এ সময়ের রূপকথা!

এ সময়ের রূপকথা!

গল্প নাসীমুল বারী এপ্রিল ২০২৩

উড়ে যাচ্ছে দু’টি হুদহুদ পাখি। শহরের উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতেই হুদহুদি বলে, দেখো হুদহুদ এখনকার বাতাস কী চমৎকার!

-হুম! 

-কতদিন ধরে কোনো জনমানুষ দেখছি না রাস্তাঘাটে। গাড়ি, বাস, ট্রাক কিছুই নেই। এই আকাশেও কোনো প্লেন দেখছি না কতদিন!

হুদহুদ বলে- আমিও তাই দেখছি। নিঃশ্বাস নিতে কী যে ভালো লাগছে! আগের মতো গরম গরম লাগে না।

-কেন এমন বদলে গেল?

-তা তো জানি না। এমন শান্ত দুনিয়া তো জন্মেও দেখি নাই!

ওরা উড়ে চলছে। হঠাৎ দেখে একটা বন। ওরা চিনতে চেষ্টা করে এটা কোন বন। হুদহুদ বলে, চলো হুদহুদি এবার এখানেই বাসা বানাই। নতুন জায়গা ভালো লাগবে।

হুদহুদি একটু ভাবতে ভাবতে বলে- মানুষজন আবার গাছ কেটে আমাদের বাচ্ছা-কাচ্ছা মেরে ফেলবে না তো?

হেসে ওঠে হুদহুদ। তারপর বলে- মানুষই তো নেই, গাছ কাটবে কে?

-আসলেই তো এখন মানুষ নেই। এই কতদিন উড়ে উড়ে এলাম এত দূর থেকে; কোথাও মানুষই দেখলাম না।

একটা গাছে এসে বসে ওরা। বড় গাছটার নতুন পাতায় কী যে ভালো লাগছে। চারিদিক তাকিয়ে হুদহুদ বলে, আরে এ যে ঢাকা চিড়িয়াখানা!

-না, না তা হবে কেন? মানুষ কই তাহলে?

হুদহুদি বিস্ময় নিয়ে বলে।

-কী জানি, মানুষ তো দেখছি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত এটা ঢাকা চিড়িয়াখানা।

-কিন্তু গতবার যখন ঢাকা চিড়িয়াখানায় এলাম; এতো এতো মানুষের ভয়ে থাকতেই পারলাম না। চলে যেতে হলো।

হঠাৎ জেব্রা আর জিরাফ হাঁক দেয়- এই গাছে এত চেঁচাচ্ছিস কে রে?

একটু ভড়কে যায় হুদহুদ জোড়া। তারপর তাকিয়ে দেখে নিচে জেব্রা-জিরাফ। ভয় নেই, ওরা তো আর মানুষের মতো ক্ষতি করে না। তাই অভয় নিয়ে বলে- দাদা আমরা হুদহুদ। তোমাদের এখানে এসেছি বাসা বানাব।

-ও ..., তোমরা! ভালো, ভালো।

তখনই একঝটকা বাতাস এসে বলে, স্বাগতম হুদহুদ দম্পতি।

-স্বাগতম তোমাকেও।

বাতাস এবার উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে, ইস্ কি যে ভালো লাগছে তোমাদের কথা শুনে।

-কেন?

-তোমরা এবার আর আমাকে দোষ দাওনি।

-মানে...!

-সবসময় তো বলেই যাও তোমরা আমি নাকি গরম হয়ে যাচ্ছি। তোমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছ না। কার্বন বেড়ে যাচ্ছে। কত শত দোষ আমার!

-হুম। বলতামই তো। তখন তুমি এমন ছিলে। আজ তো তেমন না। আজ কি যে ভালো তুমি! আচ্ছা তুমি এমন ভালো হলে কিভাবে? 

-হে হে ... জানো না কিছু? এখন বাতাসে কার্বন নিঃসরণ হয় না।

-কেন, কেন?

হুদহুদ দম্পতি জানতে চায়।

বাতাস বলে, কারণটা সহজ। মানুষ এখন আর তেল পুড়িয়ে গাড়ি চালায় না। এই আকাশেও প্লেন চালায় না। কলকারখানাগুলো থেকেও কার্বন মিশানো ধোঁয়া বের হয় না। মানুষেরাও কেউ বাসা থেকে বের হয় না।

-এভাবে সবকিছু বন্ধ করে ঘরে কেউ বসে থাকে? বাংলাদেশের মানুষ কী বোকা!

বাতাস এবার মেজাজ করে বলে- আরে ধ্যাৎ! মাথায় দেখি কিচ্ছু নাই তোমাদের।

-কেন? কী হলো?

-এত যে উড়লে, তা-ও বুঝি দেখনি। শুধু বাংলাদেশ না, তাবৎ দুনিয়াই এমন এখন। মানুষরা বলে লকডাউন। ওদের এমন লকডাউনে আমি বেঁচে গেলাম। এখন আর গরম হতে হচ্ছে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা থেমে গেছে।

তখনই বড় গাছটা বলে ওঠে- ইস্ বাতাস তুমি একাই বাঁচলে? 

বাতাস আর হুদহুদ গাছটার দিকে তাকায়। তারপর বাতাস বলে- কেন, তোমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে? এতদিন তো অনেক অনেক কার্বন পেতে। তোমার তো ভাই কার্বন-ডাই অক্সাইড মেইন ফুড। এখন কমে গেছে; তাই না?

হুদহুদি দম্পতি সাথে সাথে বলে, আরে না, না, আমরা তো ঠক ঠক করে গাছ গর্ত করে বাসা বানাব। এজন্যই ওর আক্ষেপ।

গাছ হেসে দিয়ে বলে, আরে না। আমি এখন খুব ভালো আছি। এতদিন অতিরিক্ত কার্বন আমার বদহজম হচ্ছিল। 

হুদহুদ বলে, তাই বুঝি? আমি তো ...

কথা থামিয়ে গাছ বলে, আরে তোমাদের বাসা বানানোর জন্য আমার কোনো সমস্যা না। আমরা তো তোমাদের জন্যই। তোমাদের এমন ঠক ঠক করে বাসা বানানোতে বেশ একটা ছন্দ আছে। ভালো লাগে আমার। 

এবার হুদহুদ দম্পতি বলে- এজন্যই এদেশে মানুষ আমাদেরকে বলে কাঠঠোকরা। তাই আমাদের আসল নামে এখানে খুব কম মানুষই চেনে।

হঠাৎ পাশ থেকে আওয়াজ আসে- এই কী হচ্ছে এখানে?

সবাই তাকায়।

আরে এ কে? পুরো শরীরে এত শিং। কে ও। এদিকে আসছে আর হাসছে। বাতাস বলে, এই কে তুমি? কী নাম তোমার? 

-আমার নাম কোভিড উনিশ।

-কোভিড উনিশ! এ নাম তো আগে শুনিনি। কোন বংশের তুমি?

-আমি...! আমি করোনা বংশের।

-নতুন এলে বুঝি?

-হুম।

-আসো আসো, আমাদের নতুন বন্ধু।

-হ্যাঁ, তোমাদের জন্যই আমি এসেছি। দেখো না পুরো দুনিয়াটা বন্ধ করে দিলাম। সব মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে দিলাম। এবার তোমরা সুস্থ হয়ে উঠবে, দেখো।

সাথে সাথে হুদহুদ বলে, তুমি এমনটি করেছ? বাব্বা কী অসীম শক্তি তোমার!

-দেখো না, মানুষের অতি চাপে আর অত্যাচরে তোমাদের জীববৈচিত্র্য, মানবিক  বৈচিত্র্য সবই লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতাও বেড়ে যাচ্ছে। একদল মানুষ আরেক দলের নারী-শিশুসহ অগণিত অসহায় মানুষকে মারছে বিনা দোষে। না, এভাবে কি আর আগানো যায়? ভাবলাম সব মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে দেই। দেখো, এখন সব থেমে গেছে। তোমরাও সুস্থ হবার পথ পেলে।

-শুধু মানুষকেই তুমি এমনটি করবে?

-হুম, মানুষকেই। মানুষই দুনিয়াটারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তাই একটু থামালাম।

-মানুষ কিন্তু সুযোগ পেলে তোমাকে ছাড়বে না।

-জানি। সবাই চেষ্টা করছে আমাকে ধরতে। ভ্যাকসিন দিয়ে আমাকে ধরবে। আমার মিশনও ঠিক। পুরা দুনিয়াটারে বন্ধ করে দিয়েছি। হে হে হে ...! মানুষের সব অত্যাচার এখন বন্ধ। থাক না এভাবে কিছুদিন সবকিছু বন্ধ! 

এবার বাতাস বলে, ঠিক বলেছ কোভিড। সুন্দর একটা দুনিয়ার জন্যই মনে হয় তোমার জন্ম। তুমি আমাদেরকে রক্ষা করেছ। ধন্যবাদ তোমার জন্মদাতাকে, যে এত অসীম শক্তি দিয়ে তোমাকে বানিয়েছেন! পুরো দুনিয়াকে শান্ত করে দিয়েছেন একনিমেষেই!

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ