ত্যাগী এক গভর্নর   -আবদুল হালীম খাঁ

ত্যাগী এক গভর্নর -আবদুল হালীম খাঁ

গল্প ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা) আবু দারদাকে (রা) সিরিয়ার গভর্নর নিয়োগের প্রস্তাব দিলে তিনি সে প্রস্তাব বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। তাকে রাজি করানো কঠিন হয়ে পড়ে। খলিফা এ প্রস্তাবের ওপর অনুরোধের চাপ সৃষ্টি করলে তিনি শর্তসাপেক্ষে রাজি হলেন এবং বললেন : আমাকে যদি কুরআন ও হাদিস শরিফের শিক্ষা প্রদানসহ নামাজে ইমামতি করার অনুমতি দেন, তবেই আমি এ দায়িত্ব পালন করতে পারি। হজরত ওমর (রা) এ শর্ত তিনটি মেনে নিলেন। তারপর আবু দারদা (রা) সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উদ্দেশে রওনা হন।
আবু দারদা (রা) সিরিয়ার গভর্নর থাকাকালীন সময়ে খলিফা ওমর (রা) গোপনে তাঁর অবস্থা জানার জন্য এক রাতের আঁধারে গভর্নর আবু দারদার বাড়িতে পৌঁছে তার ঘরের দরজার কড়া নাড়লেন। ঘরের দরজা খোলা পেয়ে ওমর ফারুক (রা) অন্ধকার ঘরে ঢুকে পড়লেন। আবু দারদা তার প্রবেশ আঁচ করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখেন ওমর (রা)। তাঁকে খোশআমদেদ জানিয়ে বসতে বললেন। মুসলিমবিশ্বের দুই মহান নেতা রাতের অন্ধকারেই একান্ত পরিবেশে পারস্পরিক আলোচনায় নিমগ্ন হয়ে পড়লেন।
আবু দারদার (রা) ঘরে কুপি জ্বালানোর মতো তেল না থাকায় রাতের আঁধারে তাঁরা একে অপরকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। এ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ফাঁকে ওমর (রা) দারদার বালিশটি কেমন আরামদায়ক, না সাধারণ তা হাত বাড়িয়ে দেখেন। তিনি দেখতে পান যে, আবু দারদা তাঁর ঘোড়ার পিঠে ব্যবহৃত কাপড়টিকেই রাত্রিবেলা বালিশ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
ওমর ফারুক এবার আবু দারদার বিছানার অবস্থা কেমন তা হাত বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করেন। দেখেন গুঁড়ো পাথর মিশ্রিত বালি সমতল করে নিয়ে তাকেই তিনি বিছানা বানিয়েছেন। এবার খলিফা ওমর (রা) আবু দারদার লেপ-তোশকের খবর নিতে লাগলেন। দেখতে পেলেন যে, লেপ-তোশক বা কম্বল ইত্যাদি বলতে পাথর কণার বিছানায় একটি মাত্র পাতলা কম্বল যা দামেস্কের প্রচন্ড শীত প্রতিরোধে মোটেই উপযোগী নয়।
এসব দেখে তিনি আবু দারদাকে বললেন, আমি কি আপনার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য বায়তুলমাল থেকে উপযুক্ত ভাতার ব্যবস্থা করিনি? আমি কি আপনার মাসিক ভাতা যথাসময়ে আপনার কাছে প্রেরণ করিনি?
আপনার এ দুরবস্থায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
আবু দারদা (রা) উত্তর দিলেন, হে খলিফাতুল মুসলিমিন, রাসূল (সা) এর সেই হাদিসটি কি আপনার মনে পড়ে, যা রাসূল (সা) আমাদের শুনিয়েছিলেন?
ওমর (রা) বললেন, কোনটি?
রাসূল (সা) কি আমাদের বলেননি? দুনিয়াতে যাদের ধন সম্পদ ও অর্থকড়ি যেনো একজন মুসাফিরের সরঞ্জামাদির চেয়ে বেশি না হয়।
তিনি আরো বললেন, হে খলিফাতুল মুসলিমিন, এ সত্ত্বেও আমরা কী করছি?
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ