কিশোরবেলার অ্যাজমা

কিশোরবেলার অ্যাজমা

স্বাস্থ্যকথা ডা. এহসানুল কবীর জুলাই ২০২৩

আমরা জানি আমাদের শরীরে দুইটা ফুসফুস রয়েছে। এই ফুসফুসের মধ্যে অনেক ধরনের রোগ হয়। তারই এক ধরনের রোগ হচ্ছে অ্যাজমা, যাকে বাংলায় আমরা ‘হাঁপানি’ রোগ বলে থাকি। এ রোগে শ্বাসতন্ত্রের বায়ু চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে যায় বিধায় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। এটা একটা জটিল-কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ। যদিও অন্যান্য রোগের কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কিন্তু অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের ধরনটা একটু ভিন্ন এবং এটা মূলত অ্যালার্জির সাথেই বেশি সম্পর্কযুক্ত। এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয় অর্থাৎ একজন থেকে অপরজনে ছড়ায় না। তবে মনে রাখতে হবে যে, অ্যাজমা একবার হলে তা আর সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভবপর নয়, সারাটা জীবন রোগটা বয়ে বেড়াতে হয়। তবে শিশু-কিশোর বয়সের কিছু অ্যাজমা সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যেতে পারে। সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমত নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে চললে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। 


✪ শিশু-কিশোরদের কেন অ্যাজমা হয়? 

আমাদের দেশে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে বাচ্চাদের অ্যাজমা হয় না। এটা একটা ভুল ধারণা। শিশু-কিশোরদের অন্যান্য রোগের চেয়ে অ্যাজমার রোগটা সবচেয়ে বেশি হয়। প্রায় ১০-১২% শিশু-কিশোরদের মধ্যে অ্যাজমার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কারণ পারিবারিকভাবে অ্যাজমার ইতিহাস থাকলে বংশপরম্পরায় তা সন্তানদের মধ্যেও হতে পারে। তবে শিশুকালে অ্যাজমা হয় না। সেটা হয় ব্রংকিওলাইটিস। কিন্তু যদি বার বার ঠান্ডা-কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে সেটা অ্যাজমায় রূপান্তরিত হতে পারে।


✪ কারণ কী?

বংশগত : পরিবারে যদি পিতা-মাতা বা নিকট আত্মীয়-স্বজনের অ্যাজমা বা অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে সেই পরিবারের সন্তানদের এটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অ্যালার্জিজনিত কারণ : কিছু অ্যালার্জিপ্রবণ মানুষদের কোনো অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তুর সংস্পর্শে আসলে অ্যাজমা হতে পারে অর্থাৎ কারো অ্যালার্জি বা একজিমা থাকলে তার অ্যাজমার প্রকোপটা ২০% বেড়ে যায়। কারণ অ্যাজমা ও একজিমা একই মিউট্যান্ট জিনের কারণে হয়। 

শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন : কিছু কিছু ভাইরাস দ্বারা ফুসফুসের ইনফেকশনের কারণে অ্যাজমা হতে পারে।


✪ লক্ষণ কী?

আসলে অ্যাজমা রোগটা শনাক্ত করা খুবই কঠিন। কারণ একই রকম লক্ষণ নিয়ে শ্বাসতন্ত্রের আরো ইনফেকশন রয়েছে। আবার অ্যাজমা রোগটা খুবই ব্যক্তিকেন্দ্রিক। দু’জন অ্যাজমা রোগীর একই রকম লক্ষণ নাও থাকতে পারে। একেকজনের একেক লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। তবে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো...

- সাধারণত রাতের বেলায় অ্যাজমার প্রকোপটা বেশি দেখা দেয়।

- জ্বর জ্বর ভাব সাথে অনবরত শুকনা কাশি হতে থাকে।

- শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ মিনিটে ৪০ বারের বেশি ও সাথে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হওয়া।

- বুকে ঘড়ঘড় বা শোঁ-শোঁ শব্দ হওয়া এবং বুকের খাঁচা ভেতরের দিকে বসে যাওয়া এবং বুকে ব্যথা হওয়া। 

- চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে না পারা।

- নখ ও চোখমুখের ত্বক নীলচে রঙ হয়ে যাওয়া। 

- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।

- ক্ষুধামন্দা ও শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।


✪ পরীক্ষা-নিরীক্ষা

অ্যাজমা মূলত লক্ষণ দেখেই বোঝা যায়। তারপরও প্রয়োজনে নিচের ২টি পরীক্ষা করা যেতে পারে।

১. বুকের এক্স-রে

২. রক্তের রুটিন পরীক্ষা। এখানে ইসোনোফিলের সংখ্যা বেড়ে যায়।

অ্যাজমার তীব্রতা নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।


✪ চিকিৎসা কী?

আসলে অ্যাজমা একটি চিকিৎসাযোগ্য ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্বাভাবিক মানুষের মতো সব কাজ করা সম্ভব। তবে অ্যাজমার চিকিৎসাটা একটু জটিল বটে। মূলত নিচের পদ্ধতিতে অ্যাজমার চিকিৎসা করতে হয়।

ক. উপশমকারী ওষুধ : সালবিউটামল গ্রুপের ওষুধের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উপশমের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

খ. প্রতিরোধক ওষুধ : যেমন- স্টেরয়েড, এমাইনোফাইলিন ইত্যাদি।

গ. নেবুলাইজার পদ্ধতি : অ্যাজমার তীব্র অবস্থায় এটার মাধ্যমে চিকিৎসায় দ্রুত নিরাময় লাভ করা যায়।

ঘ. ইনহেলার পদ্ধতি : এটি সবচেয়ে প্রচলিত ও আধুনিক পদ্ধতি।

ঙ. এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়।


✪ কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

অ্যাজমার রোগী যদি বিশ্রামরত অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হয়। নেবুলাইজেশন নেবার পরেও যদি শ্বাসকষ্ট থাকে। স্বাসকষ্টের কারণে কথা বলতে কষ্ট হওয়া, এমনকি একটা বাক্য শেষ করতে না পারা। শ্বাসকষ্টের কারণে খেতে না পারা বা বমি করা ইত্যাদি কারণে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা উচিত।


✪ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কী আছে?

- সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানীয় পানের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা।

- স্কুল থেকে ফিরে বা বিকেলে খেলাধুলা করে বাসায় ফিরে ভিজা জামাকাপড় খুলে শুকাতে দিতে হবে। ঐ অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকাটা রিস্কি বটে।

- সরকারি-বেসরকারি ভ্যাক্সিন বা টিকাগুলো সময়মতো কমপ্লিট করা।

- প্রতিদিন রুটিন করে আধা ঘণ্টা রোদ পোহানো উচিত।

- অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে এরকম খাবার, পোশাক, কসমেটিক্স, সিগারেটের ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, ধুলোবালি, পোকামাকড়, পোষ্যপ্রাণী ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে।

- বাড়িঘর, বিছানা, পোশাক ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

- আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সতর্কতার সাথে চলা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ