জুম্মির আকাশ

জুম্মির আকাশ

তোমাদের গল্প আগস্ট ২০১৩

শাকিল মাহমুদ

চেহারায় মিষ্ট স্বভাব থাকলেও জুম্মির দাদি প্রায়ই বলে, জুম্মি তুই তোর ছোট চাচার মতো বাদর হয়েছিস। জুম্মি বলে, আচ্ছা দাদি, চাচা বাদর হলে তো চিড়িয়াখানায় থাকার কথা, সে তো বাসায় থাকে। ওদের বাসার সবাই হাসে। কী আর করার, পাকনা মেয়ের কথায় হাসা ছাড়া আর কীইবা করার আছে। বরাবরই সে দুষ্টামী আর পাকা কথায় ওস্তাদ। একবার ওরা সপরিবারে ওর দাদা-দাদিসহ বেড়াতে যাচ্ছে, হঠাৎ ওর দাদাকে বলে উঠলো, দাদা তুমি পেছনে বসো, দাদিকে আমার পাশে বসতে দাও। একটু পরে ওরা হোটেলে খেতে গেলে জুম্মির সে আবদার একটাই, আগে আইসক্রিম, তারপর দুপুরের খাবার। কী আর করা, অগত্যা ওর দাদাকে আগেভাগেই আইসক্রিম নিয়ে আসতে হলো। ওর দাদাও কম যান না, আচ্ছা এই যে আমার হাতে আইসক্রিম, দেবো ঠিক আছে, কিন্তু তার আগে ভাত খেতে হবে কিন্তু! কই আর যায়, জুম্মির চালাকিটা এবার খাটলো না, ভেবে ওর মা আর দাদি তো হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার অবস্থা। এতো গেলো জুম্মির দুষ্টামির কিছুটা। কিন্তু তার বনমানুষীর আরও অনেক গুন আছে। এই যেমন, একদিন ওর বাবা কয়েকটি সুন্দর ফুলের গাছ নিয়ে আসলো, টবসহ। তার মধ্যে সাদা গোলাপও আছে। জুম্মি কী ভেবে বলে ফেললো, আচ্ছা বাবা, তুমি ফুলগাছ এনেছো, চাচ্চু আনেনি কেন? অবশ্য ওর ছোট চাচা নয়ন তার রুমে বসেই কথাটা শুনে ফেলেছে। পরদিন ঠিকই চারটি ক্যাকটাস, একটা ঝাউগাছের মিনি টবসহ বেশ ক’টা ফুল গাছ নিয়ে হাজির নয়ন। জুম্মি’র সে আনন্দ দেখে কে? ড্রয়িংরুমে বসে জুম্মি আর ওর ছোট চাচা এক এক করে গাছগুলোকে টবে সাজাতে লাগলো। জুম্মির বিড়াল খুব পছন্দ। তাই একটি গাছ রাখা হলো, বিড়ালের মত এক টবে। আর অন্য গাছগুলোর একটিকে দেয়া হলো ব্যাঙের টব, অন্যটির ভাগ্যে নৌকা। আর ঝাউ গাছটি রাখা হলো সাধারণ টবে। এবার নয়ন বললো, জুম্মি, এই ঝাউগাছটা তোমার আম্মুর। জুম্মি একটু মুখ কালো করে বললো, না সবগুলোই আমার। আম্মুকে কিছুই দেয়া যাবে না। এবার সে চারটা টবই নিজের বুকে তুলে নিলো। নয়ন বললো, মা, চারটা একসাথে নিতে পারবা না, দুটা দু’টা করে নাও। এবার অবশ্য, জুম্মি একটা একটা করে সব গাছগুলো ওর বারান্দায় নিতে লাগলো। জুম্মির বারান্দার একপাশে থাকে গাছেরা। আর অন্যপাশে খাঁচায় এক জোড়া ঘুঘুপাখি, আর অন্য খাঁচায় চারটা মুনিয়া। পাখিগুলো ওর বাবাই কিনেছে। অবশ্য এ পাখিগুলোর সাথে ওর ইদানিং খুব ভাব। ওদের খাবার দেয়া, পানি দেয়া। আবার বৃষ্টিতে যাতে ভিজে না যায়, তাও দেখভাল করে জুম্মি। জুম্মি বরাবরই সবকিছু নিয়ে একটু কৌতূহলী। সে ছবি আঁকবে, তার কোনো ক্যানভাস থাকবে না। ওর চাচ্চুর লেখার পাণ্ডুলিপিটাই সে ছবির খেরোখাতা হিসেবে ব্যবহার করবে। একদিন রাত করে ওর চাচ্চু বাসায় ফিরেই চিৎকার শুরু করলো, ভাবি, ভাবি... আমার একটা পাণ্ডুলিপিও পাচ্ছি না, দেখো তো তোমাদের রুমে-টুমে আছে কী না? জুম্মির মা অনেক খোঁজাখুজির পর বললো, না কোথাও নেই। নয়ন তো রেগে-মেগে সারা! কী করবে, কিছুই বুঝতে পারছে না। রাগে গো গো করতে লাগলো। কম্পিউটারের সামনে বসে আছে, এমন সময় জুম্মি দৌড়ে এসে ওর চাচ্চুকে জড়িয়ে ধরে বললো, সরি চাচ্চু... সাথে সাথে ওর চাচ্চুর তিনটি লেখার ডায়েরি ওর চাচ্চুকে দিয়ে দিলো। নয়ন তো ওর ডায়েরি খোলামাত্র চোখ ছানাবড়া। ওমা, একী! সারা ডায়েরি জুড়ে জুম্মি ছবি এঁকেছে। নয়নের লেখার ডায়েরির পাশে যেসব খালি জায়গা সেখানেই ছবিগুলো এঁকেছে। পুরো পাতাজুড়ে মোমরঙের গন্ধ। নয়ন কাঁদবে না হাসবে কিছুই বুঝতে পারছে না। দম বন্ধ হলে মানুষ যেভাবে হ্যাঙ হয়ে বসে থাকে, সেভাবে চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে রইল। বললো, জুম্মি শোনো, এ লেখাগুলোই আমার বড় সম্পদ, অনেকদিনের লেখা। তুমি সবগুলো ডায়েরিতে এভাবে ছবি এঁকে, আমার লেখার বারোটা বাজিয়ে দিলে কেন? জুম্মি বললো, তাহলে আমাকে একটা ডায়েরি দাও, ওটায় আঁকবো। নয়ন বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। দেব। এরপর জুম্মিকে একটা নতুন ডায়েরি দেয়া হলো। এখন সে ডায়েরিতে সব ছবি আঁকে। আচ্ছা চাচ্চু, বৃষ্টি কোত্থেকে আসে? দেখ দেখ আমার বারান্দার সব গাছগুলো ভিজিয়ে গেছে, এতো পাজি কেন বলো তো চাচ্চু? ওই দেখো বৃষ্টিতে ঘুঘু পাখি দু’টো কেমন ডানা ঝাপটে ওড়াউড়ি করছে, আর মুনিয়াগুলোও ভয় পাচ্ছে। এভাবেই একা একাই বলে যাচ্ছিলো জুম্মি। নয়নের আদরের ভাতিজি। দু’জনের সাথে ভারি খাতির। বিশেষ করে নয়ন যতক্ষণ বাসায় থাকে, ততক্ষণে জুম্মির আবদারের শেষ নেই। চাচ্চু এটা হলো কেন?  তো ওটা কেমন করে হয়?  নয়ন অবশ্য নিজের মতো করে বোঝায়, শোনো, আকাশের ওপারে একজন বৃষ্টিমন্ত্রী আছেন, তিনিই মেঘ লালন পালন করেন। যেমন আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং তার সাথে অনেক অনেক মন্ত্রী। ঠিক তেমনি আল্লাহরও ক’জন মন্ত্রী আছেন। তাঁদের কেউ ভাগ্য লেখেন, কেউ বৃষ্টি নামান, কেউবা সওয়াব আর পাপের হিসেব রাখেন। এবার জুম্মি বলল, ও, আচ্ছা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ