চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জানা-অজানা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জানা-অজানা

খেলার চমক আবু আবদুল্লাহ জুলাই ২০২৩

ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে জমজমাট আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের লড়াইয়ে সেরা ক্লাবটিকে বাছাই করতে আয়োজন করা হয় এই প্রতিযোগিতার। ৭ দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই টুর্নামেন্টে খেলে থাকেন ইউরোপের সেরা ক্লাব ও খেলোয়াড়রা। সারা বিশ্ব থেকেই সেরা ফুটবলাররা ইউরোপে পাড়ি জমান, যে কারণে লিওনেল মেসি কিংবা নেইমার জুনিয়রের মতো লাতিন ফুটবলারদেরও দেখা মেলে এই আসরে। তাই ফুটবল দর্শকদের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আবেদন সব সময়ই ওপরের দিকে।


ইতিহাস

ইউরোপীয় ফুটবলের সেরা ক্লাব কোনটি তা নিয়ে বিতর্ক বহু বছরের পুরনো। সেই বিতর্ক থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোকে নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট করার চিন্তা আসে। যাতে ইউরোপ সেরা ক্লাব নিয়ে আর বিতর্ক না থাকে। ১৯৫০ এর দশকে বিভিন্ন দেশের ক্লাবের সাথে কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ জেতার পর ইংলিশ ক্লাব উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সকে বিশ্বসেরা দাবি করেন ক্লাবটির কোচ স্টান কুলিশ। বিশেষ করে ওই সময় হাঙ্গেরীয় ক্লাব বুদাপেস্ট হনভ’কে হারানোর পর বিষয়টি ইংলিশরা জোর দিয়ে প্রচার করতে থাকে।

তারও আগে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেই (১৮৯৭) ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সেরা ক্লাবগুলোর মধ্যে ম্যাচ আয়োজনের রীতি শুরু হয়। ১৯০০ সালে বেলজিয়াম, নেদারল্যন্ডস ও সুইজারল্যান্ডের সেরা ক্লাবগুলোকে নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট শুরু হয় (সে সময় শুধু এই তিন দেশেই লিগ চলতো)। সংবাদমাধ্যমে সেটাকে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৩০ সালে ন্যাশন্স কাপ নামে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয় অনেকগুলো ইউরোপীয় দেশের লিগ চ্যাম্পিয়নরা।

১৯৪৮ সালে লাতিন আমেরিকায় মহাদেশীয় ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। সেটা দেখেই ইউরোপীয়রা অনুপ্রেরণা পায়। এরপর উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের নিজেদের সেরা দাবি করার প্রেক্ষিতে গ্যাব্রিয়েল হ্যানট নামের ফ্রান্সের একজন সাংবাদিক ইউরোপীয় ক্লাবগুলোকে নিয়ে বড়ো পরিসরে চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের প্রস্তাব দেন এবং উয়েফাকে তিনিই রাজি করান এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে।

এরপর ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে ১৬ দেশের ১৬টি ক্লাবকে নিয়ে শুরু হয় ইউরোপিয়ান কাপ। প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হয় টুর্নামেন্টটি। প্রথম ৫ আসরেই শিরোপা নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে টুর্নামেন্টটির নামকরণ করা হয় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।

ফরম্যাট ও বাছাই প্রক্রিয়া

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২০০৯-১০ মৌসুম থেকে শুরু হয় ৩২ দল নিয়ে ডাবল রাউন্ড রবিন লিগ। প্রতি গ্রুপের চারটি দল পরস্পরের বিরুদ্ধে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলে। অর্থাৎ নিজের মাঠে একটি, আবার প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে একটি। দুই ম্যাচের গোল যোগ করে ফলাফল নির্ধারিত হয়।

এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দল। ১৬টি দল নিয়ে নকআউট পদ্ধতিতে শুরু হয় দ্বিতীয় রাউন্ড। সেখানেও হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলা হয়। এরপর কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালেও একই পদ্ধতি। তবে ফাইনাল হয় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এবং এক ম্যাচের।

ইউরোপ মহাদেশীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের মোট ৩টি স্তর রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সাধারণত ইউরোপীয় দেশগুলোর চ্যাম্পিয়ন ক্লাবগুলো অংশ নেয়। উঁচু মানের কয়েকটি লিগ থেকে একাধিক দলও নেওয়া হয়। আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুযোগ না পাওয়া দলগুলো খেলে উয়েফা ইউরোপা লিগে। এরপরের কিছু দলকে নিয়ে করা হয় ইউরোপা কনফারেন্স লিগ।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোনো দেশ থেকে কতটি ক্লাব খেলবে সেটি নির্ধারিত হয় র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে। এই র‌্যাংকিং করা হয় পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তিনটি ইউরোপীয় লিগের ক্লাবগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করে।

উয়েফা র‌্যাংকিংয়ে ১-৪ নম্বরে থাকা দেশগুলোর লিগের সেরা ৪টি করে ক্লাব সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলে। ৫ ও ৬ নম্বর দেশের দুটি করে এবং ৭ থেকে ১০ নম্বর দেশের একটি টিম সরাসরি খেলে। এর সাথে বাকি দলগুলো নেওয়া হয় কয়েক স্তরের বাছাইপর্ব ও প্লে অফের মাধ্যমে। ইউরোপীয় ফুটবলের দুর্বল দেশগুলোর লিগ চ্যাম্পিয়নরা লড়াই করে এখানে।

প্রতি বছর জুন মাসে বাছাইপর্ব দিয়ে শুরু হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যাত্রা। আর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় পরের বছর মে মাসের শেষ দিকে অথবা জুনের শুরুতে।

সারা বছর ধরে ঘরোয়া লিগের খেলার বিরতিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আর ঘরোয়া লিগ শেষ হওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল দিয়ে শেষ হয় একটি ফুটবল মৌসুমের।


পরিসংখ্যান

আগের মৌসুম পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। তারা শিরোপা জিতেছে ১৪ বার। এরপর উল্লেখযোগ্য ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান ৭ বার, লিভারপুল (ইংল্যান্ড) ও বায়ার্ন মিউনিখ (জার্মানি) ৬ বার করে, বার্সেলোনা ৫ বার। খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৫ বার ইউরোপ সেরা কাপ জিতেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, দানি কারভাহাল ও লুকা মদ্রিচ। শেষের তিনজন প্রতিবারই জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। আর রোনালদো রিয়ালের হয়ে ৪ বার ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে একবার।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন রোনালদো ১৮৩ ম্যাচে ১৪০ গোল। এরপর লিওনেল মেসি ১৬৩ ম্যাচে ১২৯ গোল।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চ্যাম্পিয়ন প্রাইজমানি ২ কোটি ইউরো। বাংলাদেশী টাকায় ২৩৩ কোটি প্রায়। এছাড়া প্রতিটি পর্বে খেলা দলের জন্য রয়েছে প্রাইজমানি। তাই চ্যাম্পিয়ন দল সব মিলে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ইউরো নগদ অর্থ পায়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ