খালি হাতে বিদায়

খালি হাতে বিদায়

খেলার চমক আবু আবদুল্লাহ জুন ২০২৩

চলতি বছর মার্চ মাসে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পরপর তিন ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছেন ভারতীয় টপঅর্ডার ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব। তিনটিই আবার গোল্ডেন ডাক অর্থাৎ প্রথম বলেই আউট। ক্রিকেটে শূন্য রানে আউট হওয়াটা একটি লজ্জাজনক বিষয়। গোল্ডেন ডাক তো আরো লজ্জাজনক। আর পরপর তিন ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটলে সেটাকে কী বলা যেতে পারে তা তোমরাই ভেবে নাও।

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেছে ১৩ বার। সূর্যকুমার সেই তালিকায় ১৪ নম্বর। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিভাবান ব্যাটারদের একজন সূর্যকুমার। বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে তার কার্যকর ব্যাটিং ভারতীয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ক্রমশ। যেদিন এই লজ্জাজনক রেকর্ড গড়লেন সেদিনও তিনি ছিলেন আইসিসির টি-টোয়েন্টি  Ranking এর  এক নম্বর ব্যাটসম্যান। বেচারার কপাল খারাপ ছিল হয়তো!

তবে ক্রিকেট এমন এক অনিশ্চয়তার খেলা যেখানে অনেক অভাবনীয় ঘটনাই ঘটতে পারে। শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিংয়ের মতো ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারেও আছে টানা তিন ম্যাচে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফেরার ঘটনা। 


ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল

ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা চার ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ডও আছে। তাই সূর্যকুমার কিছুটা হলেও সান্ত¡না পেতেই পারেন। ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালে পাকিস্তান সফর করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। সেই দুই সিরিজ মিলে টানা চার ম্যাচে শূন্য রানে আউট হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডলঅর্ডার ম্যাটার অগাস্টিন লরেন্স লগি। ক্রিকেট বিশ্বে এমন ঘটনা সেই প্রথম। পরপর ৪ ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে প্রতিবারই তিনি ফেরেন কোনো রান না করেই। এর মধ্যে একটি ছিল গোল্ডেন ডাক।

লগির পর এই রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন আরো কয়েকজন। প্রমোদ্যা বিক্রমাসিংহে (শ্রীলঙ্কা), হেনরি ওলঙ্গা (জিম্বাবুয়ে), ক্রেইগ হোয়াইট (ইংল্যান্ড) ও লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)।

ওয়ানডেতে টানা তিন ম্যাচে শূন্য রানে ফেরার ঘটনা আছে ৬৭ বার। এই তালিকায় আছেন কয়েকজন বিখ্যাত ব্যাটার। তারা হলেন শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, মাহেলা জয়াবর্ধনে, শোয়েব মালিক, ল্যান্স ক্লুসনার। এই তালিকাতে লঙ্কানদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। চামিন্দা ভাস ১৯৯৭ সালে একবার ও ১৯৯৯ সালে একবার টানা তিন ম্যাচে ‘ডাক’ পেয়েছেন। লাসিথ মালিঙ্গার জীবনে এই ‘কীর্তি’ আছে ৩ বার।

বাংলাদেশীদের মধ্যে হাবিবুল বাশার সুমন, মোহাম্মাদ রফিক, মুশফিকুর রহীম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ারে আছে টানা তিন ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা।

ওয়ানডেতে পুরো ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ডটি অবশ্য খ্যাতিমান ব্যাটারদের দখলেই। শীর্ষে আছেন সাবেক লঙ্কান ওপেনার ও অধিনায়ক সনথ জয়সুরিয়া (৪৩)। এরপরের অবস্থানগুলোতে যথাক্রমে শহীদ আফ্রিদি (৩০), ওয়াসিম আকরাম ও মাহেলা জয়াবর্ধনে (২৮টি করে), লাসিথ মালিঙ্গা (২৬), ক্রিস গেইল, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও চামিন্দা ভাস (২৫টি করে)।


টেস্ট ক্রিকেট

টেস্ট ক্রিকেটে টানা ৫ ইনিংসে ‘ডাকের’ রেকর্ড আছে তিনজন ক্রিকেটারের। তিনজনের কেউই অবশ্য স্বীকৃত ব্যাটার নন, বরং বোলার হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। সর্বপ্রথম এই লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বব হল্যান্ড। ১৯৮৫ সালের আগস্টে ইংল্যান্ড সফরে বার্মিংহাম টেস্টের দুই ইনিংসে এবং নভেম্বরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ইনিংসে কোনো রান না করেই ক্রিজ ছাড়েন তিনি।

১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে একই রকম ঘটনার শিকার হন ভারতীয় পেসার অজিত আগারকার। এডিলেড টেস্টের শেষ ইনিংসে তার শূন্য পাওয়া শুরু। এরপর মেলবোর্ড ও সিডনি টেস্টের ৪ ইনিংসেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার মোহাম্মাদ আসিফ ২০০৬ সালে যথাক্রমে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৫ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হন।

টেস্ট ক্রিকেটে একজন ক্রিকেটারের টানা ৪ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা আছে ২৮টি। এদের বেশির ভাগই অবশ্য বোলার হিসেবে দলে জায়গা পেয়েছেন। বাংলাদেশীদের মধ্যে এই তালিকায় নাম আছে রুবেল হোসেন ও খালেদ আহমেদের। বিখ্যাত ব্যাটারদের মধ্যে এই তালিকায় নাম উঠিয়েছেন কেবল অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহ।

দুইবার করে টানা চার ইনিংসে শূন্য পাওয়ার নজির আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারভিন ডিলন, শ্রীলঙ্কার নুয়ান প্রদীপের। 

টেস্ট ক্রিকেটে পুরো ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ডটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি বোলার কোর্টনি ওয়ালশের। ১৩২ টেস্টে ১৮৫ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ওয়ালশ ৪৩ বার কোনো রান না করেই আউট হয়েছেন। তালিকায় তার পরেই আছেন ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ড ব্রড (৩৯ বার), তিন নম্বরে নিউজিল্যান্ডের ক্রিস মার্টিন (৩৬ বার), চারে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা (৩৫ বার) ও পাঁচে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন ও ভারতের ইশান্ত শর্মা (৩৪ বার)।

এখনো খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার ওপরে আছে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ১৭ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন।

টেস্টে একই ম্যাচের উভয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়াকে বলা হয় ‘পেয়ার’। পুরো ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশিবার পেয়ার পাওয়ার রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার ক্রিস মার্টিনের। তিনি ৭টি টেস্ট ম্যাচের উভয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন।

৪টি টেস্টে পেয়ার পাওয়ার নজির গড়েছেন ৫ জন ক্রিকেটার। তবে এদের মধ্যে একজনের নাম সবাইকে অবাক করে, তিনি শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ও এক সময়ের দাপুটে ব্যাটার মারভান আতাপাত্তু। তালিকার অন্যরা হলেন ভারতীয় চন্দ্রশেখর, লঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন, ক্যারিবীয় কোর্টনি ওয়ালশ ও মারভিন ডিলন।


টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা সবচেয়ে বেশি বার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড পাকিস্তানের আবদুল্লাহ শফিকের। ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে পরপর দুই ম্যাচে কোনো রান না করে দল থেকে বাদ পড়েন। প্রায় আড়াই বছর পর ২০২৩ সালের মার্চে শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে আবার দলে ডাক পান; কিন্তু সেখানেও সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে কোনো রান করতে পারেননি এই টপঅর্ডার ব্যাটার।

টি-টোয়েন্টিতে টানা তিন ইনিংসে ০ রানে আউট হওয়ার ঘটনা আছে ২৬টি। এর মধ্যে পাকিস্তানের মোহাম্মাদ হাফিজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার, ইংল্যান্ডের মইন আলীর নাম আছে।

এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে পুরো ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড দুই আইরিশ ক্রিকেটারের। কেভিন ও’ব্রেইন এবং পল স্টার্লিং- দুজনেই ১২ বার করে শূন্য রানে আউট হয়েছেন। ১১টি শূন্য নিয়ে দুই নম্বরে যৌথভাবে আছেন জিম্বাবুয়ের রেগিস চাকাভ ও বাংলাদেশের সৌম্য সরকার।

ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলে পুরো ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়ার নজির গড়েছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। ৩২৮ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৫৯ বার খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন মুরালিধরন। এর পরে কোর্টনি ওয়ালশ ২৬৪ ইনিংসে ৫৪ বার, সনথ জয়াসুরিয়া ৬৫১ ইনিংসে ৫৩ বার।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ