বিশ্বস্ততার পুরস্কার  -মেহেদী হাসান মুন্না

বিশ্বস্ততার পুরস্কার -মেহেদী হাসান মুন্না

তোমাদের গল্প নভেম্বর ২০১৭

অনেক দিন আগে বাগদাদ শহরে বাস করত হারুন নামে এক ধনী বণিক। সে তার সারাজীবনে উপার্জিত অর্থ নিয়ে বেশ সুখেই ছিল। সে সবাইকে সাহায্য সহযোগিতা করত। তাই বাগদাদের সবাই তাকে খুব ভালোবাসত। তবে সারা বাগদাদজুড়ে তার আপন কেউ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই হারুনের একটা ইচ্ছা ছিল, যা পূরণ হয়নি। তার সেই ইচ্ছাটা হলো বিশ্বভ্রমণ। সময় যেতে যেতে সে বৃদ্ধ হয়ে গেল। তারপরও তার সেই ইচ্ছাটি অপূর্ণ থেকে গেল। তাই একদিন হারুন সিদ্ধান্ত নিল সে এবার বিশ্বভ্রমণে বের হবে। তবে সে বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছাটি পোষণ করে খুশির পাশাপাশি চিন্তিতও হলো। সে ভাবলো,বিশ্বভ্রমণে তার কতদিন লাগবে তাতো সে জানে না, তবে তার এতদিনের অর্থ নিয়ে কী করবে। সে আবারও ভাবলো, তার অনুপস্থিতিতে কেউ যদি তার উপার্জিত অর্থ হস্তগত করে নেয়, তবে বিশ্বভ্রমণ শেষে সে কী করবে। অনেক ভাবনা চিন্তার পর সে সিদ্ধান্ত নিল যে, সে কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে তার উপার্জিত অর্থ আমানত রাখবে। অনেক ভেবে সে তার এক বন্ধুকে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল যার নাম আলী। তারপর হারুন এ ভাবনার কথা গিয়ে আলীকে জানালে আলী রাজি হলো, কিন্তু সে বললো, “তুমি আমাকে যে দায়িত্ব দিচ্ছ তা খলিফাকে সাক্ষী রেখে দিতে হবে।” তখন হারুন কারণ জানতে চাইলে আলী উত্তরে বললো, “মানুষ মরণশীল তা তুমি জানো। তাই আমি যদি তোমার সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে থাকাকালে মৃত্যুবরণ করি তবে সে সম্পদ রক্ষা করবে কে। তুমি তো জানো তোমার মত আমারও সারা বাগদাদে কোনো আত্মীয় নেই। তাই আমি যদি মৃত্যুবরণ করি তবে তা যেন খলিফা নিজে রক্ষা করে।” আলীর এ কথা শুনে হারুন খুব খুশি হলো ও আলীর কথা মত সব ব্যবস্থা করল। তারপর হারুন আলী ও বাগদাদবাসীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বের হলো। দেখতে দেখতে হারুনের বিশ্বভ্রমণের তিন বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু সে ফিরে এলো না। যার জন্য আলী খুব চিন্তিত হলো এই ভেবে যে, হারুন কি দস্যুদের হাতে মৃত্যুবরণ করল। আবার ভাবল যে, হারুন ভালো মানুষ তাকে দস্যুরা কিছু করবে না। এভাবে আলী তার বন্ধুর জন্য চিন্তা করতে লাগলো। দেখতে দেখতে আরও দুই বছর কেটে গেল কিন্তু আলী হারুনের কোনো খোঁজ খবর পেল না। অবশেষে আলী নানা জায়গা থেকে আগত বণিকদের কাছে হারুনের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে থাকে, কিন্তু কেউ কোনো জবাব দিতে পারে না। এদিকে আলী প্রায় বৃদ্ধও হয়ে এলো, কিন্তু হারুন ফিরল না। তাই আলী হারুনের খবর পাওয়ার জন্য প্রায় পাগল হয়ে গেল। এদিকে আলী এত দিন কোনো কাজ করতে না পেরে তার সঞ্চিত অর্থও প্রায় ফুরিয়ে যেতে লাগল। তাই আলী আরও বেশি চিন্তিত হলো। আলীর সম্পদ শেষ হওয়া অবধি আলী হারুনের সম্পদ রক্ষার্থে সদা পাহারাদারি করত। কিন্তু সে তার বন্ধু হারুনের অর্থ থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি। আর যার ফলে আলীর সম্পদ দ্রুত শেষ হয়ে যেতে লাগল। আর এমন এক সময় এল যখন আলী অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে লাগল। এমন সময় এক রাতে আলী স্বপ্নে দেখল হারুন তাকে বলছে, “আলী আমি বিশ্বভ্রমণ করতে করতে এক সময় মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম এবং সে অনুযায়ী মক্কায় গেলাম। আর মক্কা জিয়ারত করে যাত্রাকালে আমি আল্লাহর ডাক পেয়ে গেলাম। তাই আমি আমার সমস্ত সম্পদ তোমার বিশ^স্ততার জন্য তোমাকে পুরস্কারস্বরূপ দিলাম। এ স্বপ্ন দেখার পরদিন আলী খলিফাকে সব জানাল। খলিফা বলল, আমি মক্কায় খবর নিচ্ছি, যদি তোমার কথা সত্য হয় তবে তুমি হারুনের সম্পদ ভোগ করতে পারবে। খলিফা দূত পাঠালেন মক্কায়। পরে খবর নিয়ে দেখা গেল আলীর কথা সত্য। তখন খলিফা হারুনের সমস্ত সম্পদ আলীকে ব্যবহারের হুকুম দিলেন। আর এভাবে আলী তার বিশ্বস্ততার পুরস্কার পেল।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ