গোলের খেলা ফুটবল

গোলের খেলা ফুটবল

খেলার চমক আবু আবদুল্লাহ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ফুটবল খেলার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে চীন দেশে চুজু নামের এক ধরনের খেলা প্রচলিত ছিল। যেটাকে ফুটবলের পূর্বসূরি হিসেবে ধরা হয়। চুজু খেলায় বলকে লাথি দিয়ে জালে ফেলতে হতো। এই খেলাটি থেকেই কালের বিবর্তনে ফুটবলের জন্ম বলে মনে করা হয়।

ইতিহাসের প্রথম ম্যাচ ও গোল

ফিফার স্বীকৃতি অনুযায়ী বিশ্বের প্রথম ফুটবল ক্লাব শেফিল্ড এফসি। ১৮৫৭ সালের অক্টোবরে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ডের উত্তর ডার্বিশায়ারের এই ক্লাবটি এখনো টিকে আছে। খেলছে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলের নর্দার্ন প্রিমিয়ার লিগ ডিভিশন ওয়ানে। ১৮৬০ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেফিল্ডের সাথে একই শহরের ক্লাব হালাম এফসির ম্যাচটি ইতিহাসের প্রথম অফিশিয়াল ফুটবল ম্যাচ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই ম্যাচে হালাম এফসিকে ২-০ গোলে হারায় শেফিল্ড এফসি। নাইন্টি মিনিটস ডট কম নামের ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, সেই ম্যাচে প্রথম গোলটি করে ইতিহাসে নাম লেখান শেফিল্ডের ফুটবলার ও প্রতিষ্ঠাতাদের একজন নাথানাইল ক্রেসউইক। ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি কে করেছিলেন সেই রেকর্ড পাওয়া যায়নি।

প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭২ সালের ৩০ নভেম্বর। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ম্যাচটিতে মুখোমুখী হয় ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ৪ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ম্যাচটি গোল শূন্য ড্র হয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম গোলটি হয় ১৮৭৩ সালের ৮ মার্চ লন্ডনে এই দুই দলের আরেকটি ম্যাচে। সেদিন প্রথম আন্তর্জাতিক গোলটি করেন ইংলিশ ফুটবলার উইলিয়াম কেনিয়ন-স্লানে।

বড়ো ব্যবধানে জয়

আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০০১ সালে তারা আমেরিকান সামোয়া নামের দ্বীপপুঞ্জকে হারায় ৩১-০ গোলের ব্যবধানে। সেটি ছিল ২০০২ বিশ^কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ। সেদিন ১৩ গোল করে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়েন অস্ট্রেলিয়ার আর্চি থমসন। এরপরের রেকর্ডটি ব্রাজিলের দখলে। তার ১৪-০ গোলে নিকারাগুয়াকে হারিয়েছে ১৯৭৫ সালের এক ম্যাচে। মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচটি ছিল প্যান-আমেরিকান গেমসের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ।

২০০৬ সালে জার্মানি ১৩-০ গোলে হারায় সান মারিনোকে। সেটি ছিল ২০০৮ সালের


ইউরো ফুটবলের বাছাইপর্বের ম্যাচ। পরের রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের দখলে। তারা ২০০৪ সালে তাহিতিকে হারায় ১০-০ গোলের ব্যবধানে। তাহিতি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ। এছাড়া স্পেন ১৯৯৯ সালে অস্ট্রিয়াকে হারিয়েছে ৯-০ গোলে।

ক্লাব ফুটবলে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল ও বড়ো ব্যবধানে জয়ের ঘটনাটি আফিকা মহাদেশের দ্বীপ দেশ মাদাগাস্কারের ঘরোয়া ফুটবলে। ২০০২ সালের ৩১ অক্টোবর সেই ম্যাচে এএস অ্যাডেমা নামের ক্লাবটি ১৪৯-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে সো আই’এমিরন ক্লাবকে। তবে এই ম্যাচটি নিয়ে অভিযোগ আছে, এমিরন ক্লাব ইচ্ছে করে ম্যাচটি বড়ো ব্যবধানে হেরেছে। আগের একটি ম্যাচে তাদের বিরুদ্ধে বাজে রেফারিংয়ের ক্ষোভের কারণে সেদিন ক্লাবটি ইচ্ছে করে বাজে খেলেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর আগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছিল স্কটল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলের এক ম্যাচে ৩৬-০ ফলাফলের দখলে।

আলোচিত সমালোচিত গোল

১৯৮৬ সালের বিশ^কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর ডিয়াগো ম্যারাডোনা। ১ লাখ ১৫ হাজার দর্শকের সামনে সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার করা দুটি গোল ফুটবল ইতিহাসে দুই রকমভাবে বিখ্যাত হয়ে আছে। ম্যাচের ৫১ মিনিটে যে গোলটি করেন, সেটি আসলে হাত দিয়ে বল পাঠিয়েছিলেন জালে। চারজনকে কাটিয়ে নিজেই বল নিয়ে ঢোকেন ইংল্যান্ডের সীমানায়। সামনে ডিফেন্ডারদের দেওয়াল দেখে ডান প্রান্তে এক সতীর্থকে পাস দেন। ইংল্যান্ডের এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করতে গেলে শূন্যে উঠে যায় বল। হেড করার ভঙ্গিমায় লাফিয়ে উঠে ম্যারাডোনা হাত দিয়ে বলটি ঠেলে দেন ইংল্যান্ডের জালে।

সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে দ্রুত ব্যাপারটি ঘটে যায়। তাই কাছে থাকা ইংলিশ গোলরক্ষক ছাড়া কেউ বুঝতেই পারেনি বিষয়টি। রেফারি গোলের বাঁশি বাজান। পরবর্তীতে ম্যাচের ভিডিয়ো দেখে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ম্যারাডোনা বলেন, সেটি ছিল ঈশ্বরের হাত।

তবে সেই গোলের মাত্র ৪ মিনিট পর দেখান তার সেরা জাদুটি। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে দৌড়ে যাওয়ার পথে ৫ ফুটবলার এবং শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষককেও কাটিয়ে বলটি ঠেলে দেন জালে। প্রথম গোলটি নিয়ে যত কথাই হোক, দ্বিতীয় গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে স্বীকৃতি পায় ফুটবল দুনিয়ায়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ