গ্রামের নাম ফুলবাড়ি

গ্রামের নাম ফুলবাড়ি

তোমাদের গল্প জুলাই ২০১৩

‘কিশোরকণ্ঠ গল্প লেখা প্রতিযোগিতা ২০১২’-এর (ক গ্রুপ) চতুর্থ স্থান অধিকারী

শেখ তামিনা আক্তার

নুসরাতের বাড়ি ফুলবাড়ি, শহরে থেকে বহু দূরে। মনে মনে ভাবে, বাবা অফিস থেকে ফিরলেই বাড়ি যাবার কথা বলবে। এক সময় বাবা ফিরেন। নুসরাত ছুটে যায় বাবার কাছে। আজ বাবার কাছাকাছি থেকে ঘুরঘুর করতে থাকে এখানে সেখানে। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বাবা বলেন, আম্মু আজ ভীষণ খুশি খুশি  মনে হচ্ছে, ব্যাপার কি? বাবার প্রশ্নে কি ভেবে নুসরাত বাবাকে জড়িয়ে ধরে। কাণ্ড দেখে নুসরাতের বাবা অবাক হয়ে আবারও প্রশ্ন করেন, আম্মু, ব্যাপার কি? কিছু বলছ না কেন? ঝটপট বলে ফেললো, আমি আবার বেরুব। নুসরাতের ছোট্ট একটা কথা, আব্বু আমি তোমার কাছে কোনদিনও কিছু চাই নি। সঙ্গে সঙ্গে বাবা বলেন, আমি জানি, কোনো দিনও তুমি কিচ্ছু চাওনি, তবে কি আজ কিছু চাও? হ্যাঁ আব্বু কি চাও আমি যা চাই, তা রাখবে, আগে বলো,। বাবা নুসরাতের কাথায় অবাক হয়ে ভাবেন, আমার মেয়ে তো বুদ্ধিমতি হয়ে গেছে মনে হয়। এভাবে আগে কোনো দিনও তো কথা বলত না। কি চায় আগে জেনে নিই। সোজাসুজি বাবা উত্তর দেন আম্মু তুমি যা চাও তাই রাখব। বাবার কথা শুনে নুসরাতের সেকি আনন্দ। কী মজা কী মজা আব্বু আমার কথা রাখবে বলতে বলতে এঘর ওগর ছুটাছুটি করে সে। নুরাতের এই আনন্দ দেখে বাবা নুসরাতের মাকে ডাকতে শুরু করেন। রেহানা আক্তার নুসরাতের মা রান্না ঘরের কাজ ফেলে ছুটে আসেন বসার ঘরে। বলেÑ দেখছ কাজ করছি, হঠাৎ ডাকাডাকি কেন? দেখো তোমার মেয়ের কাণ্ড। বললাম কথা রাখব, অতে তোমার মেয়ের এ ঘর ওঘর ছুটাছুটি। হাসতে হাসতে আরো বলে কি কথা এখনও জানতেই পারিনি। কি কথা জেনে নিলেই পাবো। বলে নুসরাতের মা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান। মা চলে যাবার সাথে সোথেই নুসরাত বাবার কাছে ছুটে যায়। সোজা বাবার কোনো বসে বাবাকে আদর করতে করতে বলে আব্বু তুমি ভীষণ ভালো তোমাার মত আব্বুই হয় না। রেহানা বলে যাচ্ছে জানো, অ্বুব এবার গ্রীষ্মকালীন লম্বা ছুটি। চলো না গ্রামের বাড়ি যাই। গ্রামের বাড়ি যাবার কথা শুনে নুসরাতের বাবা চমকে ওঠেন। মনে মনে বলেন হঠাৎ নুসরাতের গ্রামে যাওয়ার শখ হল কেন? নুসরাত বারবার বলে যাচ্ছে, আব্বু বল না যাবে? বাবা নুসরাতের কথার উত্তর দেবার সাহস পান না। নুসরাত বলে, আব্বু তুমি আমাকে কথা দিয়েছে, রাখবে। না বলবে না বলে দিলাম। হঠাৎ করে নুসরাতের দাদু দাদির ছবিটার নুসরাতের বাবার চোখের সামনে ভেসে উঠল। মনে মনে ভাবেন সত্যিই তো কতদিন মা বাবাকে দেখি নি। এবার না হয় বেতনের টাকায় কোনো রকমে গ্রামের বাড়ি ঘুরে আসা যাবে। মেয়ের কথা রাখা যাবে, শিশুর মত নুসরাতের বাবা উত্তর দেন, ঠিক আছে আম্মু, এবার সত্যি সত্যি আমরা সবাই গ্রামের বাড়ি যাব্ রেহানার আনন্দ আর ধরে না তা ধেই ধেই নাচতে নাচতে আ্ব্বুর কোলে থেকে লাফ দেয় মার কাছে। বেতনের টাকায় নুসরাতের বাবা এটা ওটা কিনে বাসায় ফিরেন। সবকিছু দেখে নুসরাত খুব খুশি হয়। নুসরাতের সময় কিছুতেই কাটেনা। কখনো গ্রামে যাবে, কখন দাদু দাদীকে দেখবে। আর আম কাঁঠাল খাবে। বাড়ি যাবার আগে থেকে সবকিছু গোছগাছ শুরু হয়ে যায়। নুসরাতের মা সব বাজার সুটকেসে সাজাতেয থাকেন। নুসরাত সোফায় বসে, কখনো বিছানায় বসে মা কাজ দেখে হাসতে থাকে বলে আম্মু দাদু দাদিকে আমাকে দেখে খুব খুশি হবে না? কাজ করতে করতে মাও উত্তর দেন, হবে না। কতদিন পরে যাচ্ছ! তুমি তো দাদা দাদির চোখের মণি, আদরের টুকরো। আম্মু কত দিন থাকব আমরা? যে কদিন তোমার স্কুল ছুটি। তোমার আব্বুর অফিস ছুটি। আগামীকাল নুসরাতের মা বাবার সাথে ফুলবাড়ি যাবে। সকালে ট্রেন। খুব ভোরে উঠতে হবে। সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমুতে যায়। রাত বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় প্রচন্ড বৃষ্টি। সারাদিনের খাটুনিতে নুসরাতের মা বাবা দিব্যি ঘুমুচ্ছেন। নুসরাতের বাবার নাক ডাকার শব্দে নুসরাতের ঘুম ভেঙ্ েযায়। নুসরাতের আর ঘুম আসে না। তার উপর সকাল হলে গ্রামের বাড়ি ছুটবে সবাই। সেকী আনন্দ নুসরাতের। হঠাৎ নুসরাতের কানে বাজে গ্রিল কাটার শব্দ। প্রচন্ড বৃষ্টির শব্দে খুব একটা ভালো করে বুঝতে পারে না নুসরাত কি হচ্ছে একসময় নুসরাত দেখে, ঘরের নীল আলোয় কজন লোক মুখে কাপড় বাঁধা। দুপাশে মা বাবা, মাঝখানে রেহানা। নুসরাত বুঝতে পারে লোকগুলো চোর নুসরসরাত চোখ একবার খুলে আবার আধাবন্ধ করে দেখতে থাকে চোরের কাণ্ড চোরের হাতে লম্বা ছুরি, বড়,লাঠি চোরে রা গুছিয়ে রাখা জিনিস, আব্বুর টেবিলে রাত্মা ঘড়ি, মুল্যবান কিছু জিনিসপত্র, গ্রিল কাটা জানালা দিয়ে বের করে নিয়ে যায়। মা বাবাকে ডাক দেবে কি ভেবে পায় না। যদি শব্দ শুনে চোর নুসরাতের মা বাবাকে ছুরি মারে। সে ভয়ে নুসরাত চুপ থাকে। চোর ছুরি করে চলে যায়। প্রচন্ড বৃষ্টি ঝরছে তখনো। বাবা মা ঘুমিয়ে শুধু নুসরাতের চোখে ঘুম নেই। কাক ডাকার শব্দে নুসরাতের মার ঘুম ভাঙে সবাইকে ডাকতে শুরু করে দেন। ওঠো, ওঠো বাড়ি যাবে না? শোবার ঘরের লাইটের সুইচ অন করতেই নুসরাতের মা চিৎকার নুসরাতের বাবা বিছানায় ঘুম চোখে প্রশ্ন করেন কি হল, চিৎকার করছ কেন? নুসরাতের মা কান্নার সুরে বলতে থাকেন আমার সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। নুসরাতের বাবার চোখে চলে যায় জানালা র দিক্ ে দেখেন পুরো জাানাটাই কাটা বাড়ি যাবার সব বাজার , সুটকেসে রাখা বেতনের টাকা সবই চোর নিয়ে গেছে নুসরাতের বাবার চোখেও জল  নুরসাতের মা বলেন, সব তো গেল, আগামী মাসে আমাদের চলবে কেমন করে। নুসরাতের বাবা বলেন রাখো তোমার আগামী মাসের চিন্তা। নুসরাতের ঘুম ভাঙলে ওকে কি উত্তর দেব বলতে পারো? ততক্ষণে নুসরাতের ঘুম ভেঙে যায় নুসরাতের বাবা নুসরাতকে আদর কররে কিছু যেন বলতে চান। তখনই নুসরাত অস্পষ্ট কষ্ঠে বলে, আব্বু, আমি গ্রামের বাড়ি যাব না। বাবা প্রশ্ন করেন, কেন আম্মু যাবে না কেন? ছোট্ট করে নুসরাত উত্তর দেয় কেমন করে যাব আব্বু, চোরতো সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেছে। তুমি জানলে কি করে? চুরি করে নিয়ে যাবার সময় আমি সবকিছু দেখেছি তো আমাদের ডাকলে না কেন? ভয়ে । কিসের ভয়ে ? জানো আব্বু,  চোরের হাতে লম্বা ছুরি, বড়, লাঠি ছিল যদি ওরা তোমাদের ছুরি মারত লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে, তাই....। মেয়ের কথা শুনে নুসরাতের বাবা আবাক হয়ে যান। এতটুকুন মেয়ের অত বড় জ্ঞান বোধ? নুসরাতের কাছে তো আমি অনেক তুচ্ছ, ছোট। নুসরাতের অস্পষ্ট কথার শব্দ নুসরাতের বাবার কানে বাজে তখন আব্বু,এবার না হয় গ্রামের বাড়ি যেতে পারলাম না, আগামী বছর ঠিকই যেতে পারব।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ