ক্লাসরুমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ক্লাসরুমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

আইটি কর্নার নাদিম নওশাদ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ছোট্ট বন্ধুরা, কেমন আছো সবাই। আশা করি অনেক ভালো আছ। তোমরা নিশ্চয়ই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নাম শুনে থাকবে। বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে। বিগত দশক থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে আলোচনা ও সমালোচনা উভয়ের জন্ম দিয়েছে। তবে গত কিছু বছর যাবৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বড়ো বড়ো পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ এর ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই তুলে ধরেছেন। তবে আসল কথা হচ্ছে, আমরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভালো কাজে ব্যবহার করি, তাহলে এর খারাপ বৈশিষ্ট্য আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী?

শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিচরণ সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে জানতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন একটা প্রযুক্তি যা বিভিন্ন মেশিনকে এমন কাজ করতে সাহায্য করে যেটা সাধারণত মানুষকে করতে হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালিত কোনো প্রোগ্রাম বা যন্ত্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে, এমনকি ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে শিখতেও পারে। 


শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণভাবে এখনও আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও খুব দ্রুত গতিতে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্নভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলছে। এর মধ্যে কিছু ব্যবহার নিচে দেওয়া হলো-

১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত শিক্ষামূলক গেমস

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত গেমস মানুষের ক্রিটিক্যাল চিন্তা করার ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। বিশ্বের অনেক দেশ শিক্ষামূলক গেমসকে ব্যাপকভাবে প্রচার করছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষামূলক গেমসকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত গেমস শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন পর্যালোচনা করে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করে। এতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ায় আরো বেশি মনোযোগী হতে পারে। কয়েকটি উদাহরণ হলো : Minecraft: Education Edition, Duolingo, Zoombinis ইত্যাদি।


২. স্বয়ংক্রিয় গ্রেডিং এবং রেজাল্ট পর্যালোচনা

 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। যার কারণে খাতার মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব করার কোনো সুযোগ থাকছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের খাতার মূল্যায়নে সন্তুষ্ট থাকছে। এছাড়া লিখিত, এম.সি.কিউ বা অন্য যে-কোনো ধরনের পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা নিখুঁতভাবে করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এতে করে শিক্ষক প্রতিটি ছাত্রের দুর্বলতা সহজেই খুঁজে বের করে সঠিকভাবে পাঠ পরিকল্পনাও প্রদান করতে পারছেন যা তাঁর মূল্যবান সময় অন্য কাজে ব্যয় করতে সাহায্য করছে।


৩. শিক্ষার্থীদের সাহায্যকারী চ্যাটবট

বর্তমান সময়ে চ্যাটবট খুব জনপ্রিয় একটা মাধ্যম। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এর বহুমুখী ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে এটি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য খুঁজতে, রুটিন তৈরি করতে এবং কোনো জটিল সমস্যার সমাধান বের করতে। এছাড়াও কিছু অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত চ্যাটবট রয়েছে যেগুলো সরাসরি শিক্ষার্থীদের সাথে চ্যাট করে তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে বিভিন্ন গাইডলাইন প্রদান করে। 

৪. কৃত্রিম বুদ্ধির শিক্ষা পদ্ধতি

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিক জনপ্রিয়তার কারণে পড়াশোনা অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। ফলে এমন কিছু টেকনোলজির আবিষ্কার হয়েছে যা এই সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধির শিক্ষা পদ্ধতি অন্যতম। এই শিক্ষা পদ্ধতিতে একজন ছাত্র, কোনো একটি বিষয় যেমন: গণিত, ইংরেজি ইত্যাদি, সম্পর্কে বিস্তারিত শিখতে পারবে। ঠিক যেমনভাবে একজন হোম টিউটর কোনো শিক্ষার্থীকে পড়ান। 


শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতোমধ্যে দাপট দেখানো শুরু করেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে খুব দ্রুত গতিতে এই প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। কিন্তু এই দ্রুতবর্ধমান প্রযুক্তিকে নিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন যে যদি শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এভাবে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে, তবে একসময় ক্লাসরুমে শিক্ষকের বদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অনেক ভালো করলেও তারা নৈতিকতা, শিষ্ঠাচার, সামাজিকতাসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করতে ব্যর্থ হবে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা জটিল বিষয় নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দিয়ে তাদের সকল পড়াশোনার কাজ, যেমন: হোম-ওয়ার্ক, করিয়ে নিতে পারে। এমনটি হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপরেই নির্ভর করতে হবে যা মানুষকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে। তবে এ সমস্ত সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ও প্রধান পদক্ষেপসমূহ হলো: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে শিক্ষকের পরিবর্তে ব্যবহার না করে সহযোগী হিসাবে ব্যবহার করা, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বইয়ের প্রতি আন্তরিক হতে এবং বইয়ের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা।

বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে শিক্ষায় ব্যবহার করতেই হবে। তবে আমাদেরকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হতে হবে যেন শিক্ষাব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের হস্তক্ষেপ বিলুপ্ত করে না দেয়। তাহলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমরা কল্যাণকর হিসাবে গ্রহণ করতে পারব।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ