জবা

জবা

গল্প জানুয়ারি ২০১২

শিরিন আক্তার সাথী..

মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে জবার। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ওজু করে আসরের নামাজ আদায় করে নেয়। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে কিছুই ভালো লাগছিল না তার। মাঝে মাঝেই এমনটি হয়। বাইরে বেরোলে হয়তো মনটা ভালো হবে- এ উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে জবা। সাধারণত মন খারাপ লাগলে ও প্রকৃতির রূপ দেখতে বের হয়। নীল আকাশ, সবুজ প্রকৃতি, পাখিদের কলতান ওর মন ভালো করে তোলে। একটি জবাফুল ছিঁড়ে নেয় গাছ থেকে। ছোট গুল্ম জবাফুল গাছটির বয়স তিন বছর। ছোট গাছ অথচ প্রতিদিন ৮-১০ অথবা ১২টি ফুল ফোটে। সবুজ পাতার মাঝে লাল ফুল। কী অপরূপ! মাঝে মাঝে মন হয় লাল-সবুজ পতাকার স্বরূপ। পাঁচটি পাপড়ির একটি ফুল জবা, কত সুন্দর!
এক সময় জবা কিন্তু জবাফুল এত পছন্দ করত না। মনে পড়ে তিন বছর আগে ও কোনো একদিন এ জবাগাছটি রোপণ করেছিল। একটি কচি ডাল আজ একটি ছোট্ট জবাগাছে পরিণত। অনাদরে বেড়ে ওঠা গাছটির কদর এখন অনেক। ঘরের পাশের এ গাছটি আজ সকল আনন্দের উৎস। স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে কত কথা। গত বছর ওর খালাতো বোন তামান্না আপুদের বাড়িতে গিয়েছিল জবা। হাসি-খুশি মনের মানুষ তামান্না আপু জবাকে খুব স্নেহ করত। গল্প বলতো, কবিতা শোনাতো। জবার কাছে মনে হতো, যে ফুলটির কদর নেই প্রায় তার নামে কেন জবার নাম রাখা হলো।
এ কথা শুনে তামান্না আপু ওকে চমৎকার সব গল্পকথা শোনালেন। যেগুলো জবাকে অনেক নতুন তথ্য জানতে সাহায্য করেছিল। তামান্না আপুদের বাড়ির পুকুরপাড়ে জবাফুলের গাছ ছিল। বাড়ির পাশেই বিস্তর ফসলি ক্ষেত। পুকুরপাড়ের একটা আমগাছ ক্ষেতের দিকে হেলানো ছিল। সেই হেলানো গাছে বসেই তামান্না আপু গল্প বলত আর জবা শুনত। তামান্না আপু জবাকে বলে, ‘জবা তুমি জান তোমার নাম একটি ফুলে নাম?’
জানি।
তবে অপছন্দ করার কী আছে? আসলে কি জান, তুমি এবং তোমার ছোটবোন তোমাদের দুই বোনের নামই খুব সুন্দর। জবা ও প্রভা। জবা হচ্ছে ফুলের নাম আর প্রভা মানে আলো। তো জবা আজ তোমাকে জবা ফুল সম্পর্কে বলব। কি, শুনতে চাও? জবা আগ্রহ প্রকাশ করে শোনার জন্য।
তামান্না আপু বলল, তুমি তো জান আমি ক্লাস টেনে পড়ি। সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। তো আমার পড়াশোনার বিভাগ হচ্ছে বিজ্ঞান। তুমি যখন ক্লাস নাইনে পড়বে তখন তোমাকেও একটি বিভাগ বেছে নিতে হবে। জবা প্রশ্ন করল কী কী বিভাগ?
তামান্না আপু বলল, বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিক। আমার বিভাগ ছিল বিজ্ঞান। আমি আমার বইতে ফুল সম্পর্কে পড়েছি। আর তুমিও জান ফুল খুব সুন্দর। জবা বলল, হ্যাঁ, ফুল আমার খুব ভালো লাগে। আমার প্রিয় ফুল হাসনাহেনা এবং বাগানবিলাস।
তামান্না আপু বলল, প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর সৃষ্টি হলো ফুল। তুমি, আমি, আমরা সবাই ফুলকে ভালোবাসি। লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, গোলাপি, সাদা কত রঙের কত রঙিন ফুল। যেমন- লাল রঙের জবা।
জবা বলল, সাদা বেলি, বেগুনি রঙের কলমি...
তামান্না আপু বলল, নীল রঙের নীলকণ্ঠ, অপরাজিতা। এ ছাড়া বকুল, রজনীগন্ধা, শিউলি, গন্ধরাজ, গোলাপ, গাঁদা, কামিনী, চাপা, বেলি, কৃষ্ণচূড়া আরো অনেক ফুল। এগুলোতো আমাদের দেশের ফুল। এ ছাড়া সারা পৃথিবীতে অনেক অনেক ফুল রয়েছে। জানো পৃথিবীর সবেচেয়ে বড় ফুলের নাম কী? ইন্দোনেশিয়ার র‌্যাফেলেশিয়া জাভা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুল। দেখ, সব ফুলের গন্ধও আবার এক নয়।
জবা বলল, হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রাণ খুবই সুন্দর। তাই আমি হাসনাহেনা ফুল পছন্দ করি। তামান্না আপু বলল, আর গন্ধের রাজা অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি গন্ধের ফুল গন্ধরাজ। এসব ফুলের বিভিন্ন প্রকারভেদও আছে। আর হ্যাঁ, জবাফুল পূর্ণতা অনুসারে সম্পূর্ণ ফুল, লিঙ্গ অনুসারে উভয়লিঙ্গ ফুল, অঙ্গের সমতানুসারে সমাঙ্গ ফুল, প্রতিসমতা অনুসারে বহুপ্রতিসম ফুল, গর্ভাশয়ের অবস্থান অনুসারে হাইপোগাইনাস ফুল। ওহ: তোমাকে তো বলাই হয়নি, জবা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম কী!
জবা প্রশ্ন করল, বৈজ্ঞানিক নাম আবার কী?
তামান্না আপু বললেন, বৈজ্ঞানিক নাম হলোÑ উদ্ভিদের গণ এবং প্রজাতির সমন্বিত নাম। যার ভাষা হচ্ছে ল্যাটিন। গণ ও প্রজাতির সমন্বয়ে নামকরণ করা হয় বলে একে দ্বিপদ নামকরণ বলা হয়। সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস দ্বিপদ নামকরণ প্রবর্তন করেছেন। জবা মনোযোগ দিয়ে শোনে।
তামান্না আপু আবার বলতে শুরু করেন, জবাফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘হিবিসকাস রোজা সাইনেনসিস’। আমাদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে জবাফুলের বিভিন্ন অংশ শনাক্তকরণ শেখানো হয়েছে। চল তোমাকে আজ শিখিয়ে দিই। জবাগাছ থেকে একটি জবাফুল ছিঁড়ে আনল। তামান্না আপু ফুলটি হাতে নিলেন। তারপর বললেন, জবা একটি সম্পূর্ণ ফুল। যে ফুলের বৃতি, দল, পুংকেশর ও স্ত্রীকেশর আছে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। তারপর ডান হাতে যথাক্রমে ফুলটির উপবৃতি, বৃতি, দলমণ্ডল, পুংকেশর ও স্ত্রীকেশর আলাদা করে রাখলেন।
সেদিন থেকে জবা তার নামটি দারুণ পছন্দ করে। সে জবাফুলকে ভালোবাসে। আজও সেসব কথা তার মনে পড়ে। হাতে নেয়া ফুলটির বৃতি, দল, পুংকেশর আলাদা করে রাখে। কিন্তু অসাবধানতায় স্ত্রীকেশরটির মাঝে ছিঁড়ে যায়। জবাগাছ থেকে আরেকটি ফুল ছিঁড়ে নেয়। সাবধানে বৃতি, দলমণ্ডল, পুংকেশর ও স্ত্রীকেশর আলাদা করে। এবার আর ভুল হয়নি। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। মা জবাকে ডাক দেয়, জবা ফুলগুলো রেখে চলে আসে আর ভাবে চমৎকার ফুল জবা। সবুজ পাতার মাঝে লাল ফুল যেন লাল-সবুজ পতাকার স্বরূপ। ক্লাস নাইনে জবারও পড়ার বিষয় হবে বিজ্ঞান। তামান্না আপুর মত সেও প্রভাকে অনেক কিছু শেখাবে। আল্লাহই একমাত্র স্বপ্নপূরণকারী। জবা প্রার্থনা করে, আল্লাহ যেন সকলের সুন্দর স্বপ্ন পূরণ করেন।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ