কোচদের যত অদ্ভুত  উদ্যাপন

কোচদের যত অদ্ভুত উদ্যাপন

খেলার চমক নভেম্বর ২০১৩

রাফিউল ইসলাম

ডাগ-আউটে ধ্যানমগ্ন হয়ে বুকে আড়াআড়ি হাত রেখে নির্বিকার-নির্লিপ্ত ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতেন লুইস আরাগোনেস। বকসাদা চুলের কোচকে তখন মনে হতো দার্শনিক যেন। রিকার্ডো লা ভোলপে আবার একের পর এক চুরুট ফুঁকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকাতেন। আবেগ উত্তেজনাটা পুষে রাখা ধাতে নেই বলেই বুঝি লুইস ফেলিপে স্কলারির ডাক নাম ‘বিগ ফিল’! ডাগ-আউটে কোচদের প্রতিক্রিয়া একেক রকম। কিন্তু একটা সময় পৃথিবীর সব ফুটবল কোচ যেন অনেকটা একই রকম হয়ে যান। দল যখন গোল করে একটু পার্থক্যও অবশ্য থাকে। সবার আবেগের প্রকাশ তো আর এক রকম নয়। কেউ কেউ একটু বাড়াবাড়ি করে অদ্ভুতভাবে উদযাপন করেন। কেউবা বয়সের তোয়াক্কা না করে মেতে ওঠেন শিশুসুলভ আনন্দে। কেউবা উত্তেজনার বশে গোটা মাঠেই দিয়ে ফেলেন দুই-তিন চক্কর। অত্যধিক আনন্দে দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে! তেমনি কয়েকটি অদ্ভুতুড়ে উদযাপন নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

পাভেল ভিরবা খুব সাম্প্রতিক সময়েই ভিক্টোরিয়া প্লজেনের কোচ পাভেল ভিরবাকে দেখা গেছে শিশুসুলভ আচরণ করতে। একটি প্লে-অফ খেলে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা নিশ্চিত করার পর পাভেল দলের সাফল্য উদযাপন করেছেন অদ্ভুত কায়দায়। শিষ্যদের মাঝখানে এসে ৪৯ বছর বয়সী এই কোচ যে উল্টো একটা ডিগবাজি দিয়ে ফেলবেন, সেটা হয়তো কারোরই ধারণায়ই ছিল না। তবে আগামীতে তাকে এভাবে উদযাপন করতে দেখা যাবে কি না, সন্দেহ আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে প্লজেনকে লড়তে হবে বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার সিটি আর সিএসকেএ মস্কোর মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।

হোসে মরিনহো এ সময়ের অন্যতম সেরা কোচ হোসে মরিনহো কথাবার্তা দিয়ে প্রতিনিয়তই থাকেন আলোচনার কেন্দ্রে। দলের সাফল্য উদযাপনের সময়ও পর্তুগিজ এই কোচ কখনো কখনো শিষ্যদেরও পেছনে ফেলে দেন। মরিনহোর এ রকমই একটা উদযাপন দেখা গিয়েছিল গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের জয়টার পর। হাঁটু গেড়ে মরিনহোর সেই ডাইভটার স্মৃতি এখনো ফিকে হয়নি। ঠিক একইভাবে মরিনহোকে দেখা গিয়েছিল ২০০৫ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে চেলসির ম্যাচের সময়ও।

মরিনহো আবার! তবে মরিনহোর সবচেয়ে বিখ্যাত জয় উদযাপনের কীর্তিটির সাক্ষী হয়ে আছে ন্যু ক্যাম্প। ২০০৯-১০ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে বার্সেলোনাকে হারের স¡াদ দেওয়ার পর আঙুল উঁচু করে ভোঁ দৌড় দিয়েছিলেন ‘স্পেশাল ওয়ান’। বার্সা গোলরক্ষক ভিক্টর ভালদেজ অনেক চেষ্টা করেও থামিয়ে রাখতে পারেননি ইন্টার মিলানের তৎকালীন এই কোচকে। স্লাভেন বিলিচ আনন্দে আত্মহারা বলতে যা বোঝায়, ২০০৮ সালে আক্ষরিক অর্থেই বোধ হয় এ রকমটা হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া কোচ স্লাভেন বিলিচের। বাঁধভাঙা আনন্দের শারীরিক প্রতিফলনটা কীভাবে ঘটাবেন, সেটা যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। বাছাই পর্বের এই ম্যাচে জয় দিয়েই ইউরোতে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। আর নিজেদের মাঠে আকস্মিক এই হারের পর ইউরোর চূড়ান্ত পর্বে অংশই নিতে পারেনি ইংল্যান্ড।

বিলি রেইড গোল উদযাপন করতে গিয়ে আনন্দের আতিশয্যে দুর্ঘটনাই ঘটিয়ে ফেলেছিলেন স্কটিশ ক্লাব হ্যামিলনের কোচ বিলি রেইড। প্রতিদ্বন্দ¡ী মাদারওয়েলের বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর লাফ দিয়েছিলেন ডাগ-আউট ধরে। যে জায়গাটায় ধরেছিলেন, সেটা খুলে যাওয়ায় ব্যথা পেয়েছিলেন পিঠে। সে সময় উত্তেজনায় হয়তো সেটা টেরই পাননি। তবে তিন মিনিট পরই তাঁর আনন্দটা সত্যিই মাটি হয়ে গিয়েছিল প্রতিপক্ষের সমতাসূচক গোলটির পর।

এবং ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনায় কোচিং ক্যারিয়ারটা খুব বেশি দীর্ঘায়িত করতে পারেননি। কিন্তু যতদিন মেসি-হিগুয়েইনদের কোচ হিসেবে ডাগ-আউটে ছিলেন, তত দিন আলাদাভাবেই নজর কেড়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। শিষ্যদের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে যেন বয়সও ভুলে যেতেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। ম্যারাডোনাকে এ রকমই একটা ভঙ্গিতে দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালে পেরুর বিপক্ষে বাছাই পর্বে শেষ ম্যাচে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ভাগ্য ঝুলে থাকা সেই ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে ২-১ জিতে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল আর্জেন্টিনা।

এক রাগবি দলেই পাঁচ যমজ! প্রতিপক্ষ তো বটেই, ধন্দে পড়ে যান নিজ দলের খেলোয়াড়েরাই। কোনটা যে কে, বুঝে ওঠাই যে মুশকিল। একটা দলে পাঁচ জোড়া যমজ ভাই-বোন থাকলে এমনটাই তো হওয়ার কথা। কোচও কাকে কী নামে ডাকবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। দেখা গেল, কোচ ডাকছেন একজনের নাম ধরে, সাড়া দিচ্ছে আরেকজন! পাঁচ জোড়া যমজের এ রকম অদ্ভুত ভিড় লেগেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ছোটদের এক রাগবি দলে। প্রিটোরিয়ার ওসটেলিকা ইগলের ছোটদের দলটা গড়ে উঠেছে পাঁচ জোড়া যমজ ভাই-বোন নিয়ে। চেহারায় হুবহু মিল আছে দু’টি জোড়ার ক্ষেত্রে। দু’টি জোড়ার চেহারায় কিছুটা পার্থক্য আছে বলে সতীর্থরা কেউ কেউ চিনে নিতে পারে কে কোন্টা। তবে সবচেয়ে সুবিধা করে দিয়েছে আট বছর বয়সী ফ্রাঙ্কেইস ভিলজোন। তার যজমটি ভাই নয়, বোন। এদেরই আলাদা করতে কষ্ট হয় না। তবে সেই বোনও সব সময়ই দলের সবার সঙ্গেই থাকে পানিবাহক হিসেবে। সবারই বয়স সাত থেকে নয় বছরের মধ্যে। অদ্ভুত এই দলটার অনুশীলনে যেন সব সময়ই চলছে একটা সুশৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা। একজনকে ডাকলে হয়তো সাড়া দেয় আরেকজন। সতীর্থদেরও প্রায়ই গলদঘর্ম হতে হয় এই যমজদের কে কোনজন, সেটা ঠাওর করতে। এই সমস্যায় যে তিনিই সবচেয়ে ভোগেন, সেটাই মনে করিয়ে দিলেন কোচ নিলস গুসেন, ‘এই অভিন্ন যমজদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করাটা খুবই কঠিন কাজ। তাদের আলাদাভাবে চেনার কোনো উপায়ই নেই।’ সমস্যা সমাধানের জন্য একটা উপায়ও অবশ্য বের করেছেন তিনি। কাউকেই আর আলাদাভাবে ডাকেন না। যমজদের ডাকেন জোড়ায় জোড়ায়। সবগুলো জোড়ার নামও দিয়েছেন। যেমন একটা জোড়ার নাম ‘টুইনস’। আরেক জোড়াকে ডাকেন ‘মিন্নি’ নামে। আলাদাভাবে চিনতে না পারলে আর কিই বা করার থাকতে পারে। কোচেরই যখন এই অবস্থা, তখন সতীর্থদের কথা না বললেও চলে। অনুশীলনের সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খানিকটা বর্ণনা দিয়েছেন যমজ ভাইদেরই একজন, ‘সবাই বলে ওইটা হয়তো উইলিয়াম আর এটা রুয়ান। কিন্তু ঘটনা পুরোপুরিই আলাদা। কারণ আমি উইলিয়াম আর ও রুয়ান।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ