কোরবানি
তোমাদের গল্প ডিসেম্বর ২০১০
সিদ্দীক মুহা: জনি সরকারফয়সাল সবেমাত্র দশম শ্রেণীতে উঠেছে। ছাত্রও তেমন খারাপ নয়। রোল নম্বর ৫। বিজ্ঞানের ছাত্র। ওর আব্বুর বেশি জমিজমা নেই, মাত্র বিঘা ৬। আর এর সাথে ছোট্ট একটা ভুসিমালের ব্যবসা করেন। তাতেই মোটামুটি ওদের সংসারটা ভালভাবে চলে যায়। ফয়সালের কোনো ভাই বোন নেই। তাই ও বেশ আদর ভালবাসা পেয়েই বড় হয়েছে। ফয়সালের কোনো আবদারই অপূর্ণ রাখেন না ওর আব্বু। সাধ্যমত সবকিছুই পূর্ণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবার জিদ ধরেছে একটা ৪ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনবে। আম্মুর মন নরম, তাই ফয়সাল কথাটা আগে মাকেই বলল।- আম্মু! একটা কথা বলব?- কী বলবি? বল!- বলছি কী, আব্বুকে একটা মোবাইল কিনে দিতে বল। চার হাজার টাকা দিয়ে।- কী? মোবাইল! তুই মোবাইল দিয়ে কী করবি? আর অত টাকা তোর আব্বু কোথায় পাবে? জানিস না ফসল ভাল হয়নি!- হ, মোবাইল দিয়ে কী করবি? তুমি জান মোবাইলে কত জিনিস আছে? এখন আধুনিক যুগ। মোবাইল ছাড়া দুনিয়া অচল। মোবাইলে এখন সব পাওয়া যায়। শুনবে কিছু?- অত কথা বলে লাভ নেই, তোর আব্বুর সামর্থ্য তো দেখতে হবে। খালি জিদ্ ধরলেই তো হবে না। মোবাইল রাখে যারা ধনীর দুলাল-দুলালী তারা, শুনেছি মোবাইলের মাধ্যমে অনেক খারাপ কাজ হয়। তুই কি খারাপ ছেলে?- শোনো মা! তোমার এই কথা ভুল। মোবাইল শুধু খারাপ ব্যক্তিরাই ব্যবহার করে না। অনেক ভালো মানুষও ব্যবহার করে। খারাপ-ভাল সেটা নিজের ব্যাপার। আমি যেভাবে মোবাইলকে চালাব সেভাবেই চলবে। ভাল-খারাপের দোষটা মোবাইলকে দেবে কেন? দোষতো মানুষের। মানুষের ভাল-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে কিন্তু মোবাইল তো জড় পদার্থ, তার কোনো বিচার-বুদ্ধি নেই। ও! আগে তোমাকে শুনাই, এখন মোবাইলে কী কী পাওয়া যায়। শোনো আম্মু, মোবাইল এখন শুধু কথা বলাই নয়! গান, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, ক্যালেন্ডার, কম্পিউটারের কাজ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কাজ করা যায়।- বলিস কী! কিন্তু তাই বলে...। আম্মু! আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যে মোবাইল কিনে দিলে কোনো প্রকার খারাপ জিনিস রাখব না। প্লিজ তুমি আব্বুকে বল।- আচ্ছা। আমি বলব, যা এখন পড়তে বস। তবে শোন, পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হবে।- ঠিক আছে আম্মু। আমার সোনা মামণি। একেই বলে মায়ের মত মা।- যা! পাগল ছেলে।প্রথমে ফয়সালের আব্বু পাত্তা দিলেন না। কিন্তু একমাত্র ছেলের আবদার বলে কথা। তিনি বহু কষ্টে ২ হাজার টাকা ফয়সালের আম্মুকে দিয়ে বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। তুমি ওকে বল। ফয়সাল মায়ের কথা শুনে মন খারপ করে বসে থাকে। এখনও ২ হাজার টাকা প্রয়োজন। ও ৪ হাজার ছাড়া নেবে না। পরে ওর আম্মু একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, আব্বু শোন, আর পাঁচ মাস পর কোরবানির ঈদ হবে, তাই তুই একটা কাজ কর! এই দুই হাজার টাকা দিয়ে সুন্দর একটা ছাগল কিনে নে। তারপর এই পাঁচ মাসে ভাল যতœ নিলে দেখবি আল্লাহ চাহেতো ৪ হাজার টাকা হয়ে যাবে।- ওহ, খুব সুন্দর আইডিয়া আম্মু! তোমার তুলনা হয় না। ধন্যবাদ ফয়সালের আব্বু তিনদিন পর একটা নাদুস-নুদুস দর্শনীয় ছাগলের বাচ্চা কিনে আনলেন। তারপর শুরু হল ত্রিমুখী পরিচর্যা। তিনজন মিলে কঠোর পরিচর্যা শুরু করল ফয়সালরা। দেখতে দেখতে সময় চলে গেল। কোরবানির ঈদের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। আজকেই স্কুল শেষ। কাল থেকে স্কুল ছুটি। ফয়সাল তাই বেশ উৎফুল্ল। ইতোমধ্যে ছাগলটার দাম ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তাই সবাই খুব খুশি। ইসলাম শিক্ষার স্যার আ: আলিম ক্লাসে ঢুকলেন। তারপর সবাইকে কোরবানির কথা শুনালেন। ক্লাস শেষে ফয়সাল বাড়ি এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ওর মাথায় একটাই চিন্তা! ও তাহলে এখন কী করবে? আম্মু ঘরে এসে ফয়সালকে বিছানায় দেখে প্রশ্ন করলেন, কী হয়েছে? ফয়সাল বলল-আম্মু, স্যার আজকে বললেন, আমরা সচরাচর সেভাবে কোরবানির পশু কিনে কোরবানি দিই তা মনে হয় আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। বরং নিজের বাড়িতে পেলে পুষে যেটা নিজের প্রিয় হয়ে যায় সেটা কোরবানি দিলে আল্লাহ কবুল করেন।- হ্যাঁ আব্বু। তোমার স্যার ঠিকই তো বলেছেন।- তাহলে আম্মু, আমার মোবাইল কেনার প্রয়োজন নেই। তুমি আব্বুকে বল, আমি ওটা কোরবানি দেবো।- তাই! তাহলে সেটা তো খুব ভাল হবে। আল্লাহ তুমি বুদ্ধি দিয়েছো তাহলে কিছুক্ষণ আগে সব পশু কোরবানি হয়ে গেছে। ফয়সালের মনে খুব আনন্দ। ও আজ নিজের একটা ইচ্ছা কোরবানি দিয়ে আরেকটা ইচ্ছা পূরণ করেছে। তাই আল্লাহর কাছে ওর একটাই প্রার্থনা যেন আল্লাহ ওর কোরবানিটা কবুল করেন।
আরও পড়ুন...