বন্ধুর খোঁজে    -নাদিম নওশাদ

বন্ধুর খোঁজে -নাদিম নওশাদ

তোমাদের গল্প জুলাই ২০১৭

আদনান, আরিফ ও আকাশ।
তিনজনই ক্লাস নাইনে পড়ে। খুব ভালো বন্ধু ওরা। খুব ছোটোবেলা থেকেই ওদের মধ্যে গলায় গলায় ভাব। লোকে ওদের থ্রি স্টার বলে ডাকতো। সব কাজই ওরা তিনজন একসাথে করত। তা সে খেলাধূলা থেকে শুরু করে গাছ থেকে আম পাড়া অবধি।
এভাবে ভালোই কাটছিল ওদের দিন। কিন্তু হঠাৎ এক তুমুল ঘূর্ণিঝড় হানা দেয় ওদের এলাকায়। অন্যদের মত আরিফ ও আকাশের পরিবারও অন্যত্র চলে যায়। আরিফের পরিবার চলে যায় তাদের শহরে আর আকাশের পরিবার চলে যায় ঢাকায়। এর পরই ভেঙে যায় আদনান, আরিফ ও আকাশের বন্ধুত্ব।
প্রায় দুই বছর পর, আদনান একটা কাজে শহরে যায়। আসলে এর আগে ছোটো ছিল বলে শহরে একা একা আসা হয়নি। হঠাৎ আদনানের আরিফের কথা মনে পড়লো। অনেক কষ্টে আরিফের ঠিকানা জোগাড় করলো আদনান। এরপর আরিফের সাথে দেখা হলো। প্রথমে আরিফ চিনতে পারেনি আদনানকে। কিন্তু পরে যখন চিনতে পারলো, তখন আর আবেগ সামলাতে পারলো না। দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। অনেকক্ষণ আড্ডা দিল দু’জন। এই দুই বছর কেমন কাটলো, বাড়ির সবাই কেমন আছে আরও কত কি! এরপর গল্পের মাঝে আদনান হঠাৎ আকাশের কথা জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু আরিফ কোনো উত্তর দিতে পারে না। দু’জনের মুখ আবার যেন ভার হয়ে যায়। দু’জনেই গম্ভীর হয়ে থাকে। অনেকক্ষণ গম্ভীরভাবে থাকার পর আরিফ বলে, চল সামনে রোজার ছুটিতে ঢাকায় যেয়ে আকাশকে খুঁজে বের করবো। আদনান প্রথমে আমতা আমতা করে কারণ ও আকাশের বিষয়ে কিছুই জানে না। আরিফ তখন বলে প্রথম কয়েকদিন আকাশের সাথে যোগাযোগ রেখেছিল সে। তখন সে তার স্কুলের নামটা শুনেছিলো। কিন্তু তারপরে আর যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এরপর রোজার ছুটিতে দুই বন্ধু অনেক কষ্টে বাড়ি থেকে অনুমতি নিয়ে বের হয় আকাশের খোঁজে। হাতে আছে মাত্র দশ দিন। কারণ দশ দিন পরেই রোজার ঈদ।
ঢাকায় যেয়েই প্রথমে ওরা আকাশের স্কুলে খবর নেয়। কিন্তু এই দুই বছরে ও যে কলেজে উঠে গেছে এ কথা মাথায় আসেনি কারোর। আরিফ শহুরে ছেলে ও ঠিক কায়দা করে আরিফের কলেজে যোগাযোগ করে সেখান থেকে আকাশের ঠিকানা নেয়া হলো। এবার দু’জনেই দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি হাসল। কিন্তু ওই ঠিকানায় আকাশরা এখন আর থাকে না। গত এক মাস আগে ওরা বাসা ছেড়ে চলে গেছে এমনটিই জানালো ঐ বাসার বর্তমান ভাড়াটে। আমরা তখন যেন নির্বাক হয়ে গেছি। আকাশকে খোঁজার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। কিন্তু আকাশের এক বন্ধুর খোঁজ পেয়ে তারা ভরসা পায়। তার কাছ থেকে খবর পায় আকাশ অদূরে একটা গ্রামে থাকে। ঠিকানা পেয়ে সেখানে চলে যায় আদনান আর আরিফ। আকাশের বাবাকে দেখে প্রথমে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওরা। আকাশের বাবাকে সালাম দিয়ে আকাশের খোঁজ করে। প্রথমে আকাশের বাবা ওদের চিনতে পারেননি। কিন্তু পরিচয় দেয়ার পর চিনতে পারেন। আকাশের বাবা উত্তর দেন যে আকাশ বিদেশে চলে গেছে। শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে ওরা দুইজন। এত কষ্ট করেও আকাশের দেখা না পেয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দু’জনেই বাসায় ফেরে।
আজ ঈদ। কিন্তু আদনান ও আরিফ এবারের ঈদে যেন কোনো আনন্দ নেই। দু’জনেই মন মরা হয়ে বসে আছে। হঠাৎ আরিফ আদনানকে ডেকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে, ওটা আকাশ না? প্রথমে ওরা ভেবেছিল ওদের মনের ভুল। কিন্তু কাছে এসে আকাশ বলে, কি রে চমকে দিলাম তো। আদনান আর আরিফ হাঁ হয়ে যায়। দু’জনেই বলে, এসব কি হচ্ছে। আকাশ তখন একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে, তোরা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলি না, দ্যাখ আমিই তোদের কেমন সারপ্রাইজ দিলাম। আদনান আর আরিফ কিছু বুঝতে পারে না। আকাশ তখন বলে যে ওরা যেই বন্ধুর কাছ থেকে আকাশের খবর নিয়েছে সেই বন্ধুই আকাশকে ওদের খবর দেয়। তাই আকাশ ওর বাবাকে দিয়ে এইসব করিয়েছে যাতে উল্টো ওদেরকেই সারপ্রাইজ দিতে পারে। আদনান আর আরিফের কাছে এখন সব পরিষ্কার। এরপর দুই বন্ধু আচ্ছা করে জব্দ করে আকাশকে তাদের সাথে এমন করার জন্য। এরপর জড়িয়ে ধরে আকাশকে। তিনজনের চোখেই পানি চলে আসে। কতদিন পর আবার একসাথে হয়েছে তাদের সেই চেনা পরিবেশে!
ওদের কাছে এই ঈদটাই হয়তো বা অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যাকে আঁকড়ে ধরে ওরা পার করবে ওদের ভবিষ্যৎ।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ