পাঠে আমার মন বসে না

পাঠে আমার মন বসে না

স্বাস্থ্যকথা ডা. এহসানুল কবীর মার্চ ২০২৪

বর্তমানে ডিজিটাল এই যুগে স্কুলগামী কিশোর ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনায় আগ্রহী করে তোলাটা খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে এটা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে বৈকি। কারণ ঐ সময়টায় তাদের পড়াশুনা বা একঘেয়েমিভাব কাটাতে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোর ব্যবহার অত্যাধিক হারে বেড়ে গিয়েছিল যা আজো বহমান রয়েছে। ফলে তারা প্রথাগত পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। গ্রীক ভাষায় একটা শব্দ আছে ‘সোফোফোবিয়া’ যার অর্থ হলো ‘শেখার ভয়’ বা ‘অধ্যয়নের ভীতি’। ‘সোফিয়া’ মানে ‘জ্ঞান’ আর ‘ফোবিয়া’ মানে ‘ভীতি’। আর তাই শিক্ষার্থীরা পাঠে আর আগের মতো মনোনিবেশ করতে পারছে না অর্থাৎ বলা যায়,  ‘সোফোফোবিয়া’য় ভুগছে তারা। কারণ কী?

স্কুলভীতি

সাধারণত স্কুলের পরিবেশ পছন্দ না হওয়া, সহপাঠীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে না ওঠা, অযাচিতভাবে সহপাঠীদের ঠাট্টা-মশকরার পাত্র হয়ে ওঠা, অহেতুক ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া, স্কুলের টাইম সিডিউলের সাথে নিজের লাইফ স্টাইলকে সামঞ্জস্য করতে না পারা ইত্যাদি নানা কারণে স্কুলে যাবার প্রতি অনীহা তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে পড়াশুনার প্রতি অনাগ্রহতা বাড়ছে দিনকে দিন।

পরীক্ষাভীতি

এটা এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা যা শিক্ষার্থীর মনে মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১০-৪০%  ছাত্রছাত্রীর মনে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বা আতঙ্ক কাজ করে। তার কারণ হলো- পরীক্ষা সংক্রান্ত তাদের নেতিবাচক চিন্তা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, খারাপ রেজাল্ট হলে পরিবার ও সমাজ কর্তৃক ঠাট্টা-বিদ্রুপের ভয় ইত্যাদি। এজন্য কিছু উপসর্গও তৈরি হয়। যেমন- অতিরিক্ত টেনশন, বুক ধড়পড়ানি, অস্থিরতা, বমি বমি ভাব, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়া ইত্যাদি। 

শিক্ষকভীতি

কোনো কোনো শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের একধরনের ভীতি থাকে। কারণ হিসেবে বলা যায়, ছাত্রছাত্রীদের মানসিকতা বা মেধার মাত্রা না বুঝে পড়ানো, শিক্ষকের গুরুগম্ভীর ভাব বা অত্যাধিক প্রহার করার অভ্যাস, ছাত্র-শিক্ষক রিলেশনশীপ ঠিকমতো গড়ে না ওঠা ইত্যাদি।

শারীরিক সমস্যা

দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা, অপুষ্টি, চোখের বা কানের সমস্যা, অনিদ্রা, ক্লান্তিভাব, মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, পেটের পীড়া ইত্যাদি কারণেও কিন্তু পড়াশুনার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্ম নিতে পারে। তাছাড়া নিজের অপারগতা অর্থাৎ পড়ার কঠিন বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে না পারার কারণেও পাঠে মন বসে না তাদের। এছাড়াও কিছু কিছু স্নায়বিক দূর্বলতাও এটার কারণ। যেমন- পরীক্ষার আগের রাতের টেনশন, প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর কিছুই মনে করতে না পারা, খারাপ রেজাল্ট হবার আশঙ্কা ইত্যাদি।

অন্যান্য কারণ

কিশোরবেলা এক দুরন্তপনার বয়স। কোনো নিয়মকানুন বা ধরাবাঁধার গণ্ডি দিয়ে তাকে আটকানো খুবই কঠিন ব্যাপার বটে। কাজেই পাঠে মন বসবে কি করে?

তাহলে পরিত্রাণের উপায় কি?

আসলে এটার গদবাঁধা বা ছকে আটা কোনো সমাধান নেই। একেকজনের সমস্যা একেকভাবে সমাধান করাটাই শ্রেয়। বিশেষ করে ওপরের কারণগুলো সনাক্ত করেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য পরিবার বা বিদ্যালয়ে শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। এক্ষেত্রে পজিটিভ ও সহানুভূতিশীল মানসিকতা নিয়ে এবং পড়াশুনার প্রতি বেশি চাপ না দিয়ে বিনোদনের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো ফল পাওয়ার আশা আছে। এছাড়া শিক্ষার্থীকে সাহস যোগানো, বকাঝকা না করা, পড়াশুনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া বা পরীক্ষার খারাপ রেজাল্ট নিয়ে অন্যের সাথে তুলনা না করা ইত্যাদি উপায়গুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সঠিকভাবে পড়াশুনা না করলে ভবিষ্যতে কী কী সমস্যা হতে পারে সে ব্যাপারে সম্যক আইডিয়া দেওয়া, বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথার দ্বারা তার আত্মবিশ্বাসের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেওয়া, তার কোথায় বোঝার ঘাটতি আছে সেটা খুঁজে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাদের পর্যাপ্ত ঘুম ও খেলাধুলার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এছাড়া কৈশোরিক এই বাড়ন্তবেলায় তাদের খাদ্য ও পুষ্টির দিকেও নজর দিতে হবে বৈকি।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ