ঘোড়া   -আবদুল মোক্তাদীর উদ্দিন

ঘোড়া -আবদুল মোক্তাদীর উদ্দিন

তোমাদের গল্প ডিসেম্বর ২০১৭

রহিম মিয়া একজন দরিদ্র লোক। নেই কোনো জমি, নেই কোনো কিছু। শুধু ছিল তার একটি কুঁড়েঘর আর একটি মাত্র সম্বল। তার সেই সম্বলটি হলো তার প্রিয় একটি ঘোড়া। কিন্তু ঘোড়া লালন-পালন করে তার কী লাভ। ঘোড়া তো তাকে খাওয়ার কোনো কিছু জোগাড় করে দেবে না। দেবে না কোনো বাসস্থান। কিন্তু কেন রহিম মিয়া ঘোড়াটি লালন-পালন করছে?
রহিম মিয়ার তো নিজেরও কোনো ভালো সুযোগ-সুবিধা নেই। তবুও রহিম মিয়া তার ঘোড়াটিকে অনেক ভালোবাসে। এই ঘোড়াটি তার খুব প্রিয়। রহিম মিয়ার কোনো আপনজন নেই। তাই সে ঘোড়াটিকে তার আপনজনের মতো ভালোবাসে এবং খুব আদর-যত্ন করে। ঘোড়াটিও তাকে অনেক পছন্দ করে। রহিম মিয়া যদি কোনো দুঃখ বা কান্না পায় তাহলে মনে হয় ঘোড়াটিও কাঁদছে। মনে হয় ঘোড়াটি রহিম মিয়ার সকল দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে পারছে। রহিম মিয়া ও ঘোড়াটির মধ্যে অনেক ভাব ছিল। মনে হয় তারা দু’জন ভাই ভাই। এইভাবে আস্তে আস্তে করে তাদের দিন কাটতে লাগল এবং ঘোড়াটি বড় হতে থাকে।
যখন ঘোড়াটি বড় হয়ে গেল তখন রহিম মিয়া ঘোড়াটিকে অনেক ভারি ভারি কাজ করাত। তবুও ঘোড়াটি ঝটপট কাজ করিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। তাতে তার কোনো রকম দিন চলে যেত। কিন্তু একদিন রহিম মিয়ার মাথায় আসল ঘোড়াটি বিক্রি করার উদ্দেশ্য। তারপর সে সিদ্ধান্ত নিলো যে ঘোড়াটি বিক্রি করে দেবে। পরদিন রহিম লোকজনকে তার ঘোড়া বিক্রি করার কথা বলে। এরপরে দুই তিনজন লোক ঘোড়াটি কেনার প্রস্তাব দিলো। রহিম মিয়াকে প্রস্তাব দেয়ার পরে রাজি হয়ে গেল। এবং রহিম মিয়া যত টাকা চেয়েছিল তারা ঠিক টাকা দিয়ে ঘোড়াটি কিনে ফেলল কিন্তু ঘোড়াটি তাদের সাথে যেতে চাইল না।
ঘোড়াটিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং রহিম মিয়ার ঘোড়াটি তার দিকে চেয়ে তাকাল ও চোখে পানি ফেলে দিল। মনে হলো ঘোড়াটি তাকে কিছু বলছে। এই কি তোমার ভালোবাসা এই কি ছিল আদর যত্ন।
এই পৃথিবীতে মানুষ জাতি এই রকম। অল্প টাকার বিনিময়ে তাদের আদর, ভালোবাসা স্নেহ সবগুলোই ত্যাগ করে ফেলে। তারা মানুষ-মানুষকে তারা বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে তাই তারা মানুষের সাথে বসবাস করে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ