বিড়াল  -নূর নকীব মণ্ডল

বিড়াল -নূর নকীব মণ্ডল

গল্প সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঘ মামার প্রভাবে বাঘের ভাগিনা পরিচয়ে বিলু বিড়াল কয়েকটি বাড়ি বানিয়েছে। এই নিয়ে বনের রাজা সিপন সিংহের দরবারে আলোচনা চলছে। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন পশু বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসছে। প্রায় পঞ্চাশটি অভিযোগ আসায় বিলু বিড়ালের বাটপাড়ির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা পর্যালোচনা চলছে।
বিলু বিড়ালের নামে বেনামে বনের নামিদামি ভালো ভালো জয়গায় অনেক বাড়ি আছে। কেউ বলছে একশটি কেউ বলছে পঁচাত্তরটি, দশ, বিশ, পঞ্চাশটি এরকম নানান পশুর নানান তথ্য। বিড়াল বাঘের আপন ভাগিনা তার অপরাধের চেয়ে প্রভাবের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে সাবধানে আলোচনা হচ্ছে। অবশেষে চারজন চৌকস পশুকে খুব গোপনে সাবধানে তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়ে আজকের রাজদরবারের কাজের সমাপ্ত ঘোষণা করল বনের রাজা সিপন সিংহ।
- তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে বনের খুব নামি জায়গায় বিলুর একটি পাঁচতলা আলিশান বাড়ির খোঁজ পেলেন।
এই পাঁচতলা বাড়ির চারপাশে গ্লাস লাগানো বিশেষ জানালা আছে। বাড়ির চারপাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যা ঘটে তা সবই দেখা যায়। বিলুর বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে সব পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। বিশেষ বাহিনীর প্রত্যেকের জন্য একটি করে বিশেষ বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে বিলু। সেই বাড়িগুলো থেকেও পুরো বনের কার্যক্রম দেখাশোনা করে থাকেন। এক কথায় পুরো রাজ্যের চালচিত্র বিলু বিড়ালের হাতেই।
- বিশেষ বাহিনী দিয়ে বিলু বনের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন শ্রেণির বা জাতের পশুর কাছ থেকে বিশেষ করে খাদ্যের ভাগ আদায় করে। এদের প্রভাব ও সাহস তলে তলে এত বেশি হয়েছে যে কারো কারো এক দিনের খাবার রেখে সবগুলো নিয়ে নেয়। তাই জীবন বাজি রেখে কয়েক পশু বিভিন্ন জাতি থেকে রাজ দরবারে অভিযোগ দিয়েছে, দ্রুত ব্যবস্থা না করলে সকল জাতিভেদে সকল পশু নিজেরাই বিচার হাতে তুলে নেবে বা সরকারি দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবেন যে, রাজার পশুও এসবের সাথে জড়িত। ‘পতন চাই পতন চাই, সিপন রাজার পতন চাই, বাঘের ভাগিনার বিচার চাই। বিলু বিড়ালের রক্ষা নেই।’ এ শ্লোগানে শ্লোগানে বনে কাঁপন তুলবে।
- রাজ দরবারে শুধু একটি কথাই ঘুরে ফিরে উঠছে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাঘের ভাগিনা বিলু।
শেষে সিদ্ধান্ত হলো যে বাঘকেই বিলুর বিচার করতে বলা হবে। দেখা যাক বিটু বাঘ কী করে।
- বিলুর গোপন কর্মকাণ্ডের চিঠি পেয়ে বিলুকে নিয়ে আসতে বললেন।
বিলু ভয়ে ভয়ে বাঘ বিটু মামার সামনে এসে দাঁড়ালেন। বিটু জানতে চাইল এসব কি ঠিক?
বিলু বলল, আমি বাড়ি বানিয়েছি ব্যবসা-বাণিজ্য করে। জোর করে কারো কাছ থেকে কিছু নিয়েছি অবৈধ ব্যবসা করে, চান্দাবাজি করে বড় লোক হয়েছি! এসব মিথ্যা কথা। এসব আপনার আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক। বিটু বাঘ ক্ষেপে উঠে বলল, আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক মানে!
আমাকে জড়িয়ে কথা বলছ! এ বিলু এত দিন থেকে পশুরা যা জানে তা ভুল। তুমি তো আমার নিজের ভাগিনাও না। তুমি আর কোথাও আমার আপন ভাগিনার পরিচয় দিতে পারবে না। এ তোমরা সিপন রাজাকে জানাও ও আমার আপন ভাগিনা না, ওর কোনো দায় দায়িত্ব আমার নেই, ওকে যা ইচ্ছা তা করুক, তাতে আমি কোনো নাক গলাবো না।
- বাঘ, বিলুর ব্যাপারে কোনো নাক গলাবে না- এ কথা শুনে রাজ দরবারে স্বস্তি ফিরে এলো। এখন বিলুর বিচার ভালোভাবেই করা যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই যাও বিলুর আলিশান বাড়িতে কী আছে তা দেখ, আর বিলু যেন পালাতে না পারে সেদিকে নজর রাখ, বলে হুকুম করল সিংহ রাজা।
রাজার আদেশে সকলে বিলুর বাড়ি ঘিরে রাখল, কয়েকটি পশু বাড়িতে গেল বিলুকে নিয়ে পাঁচ তলা পর্যন্ত দেখল তেমন কিছু নেই, সাজানো গোছানো চমৎকার বাড়ি।
বিলুর বাড়ি থেকে বের হতেই বানর শিয়ালের কানে কানে বলল, এর গোপন আস্তানা আছে মাটির নিচে ঐ যে উঁচু মাটির ঢিবির নিচে ওখানেই ওর সব কিছু লুকিয়ে রাখে।
বিলুর আলিশান বাড়িতে কিছু না পাওয়ায় বিলু বিজয়ের হাসি মুচমুচ করে হেসে বিদায় জানাল আর জোর গলায় বলল, শোন্যাও কথ্যাও কান্যাও নিয়্যাও কাউক্যাও খারাপ্যাও বলত্যোও নেইয়্যাই
(শোনা কথা কানে নিয়ে কাউকে খারাপ বলতে নেই।)
- শিয়ালও রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল, ঠিকহু হুয়া দিহু হাক (ঠিক আছে দেখা যাক), বানরের মুখ ফসকে বের হলো, চিরি মিরি বিরি গিলি (চোরের মার বড় গলা)
এ কথা শুনেই বিলু বিড়াল লাফ দিয়ে বানরের গলা চেপে ধরল, সকলে বানরকে ছাড়িয়ে নিলো শিয়াল বলল, বিলু চল আমাদের সাথে, দেখি কে সাধু কে চোর।
- বিড়াল থমকে দাঁড়াল কোথায় যাবো!
বিলুর গোপন আস্তানায়। গোপন আস্তানা মানে! তোমরা কি বলতে চাও? বাজে কথা না বলে তোমরা এখান থেকে চলে যাও, তোমরা জান কার বিরুদ্ধে কী বলছ?
শিয়াল বলল কে তুমি বল, এত দিন ধরে বাঘের আপন ভাগিনা বলে পরিচয় দিয়ে তার প্রভাব খাটিয়ে কুকর্ম করে সম্পদের পাহাড় গড়েছ, আসলে তুমি বাঘের কেউ না!
বিলুকে টেনে নিয়ে গেল তার গোপন আস্তানায়। দরজা ভেঙে সুড়ঙ্গ দিয় মাটির নিচে গেল সবাই।
আশ্চর্য! বিশাল জায়গা জুড়ে আলাদা আলাদা গর্তে বিভিন্ন শ্রেণির পশুর খাদ্য।
শিয়াল বলল, এগুলো এখানে কেন? এগুলো কিভাবে এখানে এলো এবং এ খাদ্যগুলো কী করা হয়?
নেরি শিয়াল বলল, সকলের কাছ থেকে জোর করে নেয়া হয়। বানর বলল, খুব চড়া দামে ওদের কাছেই আবার বিক্রি করা হয়।
এ কথা শেষ হতে না হতেই সকলে বিলু বিড়ালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, গণধোলাইয়ে বিলুর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
এ খবর বাঘের কাছে যেতেই বিটু বাঘ হুঙ্কার দিয়ে বলল, যদি আমার ভাগিনা মারা যায় ওদের কাউকে ছাড়ব না এমনকি সিপন সিংহকেও না। আগামী নির্বাচনে আমি ওর বিরুদ্ধে প্রার্থী হবো। আমি নির্বাচন করবই। বাঘের উপদেষ্টা বিন্নু বক বল, আব ভগ ককিব জব দিব কিবনি? (আপনার ভাগিনার কুকর্মের জবাব দেবেন কেমনে?)
বাঘ হুঙ্কার দিয়ে বলল, এহুম সহুম সাজুহু সহুযহুম (এসব সাজানো ষড়যন্ত্র)।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ