ওরা চারজন   -মোস্তফা কামাল

ওরা চারজন -মোস্তফা কামাল

গল্প মে ২০১৭

কপোতাক্ষ নদ! এই নদের দু’কূলে বসবাস করে অনেক সম্প্রদায়। কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, সুতার মিস্ত্রিসহ অনেক শ্রমজীবী মানুষ। সুখে দুঃখে একে অপরে ভাগাভাগি করে সকলের বসবাস। হইচই, কোলাহল, আনন্দ-উল্লাস এ নদের দু’কূলের মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে গত কয়েক দিন হলো কপোতাক্ষ পাড়ের কয়রা গ্রামের মানুষের মনে কোনো আনন্দ উল্লাস নেই। যে দিকে তাকায় মলিন মুখ ছাড়া হাসি মুখের কাউকে দেখা যায় না। আর মলিন মুখ দেখা যাবেই বা না কেন। হাসিমাখা গত দু’দিন আগে রাতুল, মানিক, জাহিদ ও আকিব নামে চার চারটি ছেলে কোথায় যে গেল কেউ কোনো সন্ধান জানে না। এখন সবাই তাদের জন্য ব্যাকুল। এ গ্রামের অনেক জেলে কপোতাক্ষ নদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাছাড়া অনেক তরুণ বয়সের ছেলেরা স্কুলে পড়ার পাশাপাশি রাতে মাছ ধরে নিজদের খরচ চালিয়ে নেয়। তেমনি রাতুল, মনির, জাহিদ ও আকিব একদিন রাতে মাছ ধরতে গিয়ে মাছ ধরা শেষে নৌকায় ঘুমিয়ে যায়। তারা যখন সকালে উঠলো তখন বিশাল পানির মাঝে নিজেদের আবিষ্কার করলো। তারা বুঝতে পারলো ভাটার টানে তাদের নৌকা বঙ্গোপসাগরে এসে পড়েছে।
কেননা তারা জানে তাদের গ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগর খুব বেশি দূরে নয়। তারা মহা চিন্তায় পড়ে গেল কিভাবে বাড়ি ফিরবে। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। দৃষ্টির সীমানা শেষে শুধু ধোঁয়াশা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। তাছাড়া নৌকাতে খাবারের জন্যও কিছুই নেই। তবে নৌকায় শুয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সাগরে ঝড় তুফান বইতে শুরু করলো। তারা দোয়া দুরুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলো। ঝড়ের বেগে তাদের নৌকা কোথায় যাচ্ছে তা জানে না। জানবে বা কী করে যে দিকে চোখ যায় পানি আর পানি। ঝড় আধা ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে থেমে গেল। তাদের নৌকা কিছুটা বড় হওয়ায় ডুবে গেলো না। তবে ভারী তুফান বইলে নিমিষেই ডুবে যাবে। তাদের নৌকা কোথায় যাচ্ছে লোকালয়ের দিকে নাকি আরো সমুদ্রের দিকে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। নৌকা কোথাও স্থির রইলো না। একবার এদিকে যায় তো কিছুক্ষণ পর অন্যদিকে। তারা সাহস হারালো না বরং কিভাবে তীরে পৌঁছানো যায় সেজন্য সকলে একত্রে চিন্তা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে রাতুল দূরের আকাশে বড় একটি গাংচিল উড়তে দেখলো।
রাতুল বইয়ে পড়েছে গভীর সাগরে যদি এরকম পাখি উড়ে সেদিকে সাগরের তীর থাকে। তাই তারা আর দেরি না করে যেদিকে গাংচিল উড়ছে সেদিকে তাদের নৌকা চালিয়ে দিলো। বহুদূর নৌকা চালিয়ে যাওয়ার পরও কোনো কূলের সন্ধান পেলো না। যাহিদ বললো, এভাবে নৌকা চালালে তো আমাদের মেশিনের ডিজেল শেষ হয়ে যবে। বরং আমরা আরেকটু অপেক্ষা করে দেখি কোনো কূলের সন্ধান পাওয়া যায় কি না? সঙ্গে সঙ্গে আকিব বলে উঠলো এভাবে বসে থাকলে তো আর কূলের সন্ধান পাওয়া যাবে না। এখন যা হওয়ার হবে আমরা সামনে যেতে থাকি। বসে থাকলে তো না খেয়ে মরে যাবো, আমাদের কাছে কোনো খাবার, এমনকি পানিও নেই। মনির বললো, আমাদের কাছে জাল আছে মাছ ধরে তো খেতে পারি, রাতুল বললো, কাঁচা মাছ খাবি নাকি? মাছ ধরা যাবে কিন্তু রান্না করবি কিভাবে লবণের জন্য সাগরের লোনা পানি চলবে কিন্তু মরিচ, পেঁয়াজ, সরিষার তেল এগুলো কোথায় পাবি। আর আগুন জ্বালাবি বা কী করে। নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে আর ওদিকে নৌকাও চলছে। হঠাৎ তাদের অজান্তে নৌকা কিসের সাথে ধাক্কা লেগে আটকে গেলো। কোনো দিকে চলছে না। কিছুক্ষণ পরে নৌকা আবার চলতে শুরু করলো। তারা খেয়াল করে দেখে বড় একটি তিমি মাছ। তখন তারা বুঝলো তিমি মাছটি ভেসে ছিল আর নৌকা তার পিঠের উপর উঠে আটকে গিয়েছিল। নৌকা চলছে তো চলছে। এবার দূরে একটি দ্বীপ দেখে সবাই চিৎকার দিয়ে উঠলো নৌকার গতি বাড়িয়ে তারা দ্বীপটির কাছে গেলো। কাছে গিয়ে দেখলো দ্বীপটি সবুজ গাছগাছালিতে ভরা কিন্তু এখানে কোনো জীবজন্তু চোখে পড়লো না। তারা নৌকা থেকে দ্বীপে নামবে কি না কিছুই বুঝতে পারছে না। এক সময় ভয়ে ভয়ে তারা দ্বীপটিতে নেমে পড়লো এবং চারদিকে খুব সতর্কতার সাথে দেখতে লাগলো। তারা খুব খেয়াল করে দেখলো যে এখানে একটি পশু-পাখিও নেই।
তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো কিছু দূরে গিয়ে দেখলো বেশ কিছু মানুষের পায়ের চিহ্ন। মানুষগুলো নিচ থেকে দ¦ীপটির উপরে উঠে গেছে তারা পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে চলতে থাকলো বেশ কিছু দূর গিয়ে দেখলো ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর। দ্বীপ থেকে নৌকা কয়েক গজ দূরে নিয়ে বেঁধে রাখলো। জাহিদ ও মানিক ভয় পেয়ে নৌকা ছেড়ে দেবার জন্য বলল, রাতুল বলল, এখানে কুঁড়েঘর আছে মানে এখানে কেউ না কেউ আসবে আর আকিব বলল, হ্যাঁ আদিব ঠিক বলেছিস, এখন আমাদের এখানে কষ্ট করে থাকতে হবে। রাতুলরা অনেক সময় নৌকা চালিয়ে চালিয়ে এক সময় কূলের দেখা পেল।
তখন সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
এখন তাদের ঘরে ফেরার পালা!
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ