চালাক শিকারি ও বাঘ  ।  মকবুল হামিদ

চালাক শিকারি ও বাঘ । মকবুল হামিদ

তোমাদের গল্প নভেম্বর ২০১৮

রাজ দরবারে এলান জারি হয়ে গেল, যে দুই দিনের মধ্যে একটা বাঘকে জীবিত অথবা মৃত রাজ দরবারে এনে দিতে পারবে তাকে ১০০ দিরহাম স্বর্ণ উপহার দেয়া হবে। জঙ্গলের পাশে একটা শিকারির ঘর ছিল। সে ভালোভাবে পশু-পাখিদের শিকার করতে পারে। সে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক। তার জানা আছে কোন অরণ্যে গেলে সে বাঘ শিকার করতে পারবে। তাই দেরি না করে সে গভীর অরণ্যে ঢুকে পড়ল। অরণ্যটি খুবই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। চার দিকটা কেমন যেন নিস্তব্ধ ও জনমানবশূন্য। মাথার ওপর দিয়ে গাছের ডালগুলো কেমন যেন একটু বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। দু’কানে কোনো পশুপাখির কলরব শোনা যাচ্ছে না। শিকারি গভীর অরণ্যে প্রবশ করা মাত্রই মাথার ওপর পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনতে পেল। তার চক্ষুদ্বয় সদা বাঘকে খোঁজে। কত চেষ্টা করছে কিন্তু বাঘকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে না।
অনেকদিন হলো সে বাঘ শিকার করে না। এবার সে ঠিক করছে যেভাবেই হোক বাঘ শিকার করবেই। তাই তো সে সারাক্ষণ বাঘের খোঁজে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। সে অরণ্যে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিত। অনেক চেষ্টা করতো কিন্তু কোনোভাবেই বাঘকে শিকারে আনতে পারতো না। শিকারি জানতো বাঘ খুব হিংস্র প্রাণী। যাকে ধরে তাকে খেয়ে ফেলে। এটা জানা সত্ত্বেও শিকারি বাঘ শিকার করতে ভয় পেত না। তবে শিকারিটা ছিল খুব চালাক প্রকৃতির। গতবার শিকারিটা যে বাঘটাকে শিকার করেছিল সেই বাঘটাকেও সে খুব চালাকি করে ধরেছিল। এবারও সে একই কায়দায় বাঘটাকে ধরবে বলে ভাবছে। তাইতো সে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে কখন বাঘ আসবে আর খপ করে শিকার করে নেবে। সারাদিন শিকারিটা অপেক্ষা করল কিন্তু বাঘ এলো না। সে প্রায় ধৈর্যহারা হয়ে পড়ল। হঠাৎ সে একটা বাঘের গর্জন শুনতে পেল। শিকারিটা তাড়াতাড়ি পরিকল্পনা মত কাজ করতে শুরু করল। শিকারি দেখল বাঘটা শুধু এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে। সে বুঝতে পারলো যে, নির্ঘাত বাঘটার খিদে পেয়েছে। শিকারি ভাবল এটাই উপযুক্ত সময় বাঘটাকে শিকার করার জন্য। সে জানতো বাঘের মুখ্য খাবার হলো হরিণ। তাইতো সে প্রথম থেকে ছোট্ট একটা হরিণের বাচ্চাকে বনের ভেতর খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছে। তার ঠিক সোজা বরাবর ওপরের দিকে একটা লোহার নেট ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেছে। সে গাছের ওপর উঠে বসে রইল যেই বাঘটা হরিণকে খেতে তার কাছে আসবে তখনি শিকারি ওপর থেকে নেট ছেড়ে দেবে আর বাঘটা নেটের ভেতর আটকে যাবে। ঠিক তেমনি হলো সে যেমনটা চেয়েছিল। আটকানোর সাথে সাথে সে বাঘটাকে একটা সুচ দিয়ে অজ্ঞান করার ঔষধ দিয়ে দিল। সাথে সাথে হরিণের বাচ্ছাটাকে শিকারি বাঁচিয়ে দিল। শিকারি নেট থেকে বাঘটাকে রাজার বাড়িতে নিয়ে গেল। তারপর রাজ দরবারে শিকারি বাঘটাকে জমা দিয়ে ১০০ দিরহাম নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে এলো।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ