নেপাল দেশ, ঘুরতে বেশ...   -পরিকল্পনাবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম

নেপাল দেশ, ঘুরতে বেশ... -পরিকল্পনাবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম

ভ্রমণ জুন ২০১৮

এক সপ্তাহের ঘোরাঘুরি শেষে তুরস্ক থেকে তার্কিশ এয়ারলাইন্সযোগে নেপালের এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। প্লেন থেকে নেমে পোর্টের মধ্যে ঢুকতেই চোখে পড়ল গৌতম বুদ্ধের ছবি। আর ছবির নিচের বিরাট করে লিখা “ইঁফফযধ ধিং নড়ৎহ রহ ঘবঢ়ধষ”। এই একই বাক্য শহরের অনেক জায়গায় চোখে পড়েছে কয়দিনে। দেখে মনে হতে পারে, এটা বোধ হয় বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এ লেখার আরেক কারণ আছে। সেটা কিছুক্ষণ পরে বলছি। তার আগে চলো এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢোকা যাক। কারণ বেশ কিছু প্রসেস শেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে নেপালে প্রবেশ করতে হবে। বাইরে পূর্ব থেকেই এরশাদ ভাই অপেক্ষায় আছেন। একটি বিষয় তোমাদেরকে জানিয়ে রাখি, সাধারণত কোনো দেশে যাওয়ার আগেই নিজ দেশে অবস্থিত সে দেশের রাষ্ট্রদূতের অফিসে আবেদন করে ভিসা নিতে হয়। কিন্তু নেপালে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের জন্য সে বাধ্যবাধকতা নেই। নেপাল বাংলাদেশীদেরকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়। অন-অ্যারাইভাল ভিসা মানে হচ্ছে কোন দেশের পোর্টে পৌঁছে ভিসার জন্য আবেদন করার মাধ্যমে যে ভিসা পাওয়া যায় তা; আগে থেকে ভিসা না নিলেও চলে। আমরা এয়ারপোর্টে নেমেই সে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নেয়ার জন্য ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করতে লাগলাম। সামনে একটা লাইন চোখে পড়ল। সাথে একটা নির্দেশনাও। অন-অ্যারাইভাল ভিসার আবেদন ফি জমা দেয়ার লাইন এটা। আমরা ফরম পূরণ করে সেখানে দাঁড়াবো এবং চল্লিশ ডলার করে জমা দিব। কিন্তু ফরম পূরণ করা শেষ হতে না হতেই একজন নেপালি পুলিশকে পেলাম। তিনি আমাদেরকে হিন্দি, নেপালি আর ইংরেজি মিলিয়ে এক অদ্ভুত মিশ্র ভাষায় জিজ্ঞাসা করলেন যে আমরা কোন দেশ থেকে এসেছি। আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে বললেন, আপনাদের কোনো ফি লাগবে না। শুনে ভালোই লাগল। তোমরা ভাবছো, মাত্র চল্লিশ ডলার বেঁচে যাওয়ায় এতো খুশি কেন! চল্লিশ ডলারে কয় টাকা হয় জানো? প্রায় ৩২০০ টাকা। দুইজন মিলিয়ে ৬৪০০ টাকা। খুব একটা কম না বোধ হয়! তোমাদেরকে চকোলেট খাওয়াতে চাইলে অনেক চকোলেট কিনতে পারব এ টাকা দিয়ে।
ফি জমা দেয়ার লাইন থেকে বাঁচা গেল। এবার ভিসা নেয়ার জন্য চলে গেলাম ইমিগ্রেশন পুলিশের কাউন্টারে। আমাদের লাইনে মাত্র একজন ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে। কিন্তু তার অনেক সময় লাগছে। কারণ! একজনের সাথে যে আরো পাঁচজন আছে ফ্যামিলি মেম্বার। পিচ্চি বাচ্চাসহ তিনি এসেছেন। সবার জন্যই ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই কিছুটা সময় তো লাগবেই। ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করার পর এলো আমাদের পালা। পাসপোর্ট, ভিসার আবেদন, এক কপি ছবি এগিয়ে দিলাম ইমিগ্রেশন অফিসারের হাতে। বেড়াতে এসেছি জেনে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, নেপালে এবারই কি প্রথম? হ্যাঁ সূচক উত্তর করলাম। তিনি এক মাসের ভিসা দিলেন আমাকে। তোমাদেরই এ কিশোর ম্যাগাজিনের তৎকালীন উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও বর্তমান নির্বাহী স¤পাদক সালাহউদ্দীন ভাই আমার সাথে ছিলেন। আমি ছিলাম তখনকার নির্বাহী স¤পাদক। সেই ২০১৬ সালের কথা। যাহোক উনার ভিসার জন্য সবই ঠিক ছিল। কিন্তু পাসপোর্ট সাইজের ছবি ছিল না সাথে। কী হবে! নাহ, কিচ্ছু হবে না। প্রথমে ইমিগ্রেশন অফিসার তাঁকে পাসপোর্টের ফটোকপি করতে বললেন, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বললেন, থাক, লাগবে না। নিজেই পাসপোর্ট স্ক্যান করে উনার ভিসাও মঞ্জুর করলেন।
এবার দুই ভাই মিলে চলে গেলাম ব্যাগপত্র সংগ্রহের জন্য। তিন নম্বর বেল্টে আমাদের ব্যাগ থাকবে। এয়ারপোর্টের স্ক্রিন থেকে দেখে নিলাম আমাদের ব্যাগের বেল্ট নাম্বার। ঐ সময়ে নেপাল এয়ারপোর্টে খুব বেশি প্লেন আসেনি। মাত্র দুইটা প্লেন ল্যান্ড করেছে। একটু বলে রাখা ভালো, আমাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তুলনায় নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনেক কম ব্যস্ত। কারণ, ওখানে আমাদের তুলনায় অনেক কম প্লেন ওঠানামা করে। যাহোক, বেল্টের ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। ব্যাগ আর আসে না। বাইরে অপেক্ষমাণ এরশাদ ভাইকে ফোন দিলাম এবং আমাদের পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করলাম। তিনি জানালেন যে, তিনি এসেছেন এবং অপেক্ষা করছেন। আমাদেরকে স্বাগত জানালেন ফোনেই। ব্যাগ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছি। এমন সময় দেখলাম, একজন সুঠামদেহের অধিকারী ভদ্রলোক আমার পাশে দাঁড়িয়ে। চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম তিনি আসলে তুর্কি। শার্টের ওপর দিয়ে গায়ে একটা হাতাকাটা জ্যাকেট পরেছেন। যেটাকে জ্যাকেট না বলে অ্যাপ্রোনও বলা যেতে পারে। জ্যাকেটের ওপর তার এনজিও-র নাম লেখা-‘দিয়ানাত ফাউন্ডেশন’। উনি আসলে রমজানে নেপালে এসেছেন, তাদের এনজিও-র পক্ষ থেকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করতে। আমি আগে থেকেই জানতাম যে এই এনজিও-র পক্ষ থেকে তুরস্ক থেকে প্রতিনিধি আমাদের প্লেনেই যাচ্ছেন এবং এরশাদ ভাই আমাদের সাথে সাথে তাকেও রিসিভ করবেন। পরিচিত হলাম। পরিচিত হয়ে ভালোই হলো। ব্যাগ সংগ্রহ শেষে একসাথেই বের হলাম এয়ারপোর্ট থেকে।
বাইরে এসেই এরশাদ ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। এরশাদ ভাইয়ের সাথে আরেকজন ভাই এসেছেন, নাম খুরশেদ। উনারা আগেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষমাণ ছিলেন। আমরা সবাই গাড়িতে চেপে বসলাম। তুর্কি ভদ্রলোককে তার হোটেলে পৌঁছে দিয়ে গাড়ি আমাদেরকে নিয়ে চলল আমাদের হোটেলে। আগে থেকেই হোটেল বুকিং দেয়া ছিল। হোটেল তয়োমা। মাঝারি মানের হোটেল। চিনদেশী মানুষেরা এ হোটেল চালায়। রুমে বসেই প্রথম কাজটি হলো এরশাদ ভাইয়ের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হওয়া। ভদ্রলোকের সাথে ততোটা ভালো পরিচয় আগে থেকে না থাকলেও এতো আপন করে আমাদেরকে রিসিভ করেছেন, যা সত্যিই খুব অভাবনীয়! আমরা আমাদের বিস্তারিত পরিচয় দিলাম। কিশোর ম্যাগাজিনের পরিচয় দিয়েই তো তার সাথে আগে যোগাযোগ হয়েছে। এর বাইরের পরিচয় আরো বিস্তারিত দিলাম। উনিও উনার বিস্তারিত জানালেন। উনি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামক একটি এনজিও-র সেক্রেটারি। ছাত্রদের নিয়ে কাজ করেন। একই সাথে তিনি নেপাল ইসলামী সাং নামক ইসলামী সংগঠনের সদস্য। তিন কন্যার জনক। তিন কন্যার নামের শেষেই ফাতিমা রয়েছে। প্রথম অংশগুলো আলাদা আলাদা। কিন্তু শেষের অংশ একই। এরশাদ ভাইয়ের দাদীর নাম ছিল ফাতিমা। দাদীর নামকে মেয়েদের নামের শেষে জুড়ে দিয়েছেন। নেপালের সাড়ে তিন দিনে সাধারণত যতবার দেখা হয়েছে উনার সাথে আমি জিজ্ঞাসা করেছি, “ফাতিমাদের কী খবর?”। সুবিধাই হয়েছিল, একটি নাম মনে রেখেই তিনজনকে কাভার করা গেছে। উনি যে এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি, সেই ফাউন্ডেশনের সভাপতির নাম ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ হোসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, নেপালে পরিচিত জনের খোঁজে এরশাদ ভাইকে ফোন দেয়ার আগে আলতাফ ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম। ফোনে উনার সাথে ইংরেজিতে কথা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি হেসে জানালেন, “আমি কিন্তু বাংলায় কথা বলতে পারি”। আশ্চর্য হয়ে যাবো, এমন সময় তিনি বললেন, “আমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক ডিগ্রি স¤পন্ন করেছি।” আমি জানালাম, “আমিও তো সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক শেষ করে এখন মাস্টার্স করছি”। ভালোই হলো, উনি দীর্ঘদিন পরে বাংলায় কারো সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে সে সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করলেন।
হোটেলে পরিচয় পর্ব শেষে এরশাদ ভাইকে আমাদের মোট থাকার সময়ের ব্যাপারে জানালাম- সাড়ে তিনদিন। এর মধ্যে কোথায় কোথায় বেড়ানো যাবে, সেটা বুঝে আমাদেরকে একটি শিডিউল করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। সাথে একটা বাজেটের অনুরোধ। কারণ বাজেটের আলোকেই আমাদেরকে ডলার ভাঙিয়ে নেপালি রুপি বানাতে হবে। পরিচয় পর্ব শেষ করে হালকা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম সকালের নাস্তার জন্য। আমাদের প্লেন এয়ারপোর্টে পৌঁছেছে সকাল ৬টায়। এখন সাড়ে ৯টার মত বাজে। এরশাদ ভাইয়ের অফিসের সময় হয়ে এসেছে। তাই তিনি আমাদের সাথে নাস্তা করতে পারবেন না। তবে তিনি একটি হোটেলে আমাদেরকে বসিয়ে দিয়ে তারপর গেলেন। যেহেতু তখনও আমাদের টাকা ভাঙানো হয়নি, তাই তিনি আমাদেরকে অনেকগুলো নেপালি রুপি দিয়ে গেলেন আপাতত চলার জন্য। আমরা উনাকে কষ্ট দিয়ে ডলার দিলাম, যেন রাস্তায় সুযোগ করে তিনি ভাঙিয়ে রাখেন। উনি চলে যাওয়ার পরে হোটেলের মেনু দেখে খাবারের অর্ডার দেয়ার পালা। কাঠমান্ডু ট্যুরিস্ট শহর হওয়ায় প্রচুর হোটেল। হোটেলের লোকেরা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন সাধারণত। সাথে হিন্দি তো পারেনই।
আমরা গত এগারো দিনের সফরের মধ্যে এই প্রথম ধাক্কা খেলাম। তুরস্ক মুসলিম দেশ হওয়ায় সেখানে খাবার হালাল হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু নেপাল হিন্দু অধ্যুষিত দেশ। এখানকার হোটেলের খাবার পছন্দ করতে হবে হালাল হওয়ার ওপর ভিত্তি করে। সে হিসেবে আমরা মাছ খুঁজলাম মেনুর মধ্যে। কিন্তু সকালে মাছ নেই। সবজি, পাউরুটি, ডিম মামলেট, ফলের জুস নিয়ে একটি সেট মেনু পেলাম। মূল্য হেব্বি চড়া। যাহোক, অর্ডার করলাম। কিন্তু খাবার সরবরাহ করার পর ঘটল বিপত্তি। ডিম মামলেটের মধ্যে গোশতের টুকরো। হোটেলের ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করার পরে সে গোশতের টুকরো থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করল। ইসলামী শরিয়াহ অনুসারে তো হালাল পশুর গোশতও হালাল হওয়ার জন্য সেটা আল্লাহর নামে জবেহ করার শর্ত রয়েছে। হিন্দু দেশের হিন্দু মালিকানাধীন হোটেল হওয়ার কারণে সে সম্ভাবনা এখানে নেই। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু হোটেল হলেও মুসলমানদের কথা বিবেচনায় নিয়ে হোটেল মালিকেরা মুসলমানদের দিয়ে পশু জবাই করে নেন হোটেলে পরিবেশনের জন্য। কিন্তু নেপালে তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাই বাধ্য হয়েই ডিমটা আর খাওয়া হলো না। সবজি দিয়ে পাউরুটি আর জুস খেয়েই নাস্তা শেষ করলাম। খাবার শেষে ওয়েটার এসে আস্ত ডিম প্লেটে থেকে যাওয়ায় আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আপনারা কি ভেজিটারিয়ান (সবজিভোগী)?”। কী বলব, চুপ থাকলাম।
নেপালের হোটেলে ইন্ডিয়ান হিন্দি গান শুনে হঠাৎ একটু থমকে গিয়েছিলাম। নেপালে ইন্ডিয়ার গান কেন! কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল, আমাদের বাংলাদেশেও তো এমনটাই চলে অহরহ। নেপালে হলে সেটা আশ্চর্যের কি আছে! তবুও আশ্চর্যই লাগল। বুঝলাম, আমাদের দেশে আমরা কত পরিমাণেই না অভ্যস্ত হয়েছি যে, নিজের দেশে এটা গায়েই লাগে না!!
নাস্তা শেষে হোটেলে ফিরে দেড় ঘণ্টার একটা ঘুম খুব জরুরি ছিল। সে ঘুমের চাহিদাটা না মেটালেই নয়। দীর্ঘ প্রায় সাত ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের এয়ার জার্নি করে প্রায় পাঁচ হাজার তিনশত কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছি নেপালে। তাই, হালকা একটু ঘুম দিয়ে নিলাম।
ঘুম থেকে উঠেই আমাদেরকে যেতে হবে, হেসরার (HeSRA) অফিসে। Health Services and Relief Association (HeSRA) হচ্ছে, একটি স্বাস্থ্য ও রিলিফ বিষয়ক সামাজিক সহযোগিতামূলক এনজিও। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংস্থা সামাজিক দায়বদ্ধ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কর্মসূচি পালন করে থাকে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের হোটেলে আসবেন হেসরার কর্মকর্তা জিয়া ভাই। আমরা ঘুম থেকে ওঠার যে সময় জানিয়েছিলাম এরশাদ ভাইকে, সে মোতাবেক ঠিক সময়মত জিয়া ভাই এসে হাজির হয়েছেন। আমাদের ব্যাপক ক্লান্তির ঘুমের কারণে তিনি আমাদেরকে আরো কিছুটা সময় রেস্ট করার সুযোগ দিলেন। রেস্ট শেষে যথারীতি আমরা জিয়া ভাইসহ রওয়ানা করলাম হেসরার অফিসের দিকে। জিয়া ভাইও বাংলায় কথা বলতে পারেন। তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে স্নাতক শেষ করে আবার ফিরে গিয়েছেন নেপালে। টেনে টেনে বাংলা বলেন, শুনতে বেশ চমৎকার শোনায়। আমরা পৌঁছে গেলাম হেসরার অফিসে। সেখানে আমাদের দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ। সেখানের পরিচালক, ডা: নাসিম আহমেদ। উনার সাথে আমাদের মতবিনিময় হলো। তিনি এর আগে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানেন ভদ্রলোক। নেপালের বিভিন্ন বিষয়ে আমরা জানলাম উনাদের নিকট থেকে। নেপাল অনেকটা ভারতের সাথে মাখামাখি। নেপালের মধ্যে ভারতীয় বা ভারতের মধ্যে নেপালিদের যাতায়াতে কোন ভিসা লাগে না। তাদের পরস্পরের মধ্যে বর্ডার খোলা। নেপালের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব কিছুর ওপর ভারতের ব্যাপক আধিপত্য। এটাকে নেপালিরা কেউই ভালো চোখে না দেখলেও তারা এভাবেই বাধ্য হয়ে বসবাস করছে। তাদের মতে, পরাধীনতার আগলে একটি স্বাধীন দেশের নাম হচ্ছে নেপাল। এটা যে কেমন দুঃখের, সেটা তাদের বর্ণনাভঙ্গি দেখেই বুঝা গেল! ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে কিছুক্ষণ কথা বলার পর নামাজের সময় হলে আমরা অফিসেই জামায়াতে নামাজ পড়লাম। এরপরে খেতে খেতে আমাদের এতসব জানা হলো। চমৎকার খিচুড়ি রান্না। বাংলাদেশী একটা ফ্লেবার আছে খিচুড়ির মধ্যে। রহস্যটা কী।! রহস্য হচ্ছে, এই জিয়া ভাইই খিচুড়ি রান্না করেছেন। আমাদের কথা মাথায় রেখে তিনি বাংলাদেশের কিছুটা ফ্লেবার দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অফিসের সবাই একসাথে খাওয়ার বন্দোবস্ত। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের দেশের মত করে মাদুরে বসে খাওয়া দাওয়া হলো। খিচুড়ির স্বাদ আর বসার ফ্লেবার দুটোই আমাদেরকে দেশের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল বারবার।
আমরা এখান থেকে বেড়ানোর জন্য কাঠমান্ডু থেকে পশ্চিম দিকে কাছাকাছি একটি জায়গা, Swoyambhunath Stupa (স্বম্ভনাথ স্তুপা)-তে গেলাম। এখানে প্রচুর বানরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বলে এটাকে ‘বানরের মন্দির’-ও বলা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, এই বৌদ্ধ মন্দিরটি তৈরি করেন রাজা মনোদেবা এবং পরবর্তীতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সম্ভনাথ এটিকে বৌদ্ধদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করেন। ধারণা করা হয় এখান থেকেই কাঠমান্ডু শহরের শুরু হয়েছিল। যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সিক্যাব ভাড়া নিয়েছি। এতো বেশি ভাড়া জেনে বুঝলাম অনেক দূর হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু, আসলে তা মোটেই নয়। যখন পৌঁছলাম তখন বুঝলাম অন্তত ভাড়ার তুলনায় দূরত্ব খুব কমই। মেপে মেপে যেটাকে বললে দাঁড়ায় মাত্র তিন কিলোমিটার। কাঠমান্ডু শহরে এতো বেশি মোটর সাইকেলের রহস্যটা বুঝতে পারা গেল। উঁচু পাহাড়ের ওপরে টেম্পেলটি। লম্বা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। ওখান থেকে গোটা কাঠমান্ডু শহর দেখা যায়। এখানে আমরা ইচ্ছেমত ছবি তুললাম। ছবি তুলছি তিনজন মিলে। ও আচ্ছা, তোমাদের তো বলাই হয়নি। আমাদের সাথে আরেক খুদে বন্ধু আলতাফ যুক্ত হয়েছে টে¤পলে যাওয়ার সময়। ও আমাদের পথ চিনিয়েছে বাকি দিনগুলোতে। এবার এইচএসসি সমমানের পরীক্ষা দিয়েছে। বাংলাদেশে পড়তে আসতে চায়। বুয়েটে পড়ার ব্যাপারে চিন্তা করছিল তখন। ফলে আমাদেরকে পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছে, যখন জেনেছে আমার ইউনিভার্সিটির পরিচয়। ও এরশাদ ভাইয়ের ছোট ভাই। মানে ফাতিমাদের ছোট চাচ্চু। খুব ভালো ইংরেজি বলে। তাই ওর সাথে কমিউনিকেশন খুব সহজই হয়েছে আমাদের।
দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় এ স্তুপাতে। সেখানে উঠে ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ দেখি এক পর্যটক শহরের ছবি তুলছেন খুব মনোযোগ দিয়ে। হাতে দামি ক্যামেরা আর স্ট্যান্ড। বুঝলাম, শখের অথবা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। উনার ছবি তোলার ভঙ্গিটা বেশ মনে ধরল। খুব কসরত করছেন ছবি তোলার জন্য। আমি তাঁর এই ভঙ্গিটারই ছবি তুলে নিলাম। অনুমতি কিন্তু নেইনি। কারণ অনুমতি নিতে গেলে তো বেচারা জেনে যাবেন এবং তাঁর এই প্রাকৃতিক ভঙ্গিটা আর পাওয়া যাবে না। যদিও অনুমতি ছাড়া কারো ছবি তোলা অনুচিত। যাহোক, পরপর কয়েকটি ছবি নিয়ে নিলাম। আগে অনুমতি না নিলেও ছবি তোলা শেষে তাকে দেখালাম। লোকটা বেশ খুশিই হলেন। তাই আর ডিলিট করা লাগলো না ছবিগুলো। আমাদেরকে ধন্যবাদ জানালেন। লোকটার সাথে দুই দিক থেকে মিল হওয়ায় বোধ হয় লোকটা খুশিই হয়েছেন। এক- দু’জনই পর্যটক। দুই- দু’জনই ফটোগ্রাফি পছন্দ করি।
সেখান থেকে আসলেই গোটা কাঠমান্ডু শহরকে একসাথে দেখা যায়। চারদিকে দেখছিলাম। অদূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। বড় পাহাড়টার নাম জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু আলতাফ বলতে পারল না। বললাম, চলো ওটার একটা নাম দিয়ে দেই। যেই বলা সেই কাজ। নাম দিয়ে দিলাম, ‘জাবালে সিরাজ’। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আরেকটি পাহাড় দেখিয়ে সালাহউদ্দীন ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, ওটার নাম বলতে পারবেন? আমি না সূচক উত্তর করতেই উনি বলে উঠলেন, ‘জাবালে সালাহউদ্দীন’। সবাই হো হো করে হেসে দিলাম। ‘জাবালে আলতাফ’ নাম দেয়ার মত আর পাহাড় সেই মুহূর্তে পেলাম না। সেখানে মেলা বসেছে ছোট ছোট জিনিসপত্র বিক্রির জন্য। অনেক কিছুই আছে পর্যটকদের জন্য।
শুরুতে গৌতম বুদ্ধের ছবি টাঙানোর কথা বলেছিলাম। আবার কিছুক্ষণ আগের বর্ণিত টে¤পলটিও বৌদ্ধদের। দুই মিলিয়ে তোমাদের ধারণা হতে পারে যে, এখানে আসলেই অনেক বেশি বৌদ্ধের বসবাস। আসলে ব্যাপারটি তেমন নয়। গৌতম বুদ্ধের ছবি নানান জায়গায় টাঙিয়ে টাঙিয়ে “বৌদ্ধ নেপালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন” কথাটি লিখে রাখার পেছনে কারণ হলো, অন্য আরেকটি দেশ গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান সেদেশে বলে দাবি করার বিপরীতে নেপালিরা তাদের দাবিকে শক্ত করে তুলে ধরার মানসেই এমন কাজটি করছে। যাহোক, নেপাল হিন্দুপ্রধান দেশ। নেপালের পপুলেশন সেন্সাস ২০১১ অনুযায়ী নেপালের মোট ২৬৪৯৪৫০৪ জন জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা কোটির ঘরে, ২১৫৫১৪৯২ জন তথা ৮১.৩৪ শতাংশ, বৌদ্ধের সংখ্যা লক্ষের ঘরে, ২৩৯৬০৯৯ জন তথা ৯.০৪ শতাংশ আর মুসলিমের সংখ্যাও লক্ষের ঘরে, ১১৬২৩৭০ জন যা শতাংশে বললে দাঁড়ায় শতকরা ৪.৩৯ ভাগ। যদিও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বছর পেরিয়ে গেছে, ফলে এসব সংখ্যা ও অনুপাতের হিসেবেও পরিবর্তন এসেছে নিশ্চয়ই। আরো কিছু বিষয় থাকে, সরকারি হিসাবের ওপর অনেক ক্ষেত্রে দেশের সব মানুষ আস্থা রাখতে পারে না। যেমন, নেপালের কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি, যাদের ধারণা, বর্তমানে সেখানে মুসলমানদের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৮ শতাংশ, কিন্তু সরকার সেভাবে করে প্রকাশ করতে চায় না।
সেখান থেকে ফিরে আমরা চলে গেলাম ইসলামী সাং নামক এনজিও-র অফিসে। এনজিওর প্রধান জনাব ইসলাহীকে দেখতে পেলাম বিল্ডিংয়ের নিচে কয়েকজনকে নিয়ে গোল করে চেয়ারে বসে আছেন। খুব সাদামাটা ভদ্রলোকের বয়স চল্লিশ-বিয়াল্লিশ হবে হয়ত। শুভ্র চেহারা। মুখে বড় বড় দাড়ি। ভালো ইংরেজি বলতে পারেন। আমাদেরকে উনার অফিস রুমে নিয়ে যেতে বললেন। আমরা গিয়ে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতেই উনি এলেন। উনার সাথে উনার পর্ষদের আরো বেশ কয়েকজন এসেছেন। মনে হলো- আমরা যাবোÑএর জন্য অনেককেই তিনি আসতে বলেছেন আগে থেকেই। সেখানে হিসরার পরিচালক সেই ডাক্তার সাহেবকেও দেখলাম। সাথে দেখা হলো ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ ভাইয়ের সাথে। এই ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ আর জুনিয়র আলতাফ তথা ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ কিন্তু আলাদা। ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ ভাই বাংলা বলতে পারেন। উনি বুয়েট থেকে বিএসসি শেষ করে গেছেন প্রায় দেড় যুগ আগে। বললেন, “বাংলাটা ছাড়িনি। মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে প্র্যাকটিস করি, যদিও প্র্যাকটিসের সুযোগ কম হয়”। তবে কথার মধ্যে মধ্যে দু-একটি বাংলা শব্দ ভুলে যাচ্ছিলেন তিনি। আমরা উনাকে সুযোগ করে দিতে তাই বাংলাতেই উনার সাথে আলাপ করলাম বেশ। উনি কাঠমান্ডু থেকে দুই দিনের জন্য নিজ জেলায় যাচ্ছেন। যেহেতু আগামী দুই দিন থাকতে পারবেন না, তাই আমাদের নিকট থেকে এখনই বিদায় নিয়ে নেবেন। তবে না থাকতে পেরে খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। নেপালে আমাদের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা শুনলেন। এরপর উনার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি এরশাদ ভাইকে আমাদের ভালোমত সহযোগিতা করার অনুরোধ জানালেন। আর আমরা ফেরত আসার আগে উনি বাড়ি থেকে ফিরতে পারলে অবশ্যই দেখা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিদায় নিলেন। আমরা এনজিও-র সেন্ট্রাল কমিটির অন্যদের উপস্থিতিতেই জনাব ইসলাহী সাহেবের সাথে মতবিনিময় করলাম। উনি বাংলাদেশের ব্যাপারে খোঁজ খবর জানলেন এবং আমাদেরকে উনার এনজিও-র যাবতীয় কার্যক্রমের ব্যাপারে জানালেন। অনেক গোছালো কাজ করেন উনারা। বিশেষত সে দেশে ইসলাম প্রচারের কাজ করেন খুব যত্নের সাথে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন বাধা নেই। সরকারের নিকট রেজিস্টার্ড এনজিও তারা। ইসলামের ব্যাপারে দেশবাসীকে জানান। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলেও উনাদের নিয়মিত প্রোগ্রাম হয়। উনাদের এই প্রচারণায় অনেকেই ইসলামের ব্যাপারে জানতে পারছেন এবং প্রতি মাসেই বেশ কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন। সেখানেই ২-৩ জন্য ভাইয়ের সাথে দেখা হলো, যারা মুসলমান হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বেশ বয়স্ক। তিনি ফুলটাইম দায়ী হিসাবে আত্মনিয়োগ করেছেন। ভদ্রলোক কিছু কিছু বাংলা বলতে পারেন। আরেকজন এয়ারলাইন্সে চাকরি করেন। তিনিও আন্তরিকতার সাথে ইসলামী সাং-এ সময় দেন। উনাদের সাথে কথা বলতে বলতে এশার নামাজের সময় হলো। উনাদের অফিসের পাশেই দুইটা বড় মসজিদ। দুই পাশে দুইটি মসজিদ। শহরের মধ্যে মসজিদ সংখ্যা অনেক বেশি না হলেও পাশাপাশি দু’টি মসজিদ এখানে। যতদূর মনে পড়ে সম্ভবত মসজিদ দুইটির সাথেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নেপালে সেদিনই প্রথম তারাবিহ। দেশের বাইরে এই প্রথম রোজা করছি। ভালোই রোমাঞ্চকর লাগছে। আমরা সবাই আলাপ শেষ করে মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম। মসজিদে গিয়ে বেশ অবাক হলাম। প্রচুর মোটর সাইকেল পার্ক করা। সবাই দূর দূরান্ত থেকে নামাজ পড়তে এসেছে। আগেই বলেছিলাম, সেখানে মোটর সাইকেল অনেক বেশি। সেটারই প্রমাণ আবারো পাওয়া গেল। খতম তারাবিহ শুরু হলো। আমরা নামাজ শেষ করে পাশের মসজিদের সামনে এলাম। সে মসজিদে নামাজ শেষে অপেক্ষা করছিলেন প্রিয় এরশাদ ভাই। আমাদেরকে মোটর বাইকে করে পৌঁছে দেয়ার জন্য রওয়ানা হলেন হোটেলের দিকে। এক বাইকে তিনজন চড়া কড়াভাবে নিষিদ্ধ। তাই আরেকজন ভাইকে প্রস্তুত রেখেছিলেন মোটর বাইকসহ। আমরা দুইজন দুই বাইকে চড়ে বসলাম। রাস্তা দিয়ে আসার সময় বেশ কয়েক জায়গায় ইনডোরে চলমান গানের আওয়াজ ভেসে এলো কানে। এরশাদ ভাই জানালেন, ইদানীং কাঠমান্ডুতে ডিজে পার্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে; রাত একটু গভীর হলেই শুরু হয় গানবাজনা, চলে রাতভর। আরোও কিছু সমস্যার কথা জানালেন তিনি। যেগুলো অনেক বেশি শঙ্কার। যুবসমাজের মধ্যে নৈতিকস্খলন দেখা দিচ্ছে।
তারাবিহ তো হলো, এবার সাহরির কী হবে? হোটেল তয়োমায় তো সাহরির ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের রমজানের আমেজ এখানে নেই। অল্প কিছু মুসলমানের বসবাস। তাই হোটেলে সাহরির আয়োজন হওয়াটা কিছুটা অস্বাভাবিক। চিন্তার বিষয়। শেষমেশ সালাহউদ্দীন ভাইকে হোটেলে রেখে আমরা কাছের একটি হালাল হোটেলে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে। তাদেরকে সাহরির জন্য খাবার হবে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই তারা আশ্বস্ত করলেন। আমরা অর্ডার করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম এবং খাবার নিয়েই ফিরলাম। এরশাদ ভাই আমাকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলেন। মসজিদের ওখানে অপেক্ষমাণ ছোট ভাইকে নিয়ে বাসায় ফিরবেন তিনি।
অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম আমরা। সাহরির সময় নিজেদেরকেই জাগতে হবে। বাংলাদেশের মত পাশের কেউ এসে ডেকে দেবে না। সাহরির সময় জাগতে পেরে আল্লাহর শুকরিয়া করলাম এবং সাহরি খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। সকালে উঠেই আমরা চলে যাব পর্বতের জেলা পোখাড়াতে। পোখাড়ার অজানা সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতীক্ষায় থেকে আমাদের প্রথম দিন ও রাত শেষ হলো।
কাল দেখব পোখাড়া, ইনশাআল্লাহ। যেতে সময় লাগবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। তারপর পোখাড়া থেকে ফিরে যে একদিন সময় পাব, সেদিন কাঠমান্ডুর অবশিষ্ট বিশেষ বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে নেয়ার চেষ্টা করব, যতটা সম্ভব। সেখানে দুর্বার স্কয়ার, নারায়ণহিতি দুর্বার জাদুঘর (যা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজার প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে), সার্কের সদর দপ্তরসহ আরো কত কী অপেক্ষা করছে দেখার জন্য। দেখা শেষে ফিরে আসব সবার সেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা মনোরম দৃষ্টিকাড়া প্রিয় বাংলাদেশে!
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ