পৃথিবীর বুকে উল্কাপিণ্ড

পৃথিবীর বুকে উল্কাপিণ্ড

বিজ্ঞান হাবিব খান জুলাই ২০২৩

মেঘমুক্ত রাতের আকাশে প্রয়াই চোখে পড়ে উজ্জ্বল আলোর এক রেখা। হঠাৎ করেই আবার অদৃশ্য হয়ে যায় রেখাটি। এই ঘটনাকে সাধারণত উল্কাপাত বা তারা খসা বলে। যে বস্তুগুলোকে এভাবে দেখা যায় তাদেরকে বলা হয় উল্কা। 

উল্কা শব্দটি এসেছে মিটিওরয়েড থেকে। এর অর্থ গ্রহাণুর চেয়ে ছোটো কোনো কঠিন বস্তু। উল্কার আকার সাধারণত ৩০ মাইক্রোমিটার থেকে ১ মিটার ব্যাসের হয়। মিটিওরয়েড উৎপন্ন হয় কোনো গ্রহাণু থেকে অথবা ধূমকেতুর কোনো অংশ কক্ষপথ বিচ্যুত হয়ে।

উল্কার বেগ বাতাসে শব্দের বেগের তুলনায় অনেক বেশি। তাই উল্কার গতিপথ থেকে বাতাস সরে যেতে পারে না। ফলে বাতাস ভেদ করে উল্কা চলে যায়। এ সময় সেখানে কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়। ফলে আয়নিত হয়ে ওঠে উল্কার গতিপথের বাতাস। তাই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেই গতিপথ। বায়ুচাপের কারণে তৈরি হওয়া এই আয়নগুলো ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রতি মিনিটে লাখ লাখ উল্কা প্রবেশ করে। তবে এদের বেশির ভাগই ধুলোকণার সমান। এগুলো বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরগুলোতেই পুড়ে শেষ হয়ে যায়। তাই বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে সব সময়ই এ রকম আয়নিত উল্কাপথ তৈরি হয়।

ভারী উল্কার বেগের ওপর বাতাসের বাধা বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। ফলে এগুলো অতি উচ্চ বেগে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে। এগুলোর সংখ্যা খুব কম। কিছু কিছু উল্কার আকার খুব বড়ো। সেগুলোকে বলে ফায়ারবল। 

উল্কার কারণে তৈরি হওয়া গর্ত বা খাদ অনেক বড়ো হতে পারে। প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার উইন্সলোতে একটি উল্কাপিণ্ড আঘাত করে। এর ফলে সৃষ্টি হয় ব্যারিঞ্জার ক্রেটার। মূলত লোহা দিয়ে গঠিত সেই উল্কার ব্যাস ছিল ৩০-৫০ মিটার। কিন্তু ক্রেটারের ব্যাস ১ হাজার ২০০ মিটার এবং ২০০ মিটার গভীর। 

তবে এ রকম বড়ো খাদের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব বেশি নয়। ছোটো-বড়ো ১২০টির মতো উল্কাচিহ্ন পাওয়া গেছে সারা পৃথিবীতে। জলস্রোত, টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া, ঝড়-বন্যা জলবায়ু ইত্যাদির কারণে উল্কার আঘাতের চিহ্ন বিলীন হয়ে যায়।

ছোটোখাটো উল্কার ফলে পৃথিবীর তেমন ক্ষতি হয় না। তবে কয়েক শ’ মিটার ব্যাসের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করলে নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরণের চেয়েও বড়ো ক্ষতি করতে পারে। 

পৃথিবীতে পড়া সবচেয়ে বড়ো উল্কাপিণ্ড হোবা। হোবা নামটি খোখেগোওয়াব শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ উপহার। ধারণা করা হয় এই উল্কাপিণ্ডটি ৮০,০০০ বছর আগের। 

১৯২০ সালে জ্যাকবাস নামের একজন কৃষক তার জমিতে খনন করার সময় একটি ধাতব বস্তু দেখেছিলেন। এটি একটি উল্কা ছিল। এ বিষয়ে ১৯২০ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। নামিবিয়ার গ্রুটফন্টেইন জাদুঘরে উল্কার খণ্ডটি সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ফ্রেডরিখ উইলহেলম কেগেল হোবার উল্কাটির প্রথম ছবি তোলেন। অনুমান করা হয় এটি অনেক বড়ো উল্কার একক টুকরো যা কেপ ইয়র্ক উল্কাপিণ্ডের বা ক্যাম্পো দেল সিয়েলো এর খণ্ডের চেয়েও দ্বিগুণ। এটি ২.৭*২.৭*০.৯ মিটার ।

১৯২০ সালে এর ভর ধরা হয়েছিল ৬৬ টন। কিন্তু ক্ষয়, বৈজ্ঞানিক নমুনা সংগ্রহ সহ বহু বছর ধরে এর কিছু অংশ হ্রাস পায়। এখন ভর প্রায় ৬০ টনেরও বেশি বলে অনুমান করা হয়। উল্কাপত্রটি কোবাল্টের চিহ্নসহ প্রায় ৮৮% আয়রন এবং ১% নিকেল দিয়ে গঠিত। এটি নিকেল সমৃদ্ধ রাসায়নিক শ্রেণির আইভিবি এর অন্তর্গত একটি অ্যাটেক্সাইট আয়রন উল্কা। বর্তমানে উল্কাটি নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ অব্যাহত আছে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ