ক্ষমা
তোমাদের গল্প ফেব্রুয়ারি ২০১৪
মুসা রায়হান
কী জানি কী মনে হলো ঝট করে পেছনে ফিরে চাইল সে আর ঠিক তখনই একটা লোককে দেখলাম, আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকছে। সেটা আমার মনে পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছে না। কাঁধের ওপর হুপ করে কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে মাথা ঘোরাতেই ঠাস করে চড় খাওয়ার মত মনে পড়ে গেল, লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছি। লোকটাকে আমি ভোটকা জনির সাথে ঘুরতে দেখেছি। ঘাড়ের ওপর কাকের ত্যাগ করা একদলা বিষ্ঠা পড়ে রয়েছে। শালার কাকের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করলাম কিছুক্ষণ। সাথে টিস্যুও নেই যে, তা বের করে মুছব। ওদিকে লোকটা ক্রমশ আমার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাড়াতাড়ি পা চালালাম। লোকটা ধরতে পারলে নির্ঘাৎ মায়ের কাছে আজকে বকুনি খাওয়া লাগবে। কী যে করি? আমি দুনিয়ার কোন কিছুকে ভয় করি না একমাত্র মায়ের বকুনি ছাড়া। তবে কেউ যেন এটা না মনে করে, আমার মা শুধু বকুনি দেয় আর আমি সেটার ভয়ে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকি। মায়ের বকুনি অনেকগুলো জিনিসের সমন্বয়ে গঠিত, যার বর্ণনা আপনারা তখনই টের পাবেন যখন সেগুলো আমার ওপর প্রয়োগ করা হবে। যাকগে, আজকে স্কুলে ভোটকা জনিকে একহাত নিয়েছি যা হোক। আর নেবোই বা না কেন? ও প্রতিদিন ওর বন্ধুদের সামনে আমাকে যা ইচ্ছে বলে অপমান করবে আর আমি ওকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? প্রতিদিন ও আমার নামে কত গালাগালি করে, কিন্তু আজকে যখন আমার মায়ের নামে গালাগালি দিল তখন আমার দুরন্ত পেশিগুলি যেন আর সহ্য করতে পারল না, ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর ওপর হিংস্র বাঘের ন্যায়। পাশের রুমে স্যাররা আলাপ বলছিলেন। তারা দৌড়ে এসে আমাদের থামালেন। তারপর ভোটকা জনিকে এমন করলেন যা অন্য কোনো ছাত্রকে কোনোদিন করেননি এবং সেই সাথে প্রচণ্ড মারও দিলেন। সবার সামনে ওর এমন মার খাওয়াটা আমার কাছেও খুব লাগছিল। তবে ও আমার নামে যা বলেছে তার তুলনায় এই মার আর অপমানতো তুচ্ছ। আমার তখন মনে হচ্ছে লোকটা ওর পক্ষ থেকে এসেছে। হয়তো বা কোনো চিপা গলিতে নিয়ে আমার ঠ্যাং বা এই জাতীয় কিছু ভেঙে চলে যাবে। তখন আমিও ফকিরদের মত সুর করে বলবো, ও ভাই, ভাইগো মোরে দুইডা ট্যাহা দিয়া জানগো। আর আমার বাসাও মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো একটা চিপা গলিতে। এখন কী করি? তো এ সমস্যায় পড়ে আল্লাহকে ডাকছি। সমস্যায় পড়লেই বিদ্যুৎ চমকের মত আল্লাহর কথা মনে পড়ে যায়। ইস! তখন যদি আমি ভ্যানে যাওয়া-আসা করতাম তাহলে তো একটানেই বাসায় চলে যেতে পারতাম। খরচ বাঁচাতে গিয়ে এখন প্রাণ বাঁচানো দায়। সাত-পাঁচ ভাবছি। এই সময় পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল, সুমিত, এই সুমিত। হকচকিয়ে গেলাম আমি। কারণ লোকটা আমার নাম জানে। এখন যদি সে পথচারীদের কাছে কিছু বানিয়ে বলে, তাহলে সবাই আমাকে লোকটার হাতে তুলে দেবে। তখন আমার আর কিছুই করার থাকবে না। তাই জোরে একটা দৌড় দেয়ার প্ল্যান করলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর মনে হলো একটা পদশব্দ আমাকে তাড়া করছে। পেছনে ফিরে তাকিয়ে লোকটাকে দেখে পাগুলো আরো দ্রুতগতিতে ছুটতে আরম্ভ করলো। এমন সময় বাসার গলিটায় এসে পৌঁছলাম। সেই চিপা গলি। প্রাণের তাগিদে ভীত হরিণীর মতো দৌড়িয়েছি বলেই মনে হল। দৌড়াতে দৌড়াতে গলিতে ঢুকলাম। ঢুকেই দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে হাঁফাতে লাগলাম। বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ডটা হাপরের মত ওঠানামা করছে। আর ঠিক তখনই লোকটাও গলিতে ঢুকলো এবং আমার কাছে এলো। খুব ভয় পেয়েছো বুঝি? শোন আমি তোমাকে মারতে আসিনি। কথাটা শুনে স্বস্তিতে রাস্তায় বসে পড়লাম। এরপর লোকটা বললো, জনি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। এই কথাটা শুনে শুয়ে পড়লাম। মাথার মধ্যে বোম ফুটল যেন। অজ্ঞান হয়ে গেলাম। এরপর আর কোন দিন ঐ স্কুলে যাইনি। কেননা আমার বিশ্বাসই হয়নি জনির মতো মানুষ কাউকে ক্ষমা করতে পারে। আজও হয়তো জনি আমার পথ চেয়ে বসে আছে কখন আমি আসি!
আরও পড়ুন...