওজায় সালাম জানানোর জন্য মদিনায় আসবে ইনশাআল্লাহ।


বাকিউল গারকাদ : যেটাকে আমরা জান্নাতুল বাকি নামে চিনে থাকি। এটি মদিনার প্রসিদ্ধ কবরস্থান। এটি মসজিদে নববীর বাম পাশে অর্থাৎ পূর্ব দিকে অবস্থিত। এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের সদস্যদের কবর রয়েছে এবং অনেক সাহাবির কবর রয়েছে। হযরত উসমান (রা.) এর কবরও জান্নাতুল বাকিতে। 


মসজিদে কিবলাতাইন : ইসলামের প্রথম কিবলা ছিল মসজিদুল আকসা, যেটি ফিলিস্তিনে অবস্থিত। পরবর্তীতে এই মসজিদে রাসূল (সা) নামাজ পড়া অবস্থায় কিবলা পরিবর্তনের আয়াত নাজিল হয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে আকসার দিক থেকে কাবার দিকে ফিরে যান। 


বদর প্রান্তর : মদিনা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে বদর উপত্যকা অবস্থিত। দ্বিতীয় হিজরিতে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই বদর প্রান্তরে। মাত্র ৩১ জন মুসলমান কুরাইশদের ১০০০ জন অস্ত্রসজ্জিত যোদ্ধার ওপর বিজয়ী হয়েছিল। বাতিলের ওপর হকের বিজয় হয়েছিল এখানে। যুদ্ধে কাফেরদের ৭০ জন নিহত হয় মুসলমানদের ১৪ জন শহীদ হয়। এই যুদ্ধে আসমান থেকে ফেরেস্তা নাজিল হয়ে মুসলমানদের সহযোগিতা করেছিল। বর্তমানে সেখানে শহীদদের কবর রয়েছে এবং যে স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাঁবু ছিল সেখানে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। মসজিদটির নাম হলো মসজিদে আরিশ।


উহুদ প্রান্তর : মসজিদে নববীর অনতি দূরে থেকে সোজা উত্তর দিকে উহুদ পাহাড় অবস্থিত। এটি মদিনার সবচেয়ে বড়ো পাহাড়। এটি একটি জান্নাতি পাহাড়। তৃতীয় হিজরিতে এই পাহাড়ের পাদদেশে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। শুরুতে মুসলমানদের বিজয় দেখা দিলেও তৎকালীন খালিদ বিন ওয়ালিদের রণকৌশলে হেরে যায় মুসলিমরা। জাবালে রোমাতে ৫০ জন তীরন্দাজ সাহাবিকে দাঁড় করিয়েছিলেন রাসূল (সা.)। কিন্তু বিজয়ের আভাস দেখা দিলে তীরন্দাজরা সেখান থেকে সরে যান ফলে খালিদ বিন ওয়ালিদ পেছন থেকে আক্রমণ করে মুসলমানদের পর্যুদস্ত করে দেন। এই যুদ্ধে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত মুবারক শহীদ হয়। তাঁর প্রিয় চাচা হামজা (রা.)- সহ ৭০ জন সাহাবী শাহাদত বরণ করেন। এটি ইসলামের অন্যতম শিক্ষণীয় যুদ্ধ। বর্তমানে সেখানে শহীদদের কবর এবং সাইয়্যিদুশ শুহাদা নামে একটি মসজিদ আছে।


খন্দক : পঞ্চম হিজরিতে সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মদিনা মুনাওয়ারা পাহাড় বেষ্টিত একটি জনপদ। কিন্তু এর একপাশে পাহাড় নেই। সালমান ফারসি (রা.) এর পরামর্শে রাসূল (সা.) সেই খালি জায়গায় গর্ত খনন করে মদিনাকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই খালি দিকটিতে গর্ত খোঁড়া হলো যাতে শত্রুরা মদিনায় প্রবেশ করতে না পারে। এবং রাসূল (সা.) নিজেও গর্ত খনন করেছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় সাহাবিরা সাতটি তাঁবুতে অবস্থান করে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীতে সে স্থানগুলোতে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এই এলাকাটিকে এখন সাবআ মসজিদ অর্থাৎ সাত মসজিদ এলাকাও বলে।


হুদায়বিয়া : ষষ্ঠ হিজরিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে দেখেন তিনি সাহাবিদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করছেন। এতে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন। তাই তিনি সাহাবিদের নিয়ে কোনো প্রকার অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া শুধু ইহরামের কাপড় পরে বায়তুল্লাহ জিয়ারতের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে হুদায়বিয়া নামক জায়গায় এলে কাফেররা বাধা দেয়। তাই উসমান (রা.)-কে সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে কুরাইশদের কাছে পাঠানো হয়। তিনি ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় খবর প্রচার হয় যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ এবং সাহাবিরা একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে উসমান (রা.)-এর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ করেন। অথচ তাঁদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। এই শপথকে বায়াতুর রিদওয়ান বলে। অবশেষে কুরাইশদের সাথে সন্ধি হয়। কিন্তু চাক্ষুষভাবে দেখা যায় সন্ধির প্রতিটি প্রস্তাব মুসলিমদের বিপক্ষে এবং কাফিরদের জন্য সুবিধাজনক। তবুও আল্লাহ এটাকে ফাতহুম মুবিন তথা প্রকাশ্য বিজয় বলেছেন। কারণ এরপর ইসলামের বড়ো বড়ো বিজয় গুলো অর্জিত হয়।


তাবুক : নবম হিজরিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক অভিযান করেন। এটি রাসূলের জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধ। রোমানদের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার সৈন্য সমাবেশ করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। তবুও তাবুক অভিযান ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ এর ফলে মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। যে স্থানে রাসূলুল্লাহর তাঁবু ছিল সেখানে বর্তমানে একটি মসজিদ রয়েছে, সেটির নাম হলো মসজিদুর রাসূল (সা), এটিকে মসজিদুত তাওবাও বলা হয়।


আজ আমরা রাসূল (সা)-এর স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানগুলো সম্পর্কে জানলাম। আরও জানার জন্য আমরা বেশি বেশি করে রাসূলের সিরাত অধ্যয়ন করবো এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবন পরিচালনা করবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ