এসো গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি । আল ফাতাহ মামুন

এসো গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি । আল ফাতাহ মামুন

প্রচ্ছদ রচনা আগস্ট ২০১৯

এসো গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি । আল ফাতাহ মামুনকী অসহ্য গরম! ঘরে-বাইরে টেকা দায়। শুধু কি শহরে? না বন্ধুরা! গ্রামেও একই চিত্র। গরমে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। তোমরা তো জানো, বাংলাদেশ গরম কিংবা শীত প্রধান দেশ নয়। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। পৃথিবীর খুব কম দেশেই ছয়টি ঋতু আছে। বেশির ভাগ দেশে একটি দু’টি বড়জোর চারটি ঋতু পাওয়া যায়। আমাদের আছে ছয় ছয়টি ঋতু। এমন দেশে জন্মানোর সৌভাগ্য কয়জনের হয় বলো! কিন্তু কষ্টের কথা কি জানো বন্ধুরা! দিন দিন ষড়ঋতুর চিরচেনা রূপ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি থেকে। প্রচণ্ড গরম আর তীব্র শীতের দেশ হয়ে উঠছে আমাদের এ দেশ। এটি সত্যিই এ দেশের মানুষ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। শেষ কয়েক বছরে তীব্র শীত ও গরমের কারণে বেশ সংখ্যক মানুষ মারা গেছে, অনেক বেশি মানুষ নানান জটিল ও কঠিন রোগে ভুগেছে। আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তোমাদের মত ছোট্ট বন্ধুরা।
হায়! বড়রা যদি বুঝত, পৃথিবীকে ছোটদের বাস-উপযোগী রেখে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের কাঁধেই, তাহলে এভাবে ভুগতে হতো না বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। একটু খুলেই বলি- প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রকৃতির উপাদানগুলো অর্থাৎ বন-নদী-পাহাড়-বাতাস ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে থাকা জরুরি। বলতে খারাপ লাগছে যে, বিগত দিনগুলোতে আমরা নদী মেরে ফেলেছি, বনভূমি উজাড় করেছি, পাহাড় ধ্বংস করেছি, বাতাস দূষিত করেছি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, প্রকৃতিকে আঘাত করলে প্রকৃতি ফের আঘাত করে। নিউটন বলেছেন, প্রতিটি কাজেরই সমান প্রতিক্রিয়া আছে। এই যে প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে, এর কারণ হলো আগে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে নির্মম আচরণ করেছি। প্রকৃতি এখন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে মাত্র। এটা সত্যিই হতাশার কথা। ভেঙে পড়ার কথা। কিন্তু তোমরা চাইলেই এ দেশকে আবার সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা করে গড়ে তুলতে পারবে। হ্যাঁ বন্ধুরা তোমরাই পারবে। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তির। জানো তো, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।
এখন চলছে বর্ষা ঋতু। এই ছোট্ট বয়সে তোমরা যে কাজটি করতে পারো তা হলো, বেশি করে গাছ লাগাতে পারো। প্রতি বছর যদি অন্তত একটি করে গাছও লাগাও দেখবে এক সময় তোমার বাসায়, বারান্দায়, ছাদে বাড়ির আঙিনায় চমৎকার বাগান গড়ে উঠেছে। সে বাগানের নামকরণ না হয় তোমার নামেই করো। গাছ শুধু লাগালেই হবে না, যত্ন ও নিতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে যেমন প্রিয় বন্ধুর খোঁজখবর নাও, তার সঙ্গে আড্ডা দাও, খেলা করো; ঠিক একইভাবে গাছের সঙ্গেও আড্ডা দিতে হবে। হাসতে হবে। মন খারাপ থাকলে শেয়ার করতে হবে। লুকোচুরি খেলতে হবে। কখনো কখনো গাছের সঙ্গে রাগও করতে হবে। তুমি যদি গাছকে বন্ধু বানাতে পারো, একসময় মানুষের মত গাছের বন্ধুত্বও ফিল করতে শুরু করবে।
কেনো গাছ লাগানো এত গুরুত্বপূর্ণ? আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন নিই। সে অক্সিজেন আমাদের ফুসফুসে ঢুকে কার্বন ডাই অক্সাইড হয়ে বেরিয়ে আসে। তোমরা নিশ্চয় খেয়াল করেছ, আমাদের নিঃশ্বাস খুবই গরম। তো বেরিয়ে যাওয়া নিঃশ্বাসের তাপে পৃথিবী সেদ্ধ হয়ে যেত যদি গাছ বন্ধু তা টেনে না নিতো। গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেয় বলেই পৃথিবী গরমে সেদ্ধ হয়ে যায়নি। আমাদের দেশে গাছ কমে যাওয়ার কারণেই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি আমরা।
তোমরা বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছো, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একটি ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন। জাতিসংঘের হিসাব মতে, বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৩ শতাংশ! যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। তো এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কমিয়ে আনতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবী তোমাদের। একে বাসযোগ্য রাখার দায়িত্বও তোমাদেরই নিতে হবে। আর সেটা শুরু করো এখন থেকে, আজ থেকেই। তোমাদের পরবর্তী প্রজন্ম গভীর মমতার সঙ্গে স্মরণ করবে তোমাদের এই পৃথিবী গড়ার সাহসী সিদ্ধান্তকে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ