বিনোদন জান্নাতা -নিঝুম শিল্পী
গল্প সেপ্টেম্বর ২০২০
পিঠাপিঠি দুইভাই মিঠু জিঠু। বাঁদরামিতে মিঠু জিঠু এপাড়ার সেরা হলেও, ওরা কোন অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেয় না। প্রতিবাদ জানাবেই! ওরা দু’জনেই খুব সাহসী ছেলে। আজ পুকুরপাড়ে ডালিম গাছটার নিচে মিঠু ঠ্যাংয়ে ঠ্যাং তুলে বসে হাই তুলছে। এমন সময় জিঠু এসে বলল, কী ব্যাপার মিঠুভাই তুমি এখানে বসে আছো যে? ওদিকে কত কাজ বাকি! - তো কী করব বল? সকাল সকাল তো মাথা খারাপ করে দিয়েছে, ঐ শুঁটকিটা! শুঁটকি হলো মিঠুদের পাড়ার চিকু, দেখতে খুব চিকনা! তাই মিঠু ওকে শুঁটকি বলে ডাকে। - কেন? কী করেছে ও? - কী আবার করবে আমার মাথা খেয়েছে! আমার কাছে এসে এই সকালে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছে। আজ বিকেলে তোমাদের সাথে ইকো পার্কে নিয়ে যাবে। আমার মাকে যেন বলবে না। আচ্ছা! তুই বল জিঠু, ওর মাকে যদি না বলে ঐ শুঁটকিকে নিয়ে যাই পার্কে বেড়াতে, তাহলে খবর করে দেবে ওর মা! এমনিতেই তো ওকে না খাইয়ে না খাইয়ে শুঁটকি বানিয়েছেন, আবার এখন যদি না বলে ঘুরতে নিয়ে যাই, তাহলে তো হাঁড়ির ভাত ওর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। জিঠু বলল, আচ্ছা! মিঠুভাই চিকুর মা এমন কেন বলতো? আমাদের মা তো এমন নয়। আমাদের পড়ার সময় পড়ার সুযোগ দেয়, খেলার সময় খেলায়। মা বলে, এই বয়সে আমাদের একটু বিনোদনের প্রয়োজন আছে। খেলাধুলা করার দরকার আছে। এতেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আর চিকুটাকে কোন সময় ওর মা বেরুতেই দেয় না বাসা থেকে। মিঠু বলল, আমাদের মা খুব ভালো। কিন্তু শুঁটকির মা এগুলো বোঝেই না, মনে করেন ঘরের মধ্যে ঘরকুনো হয়ে টেবিলে বসে থাকলেই ওর পড়াশোনা ভালো হবে। কিন্তু তা নয়। চিকু পড়াশোনায় একদম কাঁচা। ঘরে বন্দী থেকে কেউ কখনোও পাকা হয়নি বুঝলি জিঠু! হ্যাঁ মিঠুভাই বুঝলাম। চলো ব্যাপারটা মার সাথে শেয়ার করতে হবে। তাহলে আমরা চিকুর সমস্যাটা সল্ভ করতে পারব। - হ্যাঁ চল, দুপুরে হাত মুখ ধুয়ে, মায়ের কাছে খেতে বসল মিঠু জিঠু, আলু-বেগুন ভর্তা, পোনা মাছ আর ডাল দিয়ে ভাত খাচ্ছে ওরা। খেতে খেতে জিঠু বলে উঠল, আজকের রান্নাটা কিন্তু হেব্বি হয়েছে মা। মা হেসে বলল, তাই নাকি! রোজই ভালো হয়। কোন দিন খারাপ হয় বল দেখি! মিঠু বলল, মা আজ বিকেলে আমরা পার্কে বেড়াতে যাব, চিকুও যেতে চায়, কিন্তু ওর মা যেতে দেবে না। - বলিস কী মিঠু? কেন যেতে দেবে না? হ্যাঁ মা সত্যি বলছি! চিকু আমাদের সাথে রোজ মাঠে যেটুকু খেলে তাও লুকিয়ে লুকিয়ে। ওর মাকে খুব ভয় পায় চিকু। - আচ্ছা ব্যাপারটা আমাকে ছেড়ে দে। খাওয়া শেষে মিঠু জিঠু হাত ধুয়ে ইয়ে...এএ, বলে চিৎকার করে উঠল। মিঠু জিঠুর মা এলেন চিকুদের বাড়ি, পিছু পিছু ওরা দুজনেও এলো। চিকুর মা মিঠুর মাকে দেখে বলে উঠল, কেমন আছেন আপা? এতোদিন পর আমাদের বাড়িতে পা পড়ল? মিঠুর মা হেসে বলল, সংসারের কাজে খুব ব্যস্ত থাকি আপা, ছেলেদের সামলাতে হয়। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বসেন আপা বসেন, চেয়ার এগিয়ে দিলেন চিকুর মা। তা চিকু কোথায়? ওকে তো দেখছি না? আর বইলেন না আপা! ছেলেটা যা বেয়াড়া হয়েছে একটুও পড়ে না, খায় না, সব সময় ফাজলামি করে। এখন ঘরের মধ্যে বসে আছে। মিঠুর মা চিকুকে ডাকলেন, মিঠু জিঠুও আসল। চিকুর মাকে মিঠুর মা বললেন, আপা ছেলেকে সব সময় ঘরে বন্দী করে রাখলে, ওর মন ভালো থাকবে না। ও একঘেয়ে হয়ে পড়বে। পড়াশোনার ক্ষতি হবে। আপনি ওকে বাইরের সবুজ ছোঁয়া, প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দিন, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে দিন। ওর স্বাস্থ্য ও মন ভালো হয়ে উঠবে। চিকুর মা লজ্জা পেয়ে বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন আপা। মিঠু জিঠুর মতো চিকুকে যদি আমি খোলামেলা রাখতাম তাহলে ও পড়াশোনায় ভালো হতো। আজ থেকে চিকুও মিঠু জিঠুর সাথে খেলবে। ওরা তিনজনে ইয়াহু চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে পড়লো, ইকো পার্কের দিকে।
আরও পড়ুন...