নববর্ষের আনন্দ -হালিমা খাতুন মুক্তা
গল্প এপ্রিল ২০১৭
আজ সিয়াম খুব সকালে উঠেছে। ফজরের নামাজ পড়ে সে আর ঘুমায়নি। রাতে সে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর একটা কারণ হলো গ্রাম থেকে তার নানু ভাইয়া আসছে আজ। নানু ভাইয়া রাতেই রওনা দিয়েছেন। তাই সিয়াম নানুর জন্য অপেক্ষা করছে। নানু হয়তো এখুনি এসে পড়বেন। সিয়ামের কাছে নানু মানেই অন্যরকম অনুভূতি, ভালো লাগা, ভালোবাসা। সিয়ামের কাছে একটু বেশিই। কারণ নানুু এলে আম্মু বকা দিতে পারেন না। নানু অনেক কিছু জানেন। তাছাড়াও নানুও তাকে এবং মাহিকে অনেক ভালোবাসেন। অনেক গল্প শুনান। মাহিতো নানুর পেছনে পেছনে লেগে থাকে ভূতের গল্প শুনার জন্য। মাহি সিয়ামের বোন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর সিয়াম সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তারা ঢাকা থাকে। সিয়ামের বাবা একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন। তখন ৭টা বাজে, হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। সিয়াম লাফ দিয়ে যেয়ে দরজা খুললো। নানুকে সালাম দিল। নানু সিয়ামের মাথায় হাত বুলিয়ে সালামের উত্তর নিলেন। বললেন কেমন আছো ভাইয়া তুমি? আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন নানু ভাই। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। সিয়ামের আম্মা দৌড়িয়ে এলেন। বাবা, আপনার পথে কোনো অসুবিধা হয়নি তো। না! হয়নি। মাহি কই? বললেন নানু। মাহি ঘুমাচ্ছে বাবা। আর সিয়াম তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। ওর স্কুল মাঝে মাঝে বন্ধ যাচ্ছে। স্কুলে ঝঝঈ সিট পড়েছে। দুপুরে দাদু, সিয়াম আর মাহি খাবার টেবিলে বসেছে। সিয়ামের মা ভাত বেড়ে দিচ্ছেন। নানু বললেন, সিয়াম ফ্যানটা ছাড়ো। মা বললেন, হ্যাঁ বাবা! এখন ফাল্গুন মাস চলছে। গরম পড়ছে। নানু বললেন, হ্যাঁ গ্রামে বসন্ত বুঝা যায়। কিন্তু শহরে সেটা বুঝা যায় না। মা বললেন, ঠিক বলেছেন বাবা, ইচ্ছা ছিল আমরা বাড়িতে যাবো। কিন্তু আপনার জামাইয়ের যে ছুটি কম। তার জন্য কোথাও বেরও হওয়া যায় না। এমন সময় মাহি বললো, নানু তুমি আমাদের গল্প শোনাবে। নানুু বললেন, হ্যাঁ খাওয়া শেষ করো। তারপর শুনাবো। মাহি বলে ভূতের গল্প কিন্তু। সিয়াম মধ্যে থেকে বলে উঠলো, নানু অন্য গল্প শুনাবেন। মাহি তো চেঁচিয়ে উঠলো, নানু আমার কথা শুনবে তুমি। আসলে সিয়াম আর মাহি সারাক্ষণ খুনসুটি করতেই থাকে। আম্মু তো মাঝে মাঝে রেগে বলে তোরা এত দিনের ছোট বড় তারপরেও তোদের বাধাবাধি। সিয়ামকেই আম্মু শুধু বকা দেয়। বলে ও ছোট তুমি বড়। বড় হওয়াই যত সব জ্বালা। নানু আর সিয়াম দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েছে। কারণ নানুু রাতে জার্নি করেছেন। আর সিয়াম তো খুব সকালে উঠেছিল। মাহির তো সময় কাটছে না। সে আম্মুকে বার বার বলছে, আম্মু নানুু তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কখন উঠবেন। সন্ধ্যায় সিয়াম পড়ছে। মাহিও নানুর কাছে বই নিয়ে বসেছে। পড়ছে তো না নানুর সাথে গল্প করছে। সিয়াম বাংলা নিয়ে একটা গদ্য পড়ছে। গদ্যটার নাম গ্রাম বাংলার নববর্ষ। স্যার বলেছেন, এটা ভালো করে পড়তে। এর ভেতর থেকে স্যার প্রশ্ন ধরবেন। সিয়াম বললো, নানু তুমি আমাকে নববর্ষ সম্পর্কে বলো। গ্রামে অনেক মজা হয় না? নানুু বলেন, শুধু মজা না, অন্য রকম আনন্দ। পুরনো বছর যাবে নতুন বছর আসবে। মা-চাচিরা সবাই ঘরদোর গোছগাছ শুরু করতেন। ভালো-মন্দ রান্না হতো। সে অন্য রকম আমেজ থাকতো। বুঝলে নানু ভাই। ইলিশ পান্তা খাওয়ার প্রচলন ছিল না। তবে আনন্দটা হতো ফাটাফাটি। বিশেষ করে আমরা ছোটবেলায় হাটের দিনের অপেক্ষায় থাকতাম। কখন বাবা হাট থেকে ফিরবেন। হালখাতার মিষ্টি নিয়ে আসবেন। আমরা কয় ভাই-বোন মিলে তাই খেতাম। আমাদের পাশের গ্রামে অনেক বড় মেলা হতো। আজো গ্রামে অনেক বড় মেলা হয়। বিশেষ করে গুড়-চিনির সন্দেশ, কদমা আর বাতাসা, এগুলো তো মিস যেত না। সেই সকালে উঠেই প্রস্তুতি নিতাম মেলায় যাওয়ার। সিয়াম বলল, দাদু আমি আগের বছর মেলায় গিয়েছিলাম। দাদু বললেন, তুমি গ্রামের মেলায় আসো এবার দেখবে কত আনন্দ। একেবারেই ভিন্ন, আসলেই তোমরা গ্রামের আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবে না। সিয়াম বলল, দাদু ভাই আপনার কথা শুনে আমার গ্রামের মেলায় যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠে না। বন্দি হয়ে থাকতে হয় ঘরে। মা বলেন, এখানে যাস না ওখানে যাস না আরো কত কী? নানু বললেন, আম্মু তো তোমার ভালোর জন্যই বলেন। সিয়াম বলল, নানুু ভাই আপনার কাছে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আমার জন্য সহজ হলো। স্যার প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে পারব। ঐ দিনই রাতে সিয়াম ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখলো সে গ্রামে গেছে। নানু ভাই মাহি আর ও মেলায় অনেক বেড়িয়েছে। মাহি মাটির হাঁড়ি পাতিল কিনেছে। আরও সুন্দর একটা বাঁশি কিনেছে। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সিয়াম নানুুকে স্বপ্নের কথা বলল। নানু বললেন, তুমি যে এগুলো নিয়ে ভেবেছ, মানুষ যা ভাবে সাধারণত তাই সে স্বপ্নের ভেতর দেখে। সিয়াম তার আম্মুকে খুব করে ধরলো এবার আর শুনবো না। বাবার ছুটি না থাকলেও আমরা কিন্তু মেলার সময় গ্রামে যাবো। স্বপ্ন দেখার পর থেকে সিয়ামের গ্রামে নববর্ষের মেলায় যাওয়ার ইচ্ছেটা দ্বিগুণ হলো। কখন সে সময়টা আসবে! তাছাড়াও মাঝে মাঝে গ্রামে বেড়াতে যাওয়াটাও খুব আনন্দের।
আরও পড়ুন...