কুমোরখালি   -আফরিন জাহান

কুমোরখালি -আফরিন জাহান

তোমাদের গল্প ডিসেম্বর ২০১৭

রুমি ও রুনা দুই ভাইবোন। বাবা তাদের ছুটির দিনে বেড়াতে নিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। যাওয়ার সময় ফুটপাথের ধারের দোকানগুলো দেখে চোখ আটকে যায় রুমি ও রুনার। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় এটা-ওটা অনেক কিছুই পাওয়া যায় কিন্তু মাটির তৈরি জিনিসপত্র কখনও বিক্রি করতে দেখেনি। বাবা তাদের কৌতূহল দেখে বললেন এগুলো বাংলাদেশের মৃৎ ও কারুশিল্প। দেশীয় ফেলনা জিনিসপত্র দিয়ে এগুলো তৈরি। রুনা বাসায় গিয়ে অনেকক্ষণ এগুলো নিয়ে চিন্তা করল। এগুলো কিভাবে বানায়? কী কাজে লাগে? রুমি বাবাকে এর তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে বলে। বাবা মো: জহির সাহেব তাদের কুমোর পাড়ায় নিয়ে যাবে বলে ওয়াদা করেন। একদিন জোহরের নামাজ পড়ে তারা বের হয় ‘কুমোরখালি’ গ্রামের উদ্দেশে। এখানে জহির সাহেবের শৈশব কেটেছে। ছেলেমেয়েরা কখনও আসতে চায়নি কুমোরখালিতে। এবারই প্রথম। চমৎকার। ঢাকার অদূরেও এমন ছবিসদৃশ গ্রাম আছে। সেখানে বাড়ি ঘর মাটির তৈরি। নীরব-ঠান্ডা আবহাওয়ার পরিবেশ। কী সুন্দর গাছপালায় ঘেরা গ্রাম। রুমি ও রুনার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কুমোর পাড়ায় পৌঁছে তারা আনন্দিত হয়। সেখানে কুমোররা ফুলদানি, জগ, প্লেট, কলমদানি, মাটির গয়না, চুড়ি, দুল তৈরি করছেন। মাটি দিয়ে তৈরির পর চুলায় পোড়ালে চমৎকার ছাঁচ উঠে। দক্ষতা-নিপুণতার ছোঁয়া লেগে জিনিসগুলো হয়ে উঠছে আরো সুন্দর। এই জিনিসগুলোই ছিল আগেকার ব্যবহার্য পণ্য। এখন তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক। রুমি ও রুনা খুব কষ্ট পায় কুমোরদের কষ্ট দেখে। কতই না কষ্ট করে তারা, কিন্তু মানুষ জিনিসগুলো মূল্যহীন মনে করে। দুইটি চমৎকার কলমদানি রুমি ও রুনাকে দেয় পাল মশাই। তারা কোনো শিল্পী নয়, তবুও আশ্চর্য নিপুণতা ও দক্ষতায় তৈরি এগুলো। চিরদিন যতেœ রাখবে এই ওয়াদা তারা করে। এগুলো কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে তারা ভাবতে থাকে। এগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই। এসবের সম্মিলনে বাংলাদেশ কতই না সুন্দর। এটি আল্লাহর অশেষ রহমত।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ